কুয়াকাটার হোটেল ও রিসোর্ট সমপর্কে বিস্তারিত বর্ণনা।
সাগরকন্যা কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান। দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখানে ভ্রমণ করে। বিশেষ মৌসুমে কুয়াকাটার রিসোর্ট ও হোটেলগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। তাই আপনার ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে আমরা কুয়াকাটার হোটেল ভাড়া ও ভাল রিসোর্টের লিস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।
আজকের লেখায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হোটেল ভাড়া, শিকদার রিসোর্ট ও হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশনাল-এর মত হোটেলের সুবিধা এবং কুয়াকাটার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে কথা বলবো। এসব জানার পর নিজে অথবা শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে খুঁজে সুন্দর এই বেলাভূমিতে সহজে ঘুরে আসতে পারবেন।
কুয়াকাটার হোটেল ভাড়া: সেরা হোটেল ও রিসোর্ট সমূহ
কুয়াকাটায় কক্সবাজারের মত খুব বেশি হোটেল বা রিসোর্ট নেই। অগ্রিম বা সরাসরি গিয়ে শিকদার রিসোর্ট, হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশনাল, কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল, হোটেল খান প্যালেস, ওশান ভিউ হোটেল-সহ অনেক উচ্চমানের হোটেল ভাড়া নিতে পারবেন।
প্রথমবার হোটেল খুঁজতে গিয়ে হয়েতো ধাঁধায় পড়ে যাবেন। কারণ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মানুষের চাপ বেশি থাকে। তাই হোটেলে জায়গা স্বল্প ও ভাড়ার পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে কি ভ্রমণ থেমে থাকবে? চলুন এক নজরে সবগুলো ভাল হোটেলের সুবিধাগুলো জেনে নেই—
শিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা
কুয়াকাটার সেরা পাঁচ তারকা হোটেল শিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা। জিরো পয়েন্ট থেকে দুই কিলোমিটার দূরে এই হোটেল খুঁজে পাবেন। রুমের মান অনুযায়ী ৮,০০০ থেকে ৩৫,০০০ টাকায় হোটেল ভাড়া নিতে পারবেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেলটিতে অনুষ্ঠান ও বনভোজন করা যায়। বাজেট সীমিত না হলে পুরো পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে পারেন। যেসব সুবিধা আছে—
- ডিলাক্স রুম, প্রিমিয়ার রুম ও সুপেরিয়র ভিলা আছে
- বারান্দা থেকে সরাসরি প্রশস্ত সমুদ্র-সৈকত দেখা যায়
- হোটেলে সুইমিং পুল ও নৌকাভ্রমণের ব্যবস্থা আছে
কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল
কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল আরো একটি নামকরা পাঁচ তারকা হোটেল। জিরো পয়েন্ট থেকে সহজে বিলাসবহুল এই হোটেলে যাওয়া যায়। এখানে থাকতে হলে খরচ পড়বে ১৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা। রিসেপশন থেকে শুরু করে প্রতিটি রুমেই আভিজাত্যের ছোঁয়া পাবেন। অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে হেলিপ্যাড ও ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। আরো যেসব সুবিধা পাবেন—
- স্ট্যান্ডার্ড, প্রিমিয়াম ও প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটের ব্যবস্থা আছে
- পুল ও বিভিন্নরকম খেলাধুলা করার ব্যবস্থা আছে
- আকর্ষণীয় গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরে দেখার সুযোগ আছে
হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশনাল
চার তারকা হোটেলগুলোর মধ্যে হোটেল গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশনাল উপরের সারিতে থাকবে। রাখাইন মহিলা মার্কেটের পূর্বপাশে হোটেলটি খুঁজে পাবেন। এখানে সব রুমই আসবাবপত্র ও অন্যান্য উপকরণে সাজানো। শরীরচর্চার জন্য ব্যায়ামাগারও আছে। গাড়ি রাখার জন্য সুন্দর পার্কিং স্পট পাবেন। অন্যান্য সুবিধাসমূহ—
- রয়্যাল, প্রিমিয়াম ও ডিলাক্স তিন ধরণের রুমের ব্যবস্থা আছে
- অনুষ্ঠানের জন্য বড় কনফারেন্স রুম ও ঘাসের প্রাঙ্গন আছে
- সুস্বাদু দেশি, চীনা ও কাবাব জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা আছে
হোটেল খান প্যালেস
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটলেই হোটেল খান প্যালেসের দেখা পাবেন। তিন তারকা হোটেলটি মধ্যবিত্তদের জন্য খুবই ভালো। ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকাতে এখানে রুম পাবেন, তবে ভ্রমণ মৌসুমে ভাড়া কিছুটা বাড়তে পারে। প্রত্যেকটি রুমে আধুনিক নকশার আলাদা শৌচাগার আছে। আরো যেসব সুবিধা পাবেন—
- গাড়ি রাখার জন্য অনেক বড় পার্কিং লট আছে
- ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের হরেক রকমের খাবার মেনু পাওয়া যায়
- সময় কাটানোর জন্য প্রাকৃতিক বাগান ও বড় টিভি আছে
ওশান ভিউ হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন
সাধ্যের মধ্যে থাকার জন্য আরেকটা ভালো হোটেল হল ওশান ভিউ হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন। রাখাইন মহিলা মার্কেটের একেবারে বিপরীতে গেলে এই দুই তারকা হোটেলটি খুঁজে পাবেন। অফিস বা স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠানের জন্য ওশান ভিউ হোটেল সেরা বলা যায়। এখানে যেসব সুবিধা পেতে পারেন—
- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্ট্যান্ডার্ড ও ডিলাক্স রুম আছে
- বারান্দা থেকে সরাসরি সমুদ্র সৈকত উপভোগের সুবিধা আছে
- সকালে বুফে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা আছে
কুয়াকাটার সকল দর্শনীয় স্থান: প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন
কুয়াকাটা একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। কিন্তু ভ্রমণ শুধু সৈকতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সময় করে কুয়াকাটার ১০টির-ও বেশি দৃষ্টিনন্দন জায়গা দেখতে পারবেন।
যেমন—শুটকি পল্লী, কাঁকড়া দ্বীপ, গঙ্গামতি জঙ্গল, ফাতরা চর, ঝাউবন, সীমা বৌদ্ধ মন্দির, ইকলোজিক্যাল পার্ক, লেবুর চর, নারিকেল বাগান, ও মিষ্টি পানির কুয়া দেখে নিতে পারেন।
অনেক জায়গা থেকে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল দেখা যায়। আবার, সারাদিন ঘোরার পর কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের “ফিশ ফ্রাই মার্কেট”-এ তাজা মাছের বারবি-কিউ খেয়ে ক্ষুধা দূর করতে পারেন। যাই হোক, এবার প্রত্যেকটা দর্শনীয় স্থানের মূল আকর্ষণ জেনে নেওয়া যাক—
১. শুটকি পল্লী
কুয়াকাটা সৈকতের সাত কিলোমিটার পশ্চিমে শুটকি পল্লী। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে জেলেরা শুটকি তৈরি করে। এখানে একই সাথে শুটকি বানানোর প্রক্রিয়া ও জেলেদের জীবনযাপন দেখা যায়। আর চাইলে অনেক কমদামে কাঁচা ও শুকনো মাছ কিনে আনতে পারেন!
২. লাল কাঁকড়ার দ্বীপ
কুয়াকাটা থেকে টুরিস্ট বোটে দুই ঘন্টায় লাল কাঁকড়ার দ্বীপে যেতে পারবেন। সারা দ্বীপজুড়ে লাল কাঁকড়া ও বিভিন্ন সামুদ্রিক পাখির ঘোরাফেরা দেখবেন। দূর থেকে এত কাঁকড়া একসাথে দেখে লাল গালিচা মনে হয়! তবে এখানো কোনো দোকানপাট নেই। তাই পর্যাপ্ত খাবার ও পানি নিয়ে যেতে ভুলবেন না।
৩. গঙ্গামতির জঙ্গল
সমুদ্র সৈকতের একেবারে শেষ প্রান্তে গেলে গঙ্গামতি নামের একটা খাল পাবেন। এই খালের তীর ধরেই গড়ে উঠেছে গঙ্গামতির জঙ্গল বা গজমতির জঙ্গল। জঙ্গলের কাছের বাঁক থেকেই সবচেয়ে পরিষ্কার সূর্যাস্ত দেখা যায়। এখানে কাছে থেকেই বনমোরগ, বানর, মুরগি ইত্যাদি দেখতে পারবেন।
৪. ফাতরার চর (স্থানীয় নাম ‘ফাতরার বন’)
কুয়াকাটার কলাপাড়া উপজেলায় ফাতরার চর বা টেংরাগিরি বনাঞ্চল অবস্থিত। ট্রলারে গিয়ে এখানে সুন্দরবনের শ্বাসমূলের মত গাছের শিকড় দেখা যায়। সাথে সরীসৃপ ও পাখির কল-কাকলি তো আছেই। এখানে বন মোরগ আর বুনো শুকর ও আছে, তবে কোনো হিংস্র প্রাণী নেই।
৫. ঝাউবন
প্রায় ৭৫ হেক্টর জায়গাতে করা ঝাউবন বেশ উপভোগ্য স্থান। লম্বা আকাশমণি গাছের মাঝে নারিকেল ও বিভিন্ন ফলগাছের ছায়ায় আরামে পিকনিক করা যায়। এখানে খিচুড়ি ও সামুদ্রিক মাছ দিয়ে নাস্তা সেরে নিতে পারবেন। ঝাউবন দেখার পর মিস্ত্রী পাড়ার বৌদ্ধ বিহার এবং তাঁত পল্লীও ঘুরে আসা যায়।
৬. সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কয়েক বছর আগে বিশাল এই কাঠের মন্দিরটি আগে নতুনভাবে বানানো হয়। এখনো শতাব্দী পুরনো এই মন্দিরে সাইত্রিশ মণ ওজনের অষ্টধাতুর বুদ্ধ-মূর্তি আছে। মন্দির থেকে একটু সামনে গেলে রাখাইন নৃ-গোষ্ঠীর জীবনধারণ দেখতে পবেন।
৭. ইকলোজিক্যাল পার্ক
পয়েন্টের মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরেই ইকোপার্ক শুরু হয়। এখানে সুন্দরী, কেওড়া, হিজল, করমজা, অর্জুন, বাইন, পশুর, আসামলতা-সহ হাজারো উদ্ভিদ ও বিলুপ্তপ্রায় পাখির মিলনমেলা দেখা যায়। প্রায় ১৩,০০০ একরের এই ইকোপার্ক একদিনে ঘুরে শেষ করা কঠিন।
৮. লেবুর চর
সমুদ্র সৈকতের মাত্র ৫ কিলোমিটার পূর্বে এই লেবু ছাড়াও গেওয়া, কড়াই ও গোলপাতার মত গাছ রয়েছে। দূরে সুন্দরবনের সবুজ গাছের সারি ও সূর্যের সোনালী আভা আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। মোটর সাইকেলে ২০০ বা ৩০০ টাকায় এখানে যেতে পারবেন।
৯. নারিকেল বাগান
ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান নামে পরিচিত এই বাগানকে পাখির অভয়ারণ্য বলা চলে। এখানে ১৬৭ একর জায়গাজুড়ে কাজু বাদাম, কুল, গর্জন-সহ বিভিন্ন ওষধি ও ফলজ গাছ দেখা যায়। অযত্ন ও সমুদ্রের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও বাগানের অবশিষ্টাংশ দেখে ভাল লাগবে।
১০. মিষ্টি পানির কুয়া
কেরানিপাড়ার রাখাইন পল্লীতে একটা বৌদ্ধমন্দিরের কাছে প্রাচীন এই কূপ দেখতে পাবেন। চারপাশে লবণাক্ত সৈকতের মাঝে ৩০০ বছরের পূরনো এই কূপে মিষ্টি পানি পাওয়া যায় বলে সবার ধারণা ছিল। এখন কূপটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
সহজে কুয়াকাটার হোটেল লিস্ট খুঁজে পাবার উপায়
শেয়ারট্রিপ ওয়েবসাইটে গিয়ে অনেক সহজে তিন, চার ও পাঁচ তারকা হোটেল খুঁজে নিতে পারেন। এরজন্য যা করবেন—
- শেয়ারট্রিপ ওয়েবসােইটের হোটেল পেইজটি দেখুন
- আপনার পছন্দের ভ্রমণ স্থানের নাম লিখুন, যেমন— Kuakata
- তারিখ ও কতজন থাকার রুম লাগবে তা বাছাই করে সার্চ বাটনে ক্লিক করুন
- ফলাফল থেকে কুয়াকাটার হোটেল ভাড়া দেখে পছন্দের রুমটি ভাড়া নিন
যেভাবে কুয়াকাটায় হোটেল ভাড়া নিতে সতর্কতা থাকবেন
অনেকসময় কম খরচে ছোটখাট হোটেলের কথা বলে অনেকে মানহীন হোটেলে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এসব হোটেলে কোনো সুবিধা পাওয়া যায়না। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকে। তাই এধরনের মানুষ থেকে সতর্ক থাকবেন।
এছাড়া কুয়াকাটা ঘুরতে গেলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন এড়িয়ে অন্যদিনে যাবেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হোটেলে সাশ্রয়ী খরচে রুম ভাড়া না পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি খরচের বিলাসবহুল রুম ভাড়া নেওয়া লাগবে ।
শেষ কথা
আশা করি আমাদের কুয়াকাটার হোটেল লিস্ট ও ঘুরে দেখার জায়গাগুলোর বর্ণনা আপনাদের ভাল লেগেছে। কুয়াকাটা-সহ সারা দেশেই অনেক নয়নাভিরাম পর্যটন স্থান রয়েছে। সেগুলো দেখতে আপনাকে সময় ও সুযোগ বের করে ভালো হোটেল ভাড়া নিতে হবে।
সবচেয়ে সহজে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে ফ্লাইট ও হোটেল ভাড়া নিতে পারেন। এছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে vacation@sharetrip.net-এ মেইল অথবা +8809617617617-নম্বরে কল করুন।