ভারতের তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই আধুনিক মানের চিকিৎসা নিতে চেন্নাইয়ের ক্যান্সার হাসপাতালে যায়। চেন্নাইতে বিচিত্র সমুদ্র সৈকত, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম ও শৈল্পিক নিদর্শন দেখা যায়। তাই আপনি চাইলে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ ছাড়াও চেন্নাই শহরের অপরুপ সৌন্দর্য দেখে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে থাকা ও হোটেল খোঁজা সহজ করতে আমরা চেন্নাই বিলাসবহুল ও সাশ্রয়ী, উভয় ধরনের হোটেলের নাম উল্লেখ করেছি। এছাড়া চেন্নাইয়ের হাসপাতালের নিকটবর্তী হোটেলগুলো-ও উল্লেখ করা হয়েছে।
চেন্নাইয়ের সেরা হোটেলসমূহ
চেন্নাইতে সবরকম খরচে থাকার জন্য হোটেল পাবেন। যেমন: পরিবার নিয়ে থাকার জন্য কিছু বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে -
- চেন্নাই ট্রাইডেন্ট হোটেল
- হোটেল নভোটেল চেন্নাই সিপকট
- দ্য অ্যাকর্ড মেট্রোপলিটন
- রেডিসন ব্লু হোটেল চেন্নাই
- লা রয়াল মেরিডিয়ান চেন্নাই
- তাজ কনেমারা
আবার কম খরচে থাকার জন্য চেন্নাইয়ের সাশ্রয়ী দামে ভাল হোটেলগুলো হচ্ছে-
সবগুলো হোটেল থেকেই এক ঘন্টার মধ্যে যেকোনো হসপিটালে আর ত্রিশ মিনিটের মধ্যে যেকোনো শপিং মলে যেতে পারবেন।
চেন্নাই ট্রাইডেন্ট হোটেল
ঠিকানা: ১/২৪, চিএসটি রোড, চেন্নাই
চেন্নাইতে পাঁচ তারকা হোটেলগুলির মধ্যে চেন্নাই ট্রাইডেন্ট হোটেল অন্যতম আকর্ষণ। এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই গাড়িতে করে হোটেলটিতে যাওয়া যায়। হোটেলে কাঠ ও কার্পেটের সংমিশ্রণে দারুণ এক নকশা ফুটে উঠেছে। রুমের মাঝে অনেক লোকের বসার মত জায়তা আছে আর জানালা দিয়ে ভাল দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এখানে সুইমিং পুল, স্পা, মিনিবারসহ যাবতীয় আরাম আয়েশের ব্যবস্থা আছে। এখানকার রেস্তোরাতে এশিয়ান, ইন্ডিয়ান আর উপমহাদেশীয় সকল জনপ্রিয় খাবার পাওয়া যায়। সাথে স্থানীয় উপকূলবর্তী খাবারের সুবিধা ও আছে।
হোটেল নভোটেল চেন্নাই সিপকট
ঠিকানা: নভোটেল চেন্নাই সিপকট (সিপকট আইটি পার্কের বিপরীতে), পুরনো মহাবলীপুরম সড়ক, এগাত্তর, চেন্নাই
হোটেল নভোটেল চেন্নাই সিপকট চেন্নাইয়ের অন্যতম পাঁচ তারকা হোটেল। এয়ারপোর্ট থেকে ৩০ কিমি দূরে গেলে হোটেলটি পাবেন। এখানকার রুমগুলো অনেক বড়। দেয়াল-সমান কাচের জানালা দিয়ে শহরের দৃশ্য আর সমুদ্র দেখা যায়। এখানে সব রুমেই স্টাডি ডেস্ক আর টিভি আছে। রেস্তোরাতে স্পর্শবিহীন ব্যবস্থায় সব দেশের খাবার পাওয়া যায়। চাইলে নিজের প্রিয় পোষাপ্রাণী সাথে রাখতে পারবেন। হোটেলে সুবিশাল ব্য়ায়ামাগার আছে। কাছেই জাপানিজ হাব, সিপকট আইটি পার্ক, টাটা কনসাল্টির অফিস আছে। এখান থেকে আট মিনিট হেঁটে এশিয়ার বৃহত্তর ম্যারিনা মলেও যেতে পারবেন।
দ্য অ্যাকর্ড মেট্রোপলিটন
ঠিকানা: ৩৫ জিএন চেট্টি সড়ক, থিয়াগাড়া নগর
দ্য অ্যাকর্ড মেট্রোপলিটন হোটেল অন্যতম আধুনিক ও বিলাসবহুল হোটেল। চেন্নাই রেলওয়ে হোটেল থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে হোটেলটি খুঁজে পাবেন। হোটেলের মার্বেল পাথর আর সোনালী রঙে মোড়ানো রুমগুলোতে বেশ একটা রাজকীয় ভাব আছে। বিছানা থেকে বসার সোফা সবকিছুই অনেক স্বস্তিদায়ক। এখানে তিনটি রেস্তোরা,একটি সুইমিং পুল আর একটি স্পা পাবেন। ডিজে পার্টি করার জন্য একটা ক্লাব ও আছে। রেস্তোরাতে সবধরনের গ্রিল খাবার পাওয়া যায়। আবার রুফটপ লাউঞ্জে বারের মত সবরকম জুস ও ড্রিংকস পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পন্ডিবাজার আর অ্যাপোলো ক্যান্সার ইনস্টিটিউট মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে।
রেডিসন ব্লু হোটেল চেন্নাই
ঠিকানা: ২নং ইথিরাজ সালাই, সি-এন-সি রোড, এগমোরা-নাংগামবাকাম, চেন্নাই
চেন্নাই এক্সপ্রেস এভিনিউ থেকে মাত্র ১ কিমি দূরে গেলে রেডিসন ব্লু হোটেল পাবেন। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিমি। এখানকার আলো ও নকশা বেশ সুন্দর তাই রুমগুলোকে বেশ সতেজ মনে হবে। প্রত্যেক রুমেই বসার জায়গা, মিনিবার আর সেফটি বক্স আছে। এছাড়া রুমের সাথে অনেক জায়গা ও বড় আয়নার ওয়াশরুম পাবেন। রেস্তোরাগুলোতে সামুদ্রিক মাছ ও সারাদিনের ডাইনিং মেন্যু পাওয়া যায়। সময় কাটানোর জন্য বার, পুল ও স্পা এর ব্যবস্থা আছে। হোটেলের ঠিক কাছেই স্পেন্সার শপিং মলে কেনাকাটা করতে পারবেন।
লা রয়াল মেরিডিয়ান চেন্নাই
ঠিকানা: ১নং টিএসটি রোড, সেইন্ট থমাস মাউন্ট, গিন্ডি, চেন্নাই
এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে লা রয়াল মেরিডিয়ান চেন্নাই অবস্থিত। এটা গিন্ডি বাস ও গিন্ডি রেল স্টেশন হতে মাত্র ১ কিমি এর মধ্যে। হোটেলের ছিমছাম সাজসজ্জা ও পরিবেশ ক্লাসিক একটা অনুভূতি দেবে। আধুনিকতা ও ঐতিহ্যকে এক করে রুমগুলো তৈরি করা হয়েছে। সব রুমের সাথেই মিনিবার, বসার জায়গা আর বিশাল শৌচাগার আছে। সময় কাটানোর জন্য স্পা ও সুইমিং পুল আছে। হোটেলের বাইরে খোলামেলা পরিবেশে হাঁটা যায়। হোটেলে অনুষ্ঠানের জন্য ১৫,০০০ স্কয়ার ফিটের বিশাল বিজনেস সেন্টার আছে। এছাড়া খাবার জন্য ভাল ব্যবস্থা আছে। রেস্তোরাতে সামুদ্রিক-সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়।
তাজ কনেমারা
ঠিকানা: ২নং বিনী রোড, চেন্নাই, ইন্ডিয়া
তাজ কনেমারা হোটেল এয়ারপোর্ট থেকে ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত। হোটেলের আসবাবপত্র থেকে ডাইনিং সবখানেই আভিজাত্যের ছোঁয়া ন। সোফা থেকে অন্য আসবাবপত্র সবকিছুই বেশ মোলায়েম। সিটিং এরিয়াতে বসে আড্ডা দেওয়া যায়, আবার ডাইনিং এরিয়াতে একসাথে খাবার খাওয়া যায়। সম্পূর্ণ হোটেলের ফ্লোর কার্পেটে মোড়ানো। আউটডোর পুল ও স্পা এর ব্যবস্থা আছ্রে। রেস্তোরাতে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, ইন্ডিয়ান, ইটালিয়ান ও সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার পাওয়া যায়। এখান থেকে ১০ মিনিট হেঁটে অ্যাপোলো হসপিটালে আর ১৫ মিনিট হেঁটে আমেরিকান এমবাসিতে যেতে পারবেন।
আইবিআইএস চেন্নাই সিপকট
ঠিকানা: সিপকট আইটি পার্কের বিপরীতে, পুরনো মহাবলীপুরম সড়ক, এগাত্তুর, চেন্নাই
সিপকট আইটি পার্কের ঠিক বিপরীতে গেলেই আইবিআইএস চেন্নাই সিপকট খুঁজে পাবেন। হোটেলে কম খরচে ফিটনেস সেন্টার ও বাগানসহ অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। সাশ্রয়ী খরচে এখানকার মত ছিমছাম পরিবেশ খুব বেশি হোটেলে পাবেন না। রেস্তোরাতে ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ খাবার ব্যবস্থা আছে। এখান থেকে দুমিনিটের মধ্যেই ম্যারিনা মলে যাওয়া যায়। ভিভিডা শপিং মল আর অ্যাপোলো হসপিটাল ও এই হোটেলের বেশ কাছে।
জেইথ রেসিডেন্সি
ঠিকানা: মডেল স্কুল সড়ক, থাউজ্যান্ড রোড, চেন্নাই
জেইথ রেসিডেন্সি চেন্নাই এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে। স্বল্প খরচে থাকার জন্য এটা চেন্নাইয়ের সেরা হোটেলের একটি। রুমের মধ্যে আসবাবপত্র, বসার জায়গা, পড়াশোনার জায়গা সবই পাবেন। এমনকি নিজে রান্না করার জন্য বাসার আদলে কিচেনও পাবেন। সব রুমে কফি মেকার আর কিছু রুমে ফ্রিজ আছে। শারীরিক ভাবে প্রতিবন্দীদের থাকার জন্য এই হোটেলে বিশেষ ব্যবস্থা আছে। হোটেল থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই অ্যাপোলো হসপিটালে যাওয়া যায়।
সারাল রেসিডেন্সী
ঠিকানা: ১/৬৮৫, বালাইয়াপথি রোড, পূর্ব মোগাপ্পেয়ার, চেন্নাই
আমেরিকান এমব্যাসি থেকে ৮ কিমি আর এয়ারপোর্ট থেকে ১২ কিমি দূরে গেলে সারাল রেসিডেন্সী খুঁজে পাবেন। বাসার মত পরিবেশে থেকে কম খরচে নানা রকম খাবার খেতে হলে এখানে থাকতে পারেন। হেটেলের সাজসজ্জা বেশ ভালো, রুমগুলোতে ইলিক্ট্রিক কেটল আর ফ্রিজ পাবেন। সময় কাটানোর জন্য ছোটখাট বার আছে। এখানকার রেস্তোরাতে ইন্ডিয়ান, চাইনিজ আর উপমহাদেষীয় সকল জনপ্রিয় খাবার পাওয়া যায়।
তাজ কামার ইন (তাজ কামার ফ্যামিলি হোটেল)
ঠিকানা: ৩৬ নং রঙ্গণ স্ট্রিট, পোস্টাল কেলানী, টি নগর, চেন্নাই
তাজ কামার ইন (তাজ কামার ফ্যামিলি হোটেল) ম্যারিনা সমুদ্র সৈকতের ৪ কিমি দূরে আর চেন্নাই সিটি মল থেকে ৩ কিমি দূরে অবস্থিত। এখানে ৫০টির ও বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম আছে। ইন্টারনেট, টিভিসহ বেশ কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। রুমগুলো বাসার মত সাজানো গোছানো ও ছিমছাম। প্রত্যেকটা রুমে ফোন, সেফটি বক্স আর টেবিল আছে। হোটেলের পক্ষ থেকে একটা সৌজন্য ব্যুফে নাস্তা পাওয়া যায়।
হোটেল অশোক রেসিডেন্সী
ঠিকানা: ১/৪৬০, মাউন্ট পুনামলী রোড, চেন্নাই
যারা সাধারণ ছিমছাম হোটেল ভালবাসেন তাদের জন্য হোটেল অশোক রেসিডেন্সী ভালো হবে। এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র আধ ঘন্টায় এখানে যেতে পারবেন। রুমগুলোতে সবার জন্য আলাদা জায়গা আছে। জানালা দিয়ে শহরের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কিছু রুমে ইলেক্ট্রিক কেটল, টি মেকার আর মিনিবার আছে। প্রায় সব রুমের সাথে ব্যক্তিগত শৌচাগার আছে। হোটেল থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে শহর ঘুরে দেখা যায়।
ঢাকা টু চেন্নাই টু ঢাকা বিমান ভাড়াসমূহ
রাউন্ডওয়ে ট্রিপে, অর্থাৎ ঢাকা টু চেন্নাই টু ঢাকা ফ্লাইটে খরচ পড়বে ২১ হাজার টাকা থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ইকোনমি, প্রিমিয়াম ইকোনমি, ও বিজনেস ক্লাস - এই তিন ধরণের টিকেট সবসময় পাবেন। আবার একসাথে অনেক জায়গা ঘুরে দেখতে হলে ঢাকা থেকে আগরতলা গিয়ে সেখান থেকে আগরতলা টু চেন্নাই টু আগরতলা ফ্লাইট-এর টিকেট নিতে পারেন।
একই ভাবে বাগডোগরা টু চেন্নাই বিমান ভাড়া ও বেশ কম আছে, ভারত ঘোরার পরিকল্পনা থাকলে এই রুটেও যেতে পারেন। শেয়ারট্রিপের ফ্লাইট থেকে সকল ফ্লাইট খুঁজে দেখতে পারবেন, সাথে মূল্যহ্রাস নিয়ে টিকেট কিনতে পারবেন। অগ্রিম বুকিং করলে বেশ বড়সড় ছাড়ে টিকেট কিনতে পারবেন।
যেভাবে চেন্নাইতে ভিসা আবেদন করবেন
বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য চেন্নাই বেশ জনপ্রিয় স্থান। বিশেষ করে ভাল চিকিৎসা সেবা পেতে চেন্নাইয়ের বিকল্প শহর খুব কম আছে। এসময় আইনত কোনো সমস্যা এড়াতে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে ভিসা আবেদন করতে পারেন। ভিসা আবেদনের জন্য ভিসা আবেদন-এ গিয়ে দেশের নাম আর কতদিন থাকবেন সেটা উল্লেখ করে সার্চ বাটন ক্লিক করুন। ভিসার বিষয়ে পরামর্শ নিতে ask@sharetrip.net-এড্রেসে ইমেইল করতে পারেন।
আপনার চেন্নাই ভ্রমণকে আরও সুন্দর করুন শেয়ারট্রিপের সাথে!
চেন্নাইতে মসজিদ, মন্দির, সমুদ্র সৈকত, শপিং মল, পারবত, জাদুঘর-সহ শতাধিক দেখার স্থান আছে। খুব দূরে না হওয়াতে অল্প সময়ের ফ্লাইটে চেন্নাই যাওয়া যায়। তাই কম খরচে ঘুরে দেখার জন্য এখানে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারেন। চেন্নাই ভ্রমণ বিষয়ে যেকোনো তধ্য পেতে ইমেইল করুন vacation@sharetrip.net এ অথবা কল করুন +8809617617617 নম্বরে।