জেনে নিন হিমালয় রাজ্য দার্জিলিং-এর সেরা হোটেল সম্পর্কে।
মেঘের স্বর্গরাজ্য নামে পরিচিত দার্জিলিং। টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, টয় ট্রেন, মোনাস্ট্রি ও টি-স্টেটসহ দার্জিলিং-এ দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমালয়ের পাশে এই শহরে উপচে পড়া ভিড় থাকে।
ফলে ভাল হোটেল পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু কম খরচে লজে থাকার পাশাপাশি শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে দার্জিলিং-এ হোটেল ভাড়া নেয়ার ও বাজেট-ফ্রেন্ডলি হোটেল খুঁজে পাবার কিছু উপায় আছে।
সাশ্রয়ী হোটেল খুঁজে আপনি ঢাকা টু দার্জিলিং বিমান ভাড়ার সাথে থাকার খরচ অনেক গুণ কমাতে পারবেন। তাই চলুন, প্রথমে সাধারণ হোম-স্টে ও লজগুলো এবং পরে সবচেয়ে উন্নত মানের হোটেলগুলোর ভাড়া কেমন জেনে নিই।
দার্জিলিং-এ কম খরচের হোম-স্টে ও আবাসিক লজসমূহ
একেবারে কম খরচে থাকতে দার্জিলিং-এর হোটেলের মধ্যে বিকাশ লজ, দার্জিলিং ভিউ লজ, শিবানন্দ লজ, ও কাঞ্চনজঙ্গা লজ বেশ জনপ্রিয়। তবে মনে রাখবেন, বেশিরভাগ লজে থাকা গেলেও খাবার ব্যবস্থা থাকেনা ।
একসাথে খাওয়া ও থাকার সুবিধা চাইলে হোটেল সালুজা, ডোলমা ইন্ ও ইষ্টি কুটুম হোম-স্টে আপনার জন্য ভাল হবে। আর বাইরে খেতে চাইলে গ্লেনারিস বা কেভেন্টার্স-এর মত খাবার হোটেলও আছে।
যাইহোক, এবার লজ ও হোটেলগুলোর সম্ভাব্য ভাড়াসহ কিছু তথ্য জেনে রাখি—
-
বিকাশ লজ
শিলিগুড়িতে থাকার জন্য “বিকাশ লজ” সহজ একটা উপায়। এটা হংকং মার্কেট থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখানে এক হাজার টাকার মধ্যে রুম ভাড়া নিতে পারবেন। আরাম আয়েশের জন্য ফ্রি ওয়াইফাই, ফ্রি এয়ার শাটল বাস আর ফ্রি পার্কিং পাবেন। বিশেষ ব্যাংকের কার্ডে বুকিং করলে ছাড়ও পাওয়া যায়।
-
দার্জিলিং ভিউ লজ
“দার্জিলিং ভিউ লজ” শিলিগুড়িতে অবস্থিত। এখানেও এক হাজার টাকার মধ্যে রুম ভাড়া পাবেন। সাথে ফ্রি পার্কিং, টিভি, ফ্রি ওয়াইফাই এসব তো আছেই। আর লোকাল ব্যাংকের কার্ডে বুকিং নিয়ে বেশ বড় রকমের ছাড় পাবেন। লজ হলেও এখানে ভাল ক্যাফে ও রেস্তোরা রয়েছে।
-
শিবানন্দ লজ
শিলিগুড়ির আরেকটি থাকার জায়গা “শিবানন্দ লজ।” এখানে এক হাজার থেকে পনের’শ টাকারমধ্যে ডাবল রুম পাওয়া যায়। সাথে ফ্রি পার্কিং ও ধূমপায়ীদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা আছে। “শিবানন্দ লজ” বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে সাত বা আট কিলোমিটার দূরে।
-
কাঞ্চনজঙ্ঘা লজ
পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার নামের এই লজটিও শিলিগুড়িতে পাবেন। এখানে সিংগল রুম এক হাজার টাকা ও ডাবল রুম পনের’শ থেকে আঠার’শ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর খরচের তোয়াক্কা না করলে বিলাসবহুল এসি রুমেও থাকা যায়। এখানে ফ্রি ওয়াইফাই আর স্টোররুম আছে।
-
হোটেল সালুজা
দার্জিলিং-এ হোটেল ভাড়া নিতে অনেকের প্রথম পছন্দ “হোটেল সালুজা।” এখানে বার’শ থেকে পনের’শ টাকার মধ্যে সিংগল রুম পাওয়া যায়। সকালের নাস্তা হতে শুরু করে রুমের মধ্যে ডাইনিং ও লন্ড্রির সুবিধা আছে। ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবেন।
-
ডোলমা ইন্
পনের’শ টাকা বাজেটে থাকার জন্য “ডোলমা ইন্” বেশ ভাল হোটেল। অন্য কোথাও জায়গা না পেলে সোজা এখানে চলে যেতে পারেন। হোটেলে রেস্টুরেন্টের সাথে আশেপাশে দেখার মত জায়গা পেয়ে যাবেন। আবার এয়ারপোর্টে যাবার জন্য ফ্রি যাতায়াত ব্যবস্থাও আছে।
দার্জিলিং-এর মাঝারি মানের আবাসিক হোটেলসমূহ
আগেই বলেছি, বেশিরভাগ লজে খাবার ব্যবস্থা থাকেনা। তাই পারিবারিক ভ্রমণ সহজ করতে মাঝারিমানের হোটেলের কোনো বিকল্প নেই। মধ্যবিত্তরা সীমিত বাজেটে দার্জিলিং শহরের মধ্যেই হোটেল ব্রোডওয়ে, হোটেল স্যান্ডারলিং বা হোটেল অপ্সরাতে রাতযাপন করতে পারে। এবারে হোটেলগুলোর কিছু তথ্য জেনে নিই—
-
হোটেল ব্রোডওয়ে
দার্জিলিং শহরে কোচ বিহার রোডে টেলিফোন স্টেশনের পাশে “হোটেল ব্রোডওয়ে।” পনের’শ থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে এখানে বিভিন্ন রকম রুম পাবেন। এই হোটেলের ভিতরে ও বাইরে দুই পরিবেশই সুন্দর। এখানে স্বস্তিদায়ক রুম সুবিধার সাথে হোটেল থেকে এয়ারপোর্টে যাবার শাটল কার পাবেন।
-
হোটেল স্যান্ডারলিং
যাবার আগেই দার্জিলিং-এর হোটেল বুকিং নিতে চাইলে “হোটেল স্যান্ডারলিং” সেরা সিদ্ধান্ত। এইচ.ডি.লামা রোডের এই হোটেলে বিভিন্ন রকম এসি-নন এসি রুমের পাশাপাশি মেডিকেল এবং লন্ড্রির সুবিধা পাবেন। অতিরিক্ত আরাম-আয়েশের জন্য “স্পা”-এর ব্যবস্থা আছে।
-
হোটেল অপ্সরা
দার্জিলিং শহরের ৬ নং লাদেন-ল্য রোডের মধ্যমানের থাকার জায়গা “হোটেল অপ্সরা।” সীমিত বাজেটের মধ্যে পারিবারিক ভ্রমণে এই হোটেল আপনার খরচ অনেক কমিয়ে দেবে। এই হোটেলের ছাদ ও ব্যালকনি থেকে সারা শহরের দৃশ্য দেখা যায়।
দার্জিলিং-এর উচ্চমানের সেরা হোটেলসমূহ
বাজেট কোনো সমস্যা না হলে শখ পূরণে কোনো ঘাটতি না রেখেই দার্জিলিং-এ থাকতে পারবেন । মে-ফেয়ার দার্জিলিং, হোটেল সিনক্লেয়ার্স দার্জিলিং, ও হোটেল সেভেন-সেভেনটিন-এর মত উচ্চবিলাসী হোটেলে আপনার প্রিয় মুহূর্ত কাটিয়ে আসতে পারবেন। এখানে যেরকম পরিবেশ পাবেন—
-
মে-ফেয়ার দার্জিলিং
দার্জিলিং-এ রাজ্যপাল ভবনের মুখোমুখি “মে-ফেয়ার দার্জিলিং হোটেল।”
মে-ফেয়ার দার্জিলিং-এ আলাদা বার ও ফিটনেস সেন্টার আছে। এখানে রুমের সৌন্দর্য অনেক ভাল ছবি-ভিডিও উপহার দেবে। সবচেয়ে বড় কথা, দশ হাজার টাকায় তিনজনের থাকার মত অভিজাত রুম পেয়ে যাবেন।
-
হোটেল সিনক্লেয়ার্স দার্জিলিং
১৮/১ গান্ধী রোডের হোটেল সিনক্লেয়ার্স সর্বসাধারণের ভাল লাগবে।
রাজকীয় রঙ ও শোভায় মোড়ানো হোটেলটিতে চার হাজার থেকে শুরু করে অনেক উচ্চমূল্যের রুম পাবেন। হানিমুনের জন্য সেরা পছন্দ হতে পারে হোটেলটি! সকালের নাস্তার সুবিধা-সহ এখানে ফ্রি ওয়াইফাই ও এয়ারপোর্ট শাটল পাবেন।
-
হোটেল সেভেন-সেভেনটিন
এইচ.ডি.লামা রোডের সুন্দরতম হোটেলের একটি “হোটেল সেভেন-সেভেনটিন।” এই হোটেলটি তিব্বতের মালিকানায় পরিচালিত হয়। বাজেটে কোনো সমস্যা না থাকলে অনায়াসে এখান থেকে দার্জিলিং উপভোগ করতে পারেন। এখানে পাঁচ বা ছয় হাজার থেকে রুমের ভাড়া শুরু হবে ।
-
হোটেল ভাইসরয়
গান্ধী রোডের হোটেলের মধ্যে “হোটেল ভাইসরয়” বেশ নামকরা হোটেল। জায়গা কিছুটা কম হলেও এখানে টিভি,লন্ড্রি, ভল্ট থেকে শুরু করে সকল সুবিধা নিতে পারবেন। এখানে অবসর কাটাতে ফিটসেন সেন্টার ও হট ওয়াটারসহ বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে।
দার্জিলিং-এর সেরা খাবার হোটেলসমূহ
থাকার হোটেল সম্পর্কে জানা হলো, কিন্তু স্থানীয় লজে থাকলে কোথায় খেতে যাবেন? বিভিন্ন দেশি বিদেশি সুস্বাদু খাবারের জন্যও কিন্তু দার্জিলিংয়ে কিছু বিশেষ হোটেল আছে। যেমন—গ্লেনারিস, দ্য পার্ক, হেস্টি-টেস্টি, কেভেন্টার্স ও সোনম’স কিচেনে বিদেশি খাবারের পাশাপাশি একেবারে খাটি বাঙালি খাবার খুঁজে পাবেন।
-
গ্লেনারিসঃ একই সাথে চীনা খাবার ও মুঘল তন্দুরি খাবারের জন্য জনপ্রিয় “হোটেল গ্লেনারিস।”
-
দ্য পার্কঃ বিশেষ করে থাই জাতীয় খাবারের জন্য জনপ্রিয় হোটেল “দ্য পার্ক।”
-
হেস্টি-টেস্টিঃ ভারতীয় জনপ্রিয় সব মশলাদার খাবার পাওয়া যাবে “হেস্টি-টেস্টি” হোটেলে।
-
কেভেন্টার্সঃ বিখ্যাত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে সকালে নাস্তা করার উপযুক্ত হোটেল “কেভেন্টার্স।”
-
সোনম’স কিচেনঃ ফরাসী খাবার, কেক, স্য়ুপ, পাস্তাসহ অনেক মেনু পাবেন “সোনম’স কিচেন”-এ।
সহজে দার্জিলিং-এ হোটেল ভাড়া নেবার কৌশলসমূহ
দার্জিলিং-এ যাবার আগেই যদি হোটেলগুলো দেখে মনের মত রুম খুঁজে পান তাহলে কেমন হয়? ঠিক এই কাজটাই শেয়ারট্রিপের ওয়েবসাইটে করতে পারবেন!
এখানে ঢাকা টু দার্জিলিং বিমান ভাড়া বা কলকাতা টু দার্জিলিং বিমান ভাড়া দেখার পাশাপাশি সহজে হোটেল ভাড়া দেখা যায়। এছাড়া সাত থেকে পঁচিশ হাজার টাকার মধ্যে সামিট সোব্রালিয়া রিসর্ট, চুম্বি মাউনটেইন রিসর্ট, এলগিন মাউন্ট পেলগিনসহ অতিকায় বিলাসবহুল সকল হোটেল খুঁজে পাবেন।
যেভাবে শেয়ারট্রিপে দার্জিলিং-এর ভাল মানের হোটেল খুঁজবেন
১. ওয়েবসাইটের হোটেল ট্যাব ক্লিক করে পেইজটি ভিজিট করুন,
২. টেক্সট বক্সে ভ্রমণে যাওয়া শহরের নাম লিখুন, যেমনঃ Darjeeling,
৩. কতদিন থাকবেন এবং কতজন থাকবেন সেটা বাছাই করে দিন,
৪. সার্চ বাটনে ক্লিক করে রিভিউ, ভাড়া ও মূল্যহ্রাস সহ হোটেলের তালিকা দেখুন।
যেভাবে দার্জিলিং-এর হোটেল ভাড়া কমাবেন
ভাড়া বেশি মনে হলে সহজ কিছু কৌশলে পছন্দের হোটেল ভাড়া কমিয়ে ফেলতে পারেন। এভাবে ভ্রমণ মৌসুমেও কম খরচে রুম পাবার সম্ভাবনা থাকবে।
-
সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া অন্যদিনে ভ্রমণ করলে মানুষের চাপ ও ভাড়া দুটোই কম হবে।
-
বেশিদিন থাকার পরিকল্পনা করলে হোটেলগুলো বেশি মূল্যছাড় দিবে।
-
শেয়ারট্রিপে হোটেল খুঁজলে কুপন ও ডিসকাউন্ট দিয়ে কম ভাড়ায় রুম নিতে পারবেন।
-
আগের থাকা কোনো হোটেলে গিয়ে কথা বলে ও সৌজন্যতা দেখিয়ে ভাড়া কমাতে পারবেন।
দার্জিলিংয়ে নিরাপদে হোটেল খোঁজার সহজ উপায়
অনেকেই হয়তো জানেনা, দার্জিলিং-পুলিশ ভ্রমনার্থীদের হয়রানি ঠেকাতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন—স্থানীয় পুলিশ ভাড়া ও ফোন নম্বরসহ কিছু মানসম্মত হোটেলের তালিকা তৈরি করছে। আপনি চাইলে দার্জিলিং-পুলিশ-এর ওয়েবসাইট থেকে অথবা সরাসরি পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করে তালিকাটি সংগ্রহ করতে পারেন। এভাবে পরিবার ও শিশু-কিশোর নিয়ে সবচেয়ে নিরাপদ হোটেলে থাকতে পারবেন।
শেষকথা
শৈলশহরের রাণী দার্জিলিংয়ে একাধারে আছে প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়ি অ্যাডভেঞ্চার, ও সতেজ চায়ের বাগান। ঐতিহাসিক স্থাপনাময় এই শহর না দেখলে জীবনের অনেক অনুভূতি অপূর্ণ থেকে যাবে। তাই ভাল হোটেল থেকে নিশ্চিন্তে শীতল শহরটি ঘুরে দেখুন। সৌভাগ্য হলে হোটেলের ছাদ থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা বা অন্য মনোরম পাহাড়ের চূড়া সরাসরি দেখতে পাবেন। সাশ্রয়ী খরচে হোটেল ও বিমান ভাড়া পেতে শেয়ারট্রিপের হলিডে প্যাকেজ-গুলো দেখে নিতে পারেন। ধন্যবাদ।