পৃথিবীর বৃহত্তম নগরীর মধ্যে একটি ভারতের রাজধানী দিল্লি। এখানে মুঘল শাসকদের পৃথিবী জয় করা ইতিহাস ও স্থাপনা রয়েছে। দিল্লিতে কেনাকাটার পাশাপাশি জামে মসজিদ, চাঁদনী চক, কুতুব মিনার, যন্তর মন্তর-সহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। ভ্রমণ চার বা পাঁচ দিন ব্যাপী হলে দিল্লির পাশেই আগ্রার তাজমহল দেখে আসা যায়! এশিয়ার বিখ্যাত এই শহরে আপনার ভ্রমণ সহজ করতে আজ আমরা বলবো কখন দিল্লি ভ্রমণে যাবেন, ঢাকা টু দিল্লি বিমান ভাড়া কেমন হবে, আর দিল্লির হোটেল সম্পর্কে। চলুন এক নজরে সব দেখে নেওয়া যাক।
কখন দিল্লি ভ্রমণে যাবেন?
দিল্লিতে গরমের সময় অসহনীয় গরম আর শীতের সময় কনকনে ঠান্ডা পড়ে। তাই মাঝামাঝি কোনো নাতিশীতোষ্ণ মৌসুমে যাওয়া ঠিক হবে। এই হিসেবে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর দিল্লি যাবার সেরা সময়। তবে অবশ্যই অগ্রিম বিমানের টিকেট নিতে হবে, কারণ ভ্রমণ মৌসুমে যাত্রীর চাহিদা ও টিকেটের দাম দুটোই বেড়ে যাবে।
কিভাবে দিল্লি যাবেন?
দিল্লি ভ্রমণের সেরা যাতায়াত ব্যবস্থা হলো বিমান। বেশ কিছু বিমান সংস্থার ঢাকা টু দিল্লি ফ্লাইট রয়েছে। এদের কাছে বিভিন্ন মানের সেবা পাবেন। বিমানসংস্থা সমূহ হলোঃ
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
- ইএস বাংলা এয়ারলাইনস
- এয়ার ইন্ডিয়া
- ভিস্টারা এয়ারলাইনস
- ফ্লাই দুবাই
- থাই এয়ারওয়েস
- টার্কিশ এয়ারলাইনস
ঢাকা টু দিল্লি ফ্লাইট খরচ কেমন হয়?
ঢাকা টু দিল্লি ফ্লাইট টিকেট প্রাইস ১৪,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা এয়ারলাইন্স, ফ্লাইট টাইম ও বুকিং টাইম ইত্যাদির কারনে পরিবর্তিত হতে পারে। ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে রাউন্ড ট্রিপে গেলে খরচ ও নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা কম হয়।
দিল্লির সেরা হোটেল-সমূহ কি কি?
নয়া দিল্লিতে প্রায় ৩ হাজারের বেশি হোটেল আছে। এর মধ্যে ব্যাকপ্যাক ট্যুর থেকে শুরু করে ফ্যামিলি ভেকেশনের জন্য সবরকম হোটেলই পাবেন। একা কম খরচে থাকতে ক্যাপিটাল লা সাফায়ার ও হোটেল শ্রী নানক কন্টিনেন্টালের মত হোটেলে ২ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে সাধারণ রুম পাবেন। আর পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভ্রমণে গেলে দ্য ম্যানর, দ্য মেট্রোপলিট্যান হোটেল, রেডিসন ব্লু ম্যারিনা হোটেল-এর মত হোটেলে ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে বিলাসবহুল রুম পাবেন।
দ্য ম্যানর
ঠিকানাঃ ৭৭, ফ্রেন্ডস কলোনির পশ্চিম পার্শ্বে, নয়া দিল্লি
ইন্দিরা গান্ধি এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে করে দ্য ম্যানর হোটেলে যেতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে। এর খুব কাছেই ইসকন মন্দির ও নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ অবস্থিত। হোটেলের সাজসজ্জা খুব আধুনিক ও মোলায়েম যা অতিথিদের স্বস্তি দেবে। রুমের সাথে চা-কফি বানানোর সকল সুবিধা আছে। হোটেলের লন, টেরেস ও ডাইনিং হল অনেকটা রিসোর্টের মত নান্দনিক ভাবে সাজানো। ভিতরে ছোট ছোট গাছপালার জন্য প্রাকৃতিক আবহ বিরাজ করে। খাবার জন্য এখানে দুটি রেস্তোরা ও একটি বার আছে। সময় কাটানোর জন্য মেডিটেশন ও ইয়োগার ব্যবস্থা পাবেন। আত্মশুদ্ধির উদ্দ্যেশ্যে নিরিবিলি ভ্রমণের জন্য হোটেলটি দিল্লির অন্যতম সেরা পছন্দ।
দ্য মেট্রোপলিট্যান হোটেল অ্যান্ড স্পা
ঠিকানাঃ বাংলা সাহেব রোড, কোনাউত, নয়া দিল্লি
দ্য মেট্রোপলিট্যান হোটেল অ্যান্ড স্পা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ কিমি এবং এয়ারপোর্ট থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত। হোটেলে সারাক্ষণই রাজকীয় রঙ-ঝলমলে পরিবেশ বিরাজ করে। রুম ও আসবাবপত্র একটা আধুনিক ভারতীয় অনুভূতি দেবে। সব রুমেই এসি, টিভি, কাপড়ের ইস্ত্রি ও মিনিবার পাবেন। দেশী ও বিদেশী খাবারের জন্য এখানে সাকুরা রেস্টুরেন্ট, চাটনী বার ও তন্দুর বারের মত চমৎকার সব রেস্তোরা আছে। বিশ্রাম নেবার জন্য ফিটনেস সেন্টার, স্পা ও সৌনা সার্ভিস পাবেন। এছাড়া হোটেলে বসেই বিভিন্নরকম তোয়ালে, চা, কেক ও চকলেট কেনার জন্য একটা দোকান আছে।
রেডিসন ব্লু ম্যারিনা হোটেল
ঠিকানাঃ জি-৫৯, কোনাউত প্লেস, নয়া দিল্লি
নয়া দিল্লির অন্যতম বাহারি ও সুন্দর বুটিক হোটেল রেডিসন ব্লু ম্যারিনা হোটেল। এয়ারপোর্ট থেকে দূরত্ব মাত্র ১৪ কিমি। এখানে গিয়েই মনে হবে আধুনিকতার একেবারে শীর্ষে অবস্থান করছেন। এখানে দেয়ালের পাশাপাশি সকল রুম ও হলওয়ের ফ্লোর কাঠের নকশা করা। রুমের মধ্যে সেফটি বক্সসহ অনেক রকম সুবিধা আছে। কাবাবসহ বিভিন্ন রকম ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক খাবারের জন্য তিনটি সুবিশাল রেস্তোরা আছে। আবার এখানে অভিজ্ঞ মানুষ দিয়ে ম্যাসাজ ও স্পা নেওয়ার ব্যাবস্থা দেখা যায়। এখানকার লবি ও ডাইনিং হলে জাকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায়। যারা নিয়মিত ব্যাবসায়ীক কাজে ভ্রমণ করে তাদের জন্য হোটেলটি সেরা।
শ্রী নানক কন্টিনেন্টাল
ঠিকানাঃ হর্ধন সিং রোড, কারল বাগ, নয়া দিল্লি
সাশ্রয়ী খরচে থাকার জন্য নয়া দিল্লীর শ্রী নানক কন্টিনেন্টাল অন্যতম সেরা হোটেল। এখানে কম মূল্যে ছিমছাম পরিবেশের রুম পাওয়া যায়। এয়ারপোর্ট থেকে এখানে যেতে ৪০ মিনিটের মত সময় লাগবে। এখানকার রুমগুলোতে রেফ্রিজারেটর ও টেবিল কম্পিউটারের সুবিধা পাওয়া যায়। রুমের মধ্যে টি টেবিল ও ড্রয়ারসহ মোটামুটি প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র আছে। টেরেস থেকে শহরের দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি হোটেলে গেম খেলে ও কেনাকাটা করে সময় কাটানো যায়। এখানে প্রতিদিন সকালে ব্যুফে নাস্তার ব্যবস্থা আছে। আবার হোটেল থেকে কাছেই কুতুব মিনারসহ বেশ কিছু মসজিদ ঘুরে দেখতে পারবেন।
ক্যাপিটাল লা স্যাফায়ার
ঠিকানাঃ এ-২৩, মহিপালপুর, নয়া দিল্লি
ক্যাপিটাল লা স্যাফায়ার ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্ট থেকে একেবারে কাছেই বেশ অভিজাত সাজসজ্জায় মোড়ানো সাশ্রয়ী মানের হোটেল। পুরো হোটেল বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, উজ্জ্বল আলোতে সাজানো এবং বিভিন্ন রকম সুবিধা আছে। রুমের ভিতরে বসার জন্য সিটিং এরিয়া, টি টেবিল ও আনুষঙ্গিক রয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এখানে হুইলচেয়ারে অনায়াসে চলাফেরা করতে পারবেন। এখানে খাবার জন্য ভালো ডাইনিং ও অনুষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স রুম আছে।
কিভাবে সাশ্রয়ী খরচে সেরামানের হোটেলে থেকে দিল্লি ভ্রমণ করবেন?
শেয়ারট্রিপের ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে খুব কম খরচে দিল্লি, আগ্রা ও জয়পুর ঘুরে আসতে পারেন। বিভিন্ন অপশনে বিভিন্ন রকম খরচ আসবে। সর্বোপরি ২২ হাজার থেকে ৯৩ হাজার টাকায় সুবিধামত অপশনে ভ্রমণ করা যায়। বিশেষ করে যুগলরা এভাবে সেরা মানের হোটেলে থাকতে পারবেন। এতে একনাগাড়ে পাঁচ দিনের ভ্রমণ হবে। প্রথম দিনে দিল্লি পৌছাবেন, এরপর দ্বিতীয় দিনে কুতুব মিনার, লোটাস মন্দির রেড ফোর্ট, ইন্ডিয়া গেটসহ অনেক কিছু দেখে ফিরবেন। তৃতীয় দিনে আগ্রা গিয়ে আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল, সামানবুর্জ, মতি মসজিদ, জাহাঙ্গীরের প্রাসাদ, শীষ মহলসহ নানারকম স্থাপনা দেখবেন। চতুর্থ দিনে জয়পুরে আমার ফোর্ট, হাওয়া মহল ইত্যাদি দেখে পঞ্চম দিনে জয়পুর থেকে দিল্লিতে ফিরবেন।
স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ
এই প্যাকেজে ২২ হাজার থেকে ৪৫ হাজারের মধ্যে একা বা যুগলভাবে ঘুরে আসতে পারবেন। যেসব হোটেল থাকবেনঃ
- হোটেল জুয়েল প্যালেস (নয়া দিল্লি)
- তাজ ভিলা (আগ্রা)
- রাজপুতানা হাভেলি (জয়পুর)
সুপেরিয়র প্যাকেজ
এই প্যাকেজে ২৫ থেকে ৫৯ হাজার টাকার মধ্যে একা বা যুগলভাবে ঘুরে আসতে পারবেন। যেসব হোটেল থাকবেনঃ
- হোটেল রিজেন্ট গ্র্যান্ড (নয়া দিল্লি)
- হাওয়ার্ড প্লাজা দ্য ফার্ন (আগ্রা)
- ফার্ন রেসিডেন্সী (জয়পুর)
ডিলাক্স প্যাকেজ
এই প্যাকেজে ৪৫ হাজার থেকে ৯৩ হাজার টাকার মধ্যে একা বা যুগলভাবে ঘুরে আসতে পারবেন। যেসব হোটেলে থাকবেনঃ
- রেডিসন ব্লু (দিল্লি)
- রেডিসন ব্লু (জয়পুর)
- রেডিসন ব্লু (আগ্রা)
দিল্লি ভ্রমণে কি কি সতর্কতা নিবেন?
আপনারা জানেন যে দিল্লি ঠিক ঢাকার মতই একটি জনবহুল শহর। তাই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে প্রিয়জনকে নিয়ে নিরাপদে ঘুরে আসতে পারবেন। নিচের নির্দেশনাগুলো আপনাকে নিরপাদ রাখবেঃ
- রাস্তায় জ্যাম থাকবে, তাই অবশ্যই হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হবেন
- অবশ্যই রাউন্ড ট্রিপের টিকেট নিবেন, নয়তো টিকেট না পেলে ফিরতে অতিরিক্ত খরচ ও ঝামেলা হবে
- শুধুমাত্র দর্শনীয় স্থান উপভোগ করতে চাইলে বড় কোনো উৎসবের সময় না গিয়ে সাধারণ সময়ে যাবেন
- মশার উপদ্রব এড়াতে ওডোমোস বা অন্য ব্যাবস্থা সাথে রাখবেন
- কোনো কিছু কিনতে হলে দামাদামি করে কিনবেন, কারণ ট্যুরিস্টদের কাছে বিক্রেতারা দাম বেশি চায়
- স্থানীয় হোটেলের পানি না খেয়ে বোতলের পানি খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কম হবে
- যাত্রাকালীন সময়ে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন বা হেল্পলাইনের নম্বর জেনে নিবেন
- রাতে হোটেলে বা ভালো স্থানে অবস্থান করলে এবং বাইরে কম ঘোরাফেরা করা ভালো হবে
যেভাবে দিল্লি ভ্রমণের জন্য ভিসা আবেদন করবেন
ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা নিয়ে সহজে দিল্লি ঘুরে আসতে পারবেন। এর জন্য শেয়ারট্রিপ থেকেই ভিসা আবেদন করতে পারেন। ভিসা নিয়ে সর্বোচ্চ ৯০ দিন অবস্থান করা যায়। ভিসা প্রসেসিং করতে যা যা লাগবেঃ
- No-objection সার্টিফিকেট
- Covid-19 সার্টিফিকেট
- Bar Council সার্টিফিকেট
- ম্যারেজ সার্টিফিকেট
- পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- স্বামী/স্ত্রীর পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- ভিজিটিং কার্ড
- ২*২ সাইজের রঙিন ছবি
- অফিস/শিক্ষাকেন্দ্রের প্রমাণপত্র
- বিগত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ২টি সাদা পাতা-সহ পাসপোর্ট
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার দিল্লি ভ্রমণ হবে আরও সহজ!
সর্বোপরি এই ছিল দিল্লির সেরা হোটেল ও বিমান খরচ নিয়ে বিস্তারিত। আপনি চাইলে শেয়ারট্রিপের ফ্লাইট পেজ থেকে নিজের পছন্দমত বিমান সংস্থার টিকেট কিনতে পারেন। দিল্লিতে ঘুরে দেখার মত ২০টির বেশি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। গাইড ও থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সবকিছু দেখতে কাস্টমাইজড ভ্রমণ প্যাকেজ নেয়া ভাল হবে। এছাড়া দিল্লি ভ্রমণ বিষয়ক যেকোনো তথ্য পেতে ইমেইল করুন vacation@sharetrip.net -এ ও কল করুন +8809617617617 নম্বরে।