প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজধানী বান্দরবানের পাহাড়ি সংস্কৃতি ও প্রকৃতি দেখতে যায়। অনেকসময় এত মানুষের ভিড়ে কোথায় থাকবেন আর কি কি দেখবেন ঠিক করা মুশকিল হয়ে যায়। তাই আজ আমরা বান্দরবানের হোটেল ভাড়া, ভাল হোটেলগুলোর সুবিধা ও সেরা দর্শনীয় স্থান নিয়ে কথা বলবো।
পূর্ব-পরিকল্পনা করে গেলে হোটেল হিল ভিউ বান্দরবান, ফানুস রিসোর্ট বান্দরবান, বন নিবাস রিসোর্ট বান্দরবান বা হলিডে ইন রিসোর্ট বান্দরবান-এর মত মনোরম থাকার জায়গাগুলো সহজে পেয়ে যাবেন। এছাড়া শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে বান্দরবানের সেরা হোটেল ও রিসোর্ট গুলো সহজে খুঁজে নিতে পারবেন।
বান্দরবানের হোটেল ভাড়া: সেরা হোটেলের নাম ও সুবিধাসমূহ
পরিবার নিয়ে ভ্রমণে গেলে নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের কথা বেশি ভাবতে হয়। তাই আমরা একইসাথে সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য হোটেলগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। এরকম কয়েকটি হোটেল হচ্ছে:
- বন নিবাস রিসোর্ট বান্দরবান
- হলিডে ইন রিসোর্ট বান্দরবান
- সাইরু হিল রিসোর্ট
- হোটেল নাইট হেভেন
- গ্রিন পিক রিসোর্ট
- হোটেল ডি’মোর বান্দরবান
- হোটেল হিল ভিউ বান্দরবান
- ফানুস রিসোর্ট বান্দরবান
বন নিবাস রিসোর্ট বান্দরবান
বান্দরবান শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে মিলনছড়িতে বন নিবাস রিসোর্টটি অবস্থিত। এখানে ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং, পরিবারের আলাদা রুম, ও খাবার ব্যবস্থা আছে। রিসোর্টে ব্যাম্বো, ধনেশ, মাথুরা, মনপুরা, জোনাকি, নৌকা ইত্যাদি নামের কিছু কটেজ আছে। প্রতিটা কটেজের ভাড়া ২,৫০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা।
হলিডে-ইন রিসোর্ট বান্দরবান
বান্দরবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের একটা পাহাড়ের চূড়ায় হলিডে-ইন রিসোর্ট বান্দরবানের দেখা পাবেন। এখানে একটা সুন্দর লেক আছে। থাকার জন্য লেক ভিউ, ফ্যামিলি রুম ও হানিমুন কটেজ পাবেন। খরচ পড়বে ৩,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকা।
সাইরু হিল রিসোর্ট
বান্দরবান শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের সাইরু রিসোর্টকে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর রিসোর্ট বলা যায়। চমৎকার ডিজাইনের এই রিসোর্ট থেকে সরাসরি মেঘ ও সাঙ্গু নদী দেখা যায়। অতিরিক্ত আরামের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম, সুইমিং পুল ও বিজনেস হল পাবেন। খরচ পড়বে ১১,০০০ টাকা থেকে ২১,০০০ টাকা।
হোটেল নাইট হেভেন
বান্দরবান মূল শহরের একেবারে কাছেই তালুকদার পাড়াতে হোটেল নাইট হেভেন অবস্থিত। এখানে অনেক পরিপাটি রুম এবং ৫০ বা ৬০ জনের অনুষ্ঠান করার মত জায়গা পাবেন। এখানে ২৪ ঘন্টার রুম সার্ভিস-সহ গাড়ি ভাড়া নেবার ব্যবস্থা আছে। থাকার জন্য গুণতে হবে ২,২০০ টাকা থেকে ৫,৫০০ টাকা।
গ্রিন পিক রিসোর্ট
বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের কাছে আরেকটি ভাল থাকার জায়গা গ্রিন পিক রিসোর্ট। চমৎকার কাঠের নকশায় মোড়ানো রিসোর্টে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম, রেস্তোরা ও পুল-সহ আধুনিক সকল সুবিধা রয়েছে। কোলাহল ছাড়া সম্পূর্ণ মুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে এই রিসোর্ট ভাল হবে। থাকার জন্য খরচ হবে ৩,৫০০ টাকা থেকে ৫,৫০০ টাকা।
হোটেল ডি’মোর বান্দরবান
হোটেল ডি’মোর বান্দরবান (Hotel D'More Bandarban) বান্দরবানের অন্যতম পরিপাটি হোটেল। বান্দরবানের বাড়পাড়াতে গেলে বাগান, বারান্দা, আর রেস্তোরাসহ তিন তারকা হোটেলটি খুঁজে পাবেন। এখান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে।
হোটেল হিল ভিউ বান্দরবান
হোটেল হিল ভিউ বান্দরবান হলো বান্দরবানের সবচেয়ে বড় আবাসিক হোটেল। বান্দরবান মূল শহরে ঢুকে বাস স্টেশন পেরোলেই হোটেলটি খুঁজে পাবেন। এখানে রুম থেকে চারপাশে উঁচু উঁচু সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায়। প্রতি রুমের ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা। হোটেলের নিজস্ব ওয়াইফাই, গাড়ি ও মেডিকেল সুবিধা আছে।
ফানুস রিসোর্ট বান্দরবান
বান্দরবান শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে নীলাচল পর্যটন স্থানের কাছে ফানুস রিসোর্ট বান্দরবান খুঁজে পাবেন। পাহাড় ও গাছগাছালির মাঝে থাকা রিসোর্টটি খুবই নিরিবিলি । রুমের সাথেই বারান্দা, বাগান ও বার্বিকিউ করার সুবিধা রয়েছে। থাকতে হলে প্রতি রুমের খরচ পড়বে ১,৭০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা।
বান্দরবান ভ্রমণের পরিকল্পনা: সেরা মৌসুম ও যাতায়াত ব্যবস্থা
বান্দরবান ভ্রমণের সেরা সময় কখন?
একেক মৌসুমে বান্দরবানের রূপ একেকরকম হয়। বর্ষাপ্রেমীরা মেঘ আর সতেজ প্রকৃতি দেখতে জুলাই থেকে নভেম্বরের মাঝে ভ্রমণ করে থাকে। অন্যদিকে শীতপ্রেমীরা ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুকনো মৌসুমে যেতে পছন্দ করে। এপ্রিল, মত, ও জুনে প্রচন্ড গরম ও বৃষ্টি থাকার কারণে সাবধানতার সাথে ভ্রমণ করা উচিৎ।
বান্দরবান যাবার সেরা উপায় কি কি?
বান্দরবান যাবার প্রধান দুটি উপায় হলো বাস ও ট্রেন। বাংলাদেশের সকল বিভাগীয় শহর থেকে বাসে করে বান্দরবান যেতে পারবেন। ট্রেনে যেতে হলে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠে পড়তে হবে। ঢাকা থেকে অথবা ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের মাঝে যেকোনো স্থান থেকেও যেতে পারবেন।
-
বাস: ঢাকা থেকে শ্যামলী, ডলফিন, সেন্ট মার্টিন, ইউনিক, এস.আলম ইত্যাদি এসি ও নন-এসি বাস রয়েছে। জনপ্রতি ভাড়া পড়তে পারে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। কলাবাগান ও সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সহজে বাস পাবেন।
-
ট্রেন: সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, সুবর্ণা এক্সপ্রেস, গোধুলী-সহ বেশ কিছু ট্রেন পাবেন। কামরা ও আসনের মান অনুযায়ী ২০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন।
বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান: কোথায় ঘুরবেন ও কিভাবে যাবেন
বান্দরবানে দেখার জায়গার অভাব নেই। পরিবারের সাথে নীলগিরি ও নীলাচলে মেঘ দেখে সময় কাটাতে পারেন। পাহাড়ি সংস্কৃতি দেখতে স্বর্ণ মন্দির, শৈলপ্রপাত ও চিম্বুক ঘুরে আসতে পারেন। রহস্য-রোমাঞ্চপ্রেমীদের জন্য বগালেক, নাফাখুম, কেওক্রাডং, ও আলীকদমের মত আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।
এসব স্থানে দুভাবে যেতে পারেন। জীপ বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে অল্প সময় নিয়ে সকল স্থান দেখতে পারেন। আবার সরাসরি পছন্দের স্থানে গিয়ে সারাদিন সময় কাটাতে পারেন। এবার বান্দরবানের সকল আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাকঃ
নীলগিরি
বান্দরবান থেকে ৫,০০০ টাকায় জীপ ভাড়া নিয়ে ‘বাংলার দার্জিলিং’ নামে পরিচিত নীলগিরিতে যাওয়া যায়। এখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের ২,০০০ ফুট উপরে মেঘের দেখা পাবেন। পাহাড়ের চূড়া থেকে কেওক্রাডং ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যায়।
নীলাচল
বান্দরবান শহরের ৫ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় গেলে নীলাচলের দেখা পাবেন । অটো রিকশাতে ১,০০০ টাকা আর জীপে ১,২০০ টাকাতে যেতে পারবেন। এখান থেকে সারা বান্দরবান শহর দেখা যায়। বর্ষা, শরৎ আর হেমন্ত মৌসুমে হাতের কাছেই মেঘ স্পর্শ করা যায়।
স্বর্ণ মন্দির
বান্দরবান জেলা সদরের ৯ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটের পুলপাড়ায় গেলে স্বর্ণ মন্দির পাবেন। শহর গাড়ি ভাড়া করে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় এখানে যাওয়া যায়। ৫০ টাকার টিকেট কিনে মন্দির ও দেবতা পুকুর নামে ছোট একটি পুকুর দেখে নিতে পারেন। এখানে এশিয়ার অন্যতম বুদ্ধ ধাতু জাদি রয়েছে।
শৈলপ্রপাত
শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে থানচির কাছে শীতল পানির শৈলপ্রপাত ঝর্ণা পাবেন। শহর থেকে জীপে বা চান্দের গাড়িতে যেতে খরচ হয় ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। এখানে গ্রামীণ জীবনযাত্রা দেখার পাশাপাাশি বম গোষ্ঠীর হাতে তৈরি মাফলার, বিছানা, বেত ও বাঁশের বিভিন্ন জিনিস কিনতে পারবেন।
চিম্বুক
মূল বান্দরবান শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়। সমুদ্র থেকে ২,৫০০ ফুট উপরের এই পাহাড়ের পাশে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সাঙ্গু নদী ও মিলনছড়ি দেখা যায়। তবে মনে রাখবেন, বিকেল চারটার পর চিম্বুক-থানচি পথে কোনো গাড়ি পাবেন না । তাই আগেভাগেই দেখে নিবেন বা ভাড়া করা গাড়ি সাথে রাখবেন।
বগালেক
বান্দরবান শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে ২,৭০০ ফুট উঁচুতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ১৫ একরের এই বিশাল বগা লেক। শহর থেকে রুমা যেতে ২,৫০০ টাকা আর রুমা থেকে বগা লেকে যেতে ২,৫০০ টাকা খরচ হয়। এখানে রেস্ট হাউজে থেকে সকালের আলো ঝলমলে লেক আর রাতের মায়াবী চাঁদের আলো দেখা যায়।
নাফাখুম
থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে নাফাখুম জলপ্রপাত পাবেন। পাবলিক বাস অথবা জীপ ভাড়া করে শহরে থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরের এই স্থানে যেতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে ৩ ঘন্টা হাইকিং করে ঝর্ণার কাছে যাওয়া যায়। এখানে পাথরের উপর দিয়ে যাওয়া ছরা ও আদিবাসীদের জীবনযাপন দেখা যায়।
কেওক্রাডং
রুমা উপজেলার ৩,০০০ ফুটের বেশি উঁচু পাহাড় কেওক্রাডং। পাহাড়ে আর্মিদের অনুমতি নিয়ে ট্রেকিং করা যায়। এছাড়া ১০০ বা ১৫০ টাকায় আদিবাসীদের ছোট ছোট কটেজে থাকা যায়। থাকার পাশাপাশি পাহাড়ি মুরগি, ডিম ও পানীয়-সহ আদিবাসীদের বিভিন্ন খাবার খেতে পারবেন।
আলীর সুরঙ্গ
আলীকদম উপজেলার ৩ কিলোমিটার দূরে দুই পাহাড়ের মাঝে থাকা আলীর সুরঙ্গ। শহরে থেকে থানচি-আলীকদম-এর পথ দিয়ে এখানে আসতে পারবেন। এখানে তিনটি সরু ও গা ছমছম করা গুহা আছে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা মশাল নিয়ে গুহার মধ্যে দেখে আসতে পারে।
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার বান্দরবান ভ্রমণকে করুণ আরও রোমাঞ্চকর!
বান্দরবান দেশের এক অন্যতম ভ্রমণ স্থান। এখানকার পাহাড়, মন্দির, ঝর্ণা আর অপরূপ সৌন্দর্য্য মাত্র একদিনে দেখা সম্ভব না। তাই পরিকল্পনা করে বান্দরবানের সেরা হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে থাকলে সবকিছু মন ভরে দেখা যায়।
বান্দরবানে সেরা ভ্রমণ প্যাকেজের জন্য ব্রাউজ করুন www.sharetrip.net কিংবা ডাউনলোড করুন শেয়ারট্রিপ অ্যাপ। যেকোনো প্রয়োজনে মেইল করুন vacation@sharetrip.net-এ অথবা শেয়ারট্রিপ হটলাইন +8809617617617-এ কল করে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন।