চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের ঠিক পাশেই দেশের সবচেয়ে বড় জেলা খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থানের মাঝে আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, দেবতার পুকুর, তৈদুছড়া ঝর্ণা, মায়াবিনী লেক, হর্টিকালচার পার্ক, বিডিআর স্মৃতিসৌধ, নিউজিল্যান্ড পাড়া ও শান্তিপুর অরণ্য কুঠির অন্যতম।
কিন্তু একদিনে প্রকৃতির এত রূপ-বৈচিত্র্য ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। তাই আজকে আমরা জেনে নেবো থাকার জন্য খাগড়াছড়ির হোটেল ভাড়া কেমন হবে এবং এখানে ভাল মানের কোন কোন হোটেল ও রিসোর্ট আছে। বিস্তারিত জানার পর পরিবার-পরিজনের সাথে সাশ্রয়ী খরচে ভ্রমণে যেতে পারবেন।
খাগড়াছড়ির হোটেল এবং রিসোর্ট: ভাড়া, ঠিকানা, ও যেসব সুবিধা পাবেন
খাগড়াছড়িতে আরামে থাকার জন্য হোটেল হিল হেভেন খাগড়াছড়ি, হোটেল গাইরিং, পর্যটন মোটেল, হোটেল ইকোছড়ি ইন, গিরি থেবার রিসোর্ট, হোটেল হিল প্যারাডাইজ, হোটেল শৈল সুবর্ণা ইত্যাদি হোটেল আছে । আর ভ্রমণের খরচ কমাতে চাইলে দীঘিনালা রেস্ট হাউজ, হোটেল জেরিন ও হোটেল শিল্পী-র মত জায়গাতে একা বা বন্ধুবান্ধবসহ থাকতে পারবেন।
এখানে ভ্রমণে গেলে দেশের সেরা পাহাড়চূড়া, হ্রদ, ঝর্ণা, উপাসনালয় ও উপজাতীয় সংস্কৃতির ভান্ডার দেখতে পারবেন। তাই সেরা থাকার অভিজ্ঞতা পেতে আমরা সবচেয়ে ভালমানের হোটেল এবং রিসোর্টগুলোর তালিকা করেছি। এবার সব জনপ্রিয় হোটেলের বিস্তারিত তথ্য ও ভাড়া জেনে নেওয়া যাক—
হোটেল হিল হেভেন খাগড়াছড়ি
হোটেল হিল হেভেন খাগড়াছড়ি খুবই স্বল্প পরিসরে সাজানো-গোছানো আবাসিক হোটেল। এখানের কর্মী ও ব্যবস্থাপনাকারীরা অনেক বন্ধুসূলভ। হোটেল থেকেই গাইডসহ খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থানে যাবার ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এখানে খুবই কম খরচে ভাল মানের খাবারের সুবিধা আছে। বিশেষ দিনে বা সময়ে “ব্যুফে”-তে আকর্ষণীয় সব খাবার খেতে পারবেন।
- ভাড়া: ১,৫০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকা
- ঠিকানা: সরকারি মহিলা কলেজ রোড, খাগড়াছড়ি সদর
হোটেল গাইরিং
হোটেল গাইরিং খাগড়াছড়ির বেশ জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক মানের হোটেল। বিদেশী ধাচের নকশায় করা হোটেলটির সারা প্রাঙ্গন জুড়ে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এখানে ১০০ জনের অনুষ্ঠান করার মত কনফারেন্স রুম আছে। হোটেল থেকে সরাসরি সুন্দর পাহাড় দেখা যায়। হোটেলের ছাদের রেস্তোরায় বাঙালি, বিদেশী ও পাহাড়ি সবরকমের খাবারের ব্যবস্থা আছে। এখানে হানিমুন স্যুট ও ফ্যামিলি রুমসহ মোট আট প্রকার বিলাসবহুল রুম ভাড়া নেয়া যায়।
- ভাড়া: ১,৫০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা
- ঠিকানা: কোর্ট রোড, মিলনপুর, খাগড়াছড়ি সদর
হোটেল হিল প্যারাডাইজ
বেশ বড় আকারের ক্লাসিক ধারার রুমে সাজানো হোটেল হিল প্যারাডাইজ। এখানে দরজা, জানালা ও আসবাবপত্রে কাঠের রাস্টিক আর্টের নকশা দেখতে পাবেন। খাগড়াছড়ি মূল শহরের মধ্যভাগেই এই হোটেল। থাকার জন্য গোলাপী রঙে মোড়ানো বিভিন্ন ধরনের রুম পাবেন। হোটেলটি নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
- ভাড়া: ১,৫০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা
- ঠিকানা: সেলিম বিপণন কেন্দ্র, খাগড়াছড়ি
পর্যটন মোটেল
সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খাগড়াছড়ির পর্যটন মোটেলের গ্রাহক সুবিধা বেশ প্রশংসাজনক। শহরে ঢোকার পথে নদী পার হবার পরই মোটেলটি খুঁজে পাবেন। বিভিন্ন আকারের রুমের পাশাপাশি এখানে ১২০ জনের অনুষ্ঠান করার মত কনফারেন্স রুম আছে। এখান থেকে সহজেই সাজেক ভ্যালী ও খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। মোটেলের পাশেই নানা রঙে রাঙানো কাঠের ব্রিজ, লেক আর পাহাড় রয়েছে।
- ভাড়া: ২,০০০ টাকা থেকে ৫,৫০০ টাকা
- ঠিকানা: চেঙ্গিজ সেতু, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়ক, খাগড়াছড়ি
হোটেল ইকোছড়ি ইন
খাগড়াছড়ি মূল শহর থেকে মাত্র ২.৮ কিলোমিটার দূরেই হোটেল ইকোছড়ি ইন। একটা উঁচু টিলার উপরে থাকা এই হোটেল খুবই সাধারণ ও ছিমছাম ভাবে সাজানো। এখানে প্রাকৃতিক আলোতে বসে গল্প করার জন্য কাঁচের দেয়ালে ঘেরা লাউঞ্জ আছে। হোটেলের সাথেই একটা রেস্তোরা আর কয়েকশ’ মিটার দূরে টেনিস খেলার মাঠ আছে। কোলাহল পছন্দ করেনা এমন মানুষদের জন্য হোটেলটি সেরা পছন্দের একটি হতে পারে।
- ভাড়া: ১,৫০০ টাকা থেকে ২,২০০ টাকা
- ঠিকানা: পূর্ব প্রবেশপথ, খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট
হোটেল শৈল সুবর্ণা
হোটেল শৈল সুবর্ণাকে পাহাড় ও জঙ্গলের মিলনমেলা বলা যায়! এখান থেকে সম্পূর্ণ খাগড়াছড়ির অনেক অংশ একসাথে দেখা যায়। মান অনুযায়ী তেমন বিলাসবহুল না হলেও এখান থেকে বিভিন্ন স্থানে সহজে যেতে পারবেন। যারা কম খরচের হোটেল খুঁজছেন তারা অনায়াসে এখানে থাকতে পারেন।
- ভাড়া: ১,০০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা
- ঠিকানা: বাজার রোড, খাগড়াছড়ি
দীঘিনালা গেস্ট হাউজ
বাস টার্মিনালের একেবারে কাছেই দীঘিনালা গেস্ট হাউজ। এখানে সাশ্রয়ী খরচের মধ্যেই আসবাবপত্র-সহ রুম পাওয়া যায়। হোটেলে কঠোর নিয়মকানুনের জন্য কোনোরকম অসামাজিক কর্মকান্ড হবার সুযোগ নেই। মাঝারিমানের থাকার জায়গা খুঁজলে দীঘিনালা গেস্ট হাউজ আপনার জন্য ভাল হবে।
- ভাড়া: ৭০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা
- ঠিকানা: দীঘিনালা বাস স্ট্যান্ড, খাগড়াছড়ি
হোটেল নূর রেসিডেন্সিয়াল
খাগড়াছড়ির টাউন হলের আমিন মার্কেটের সামনে গেলেই হোটেল নূর রেসিডেন্সিয়াল-এর দেখা পাবেন। কম খরচেই গোছগাছ হোটেলটিতে থাকা যায়। হোটেল হলেও এর ভিতরে বাসার ড্রয়িং রুমের মত বিভিন্ন আসবাবপত্র সাজিয়ে রাখা থাকে। এখানে গাড়ি রাখার পার্কিংসহ কম খরচে উন্নত হোটেলের সকল সুবিধা পাবেন।
- ভাড়া: ১,৫০০ টাকা থেকে ৫,৫০০ টাকা
- ঠিকানা: আমিন মার্কেট (শাপলা চত্বরের কাছে), টাউন হল, খাগড়াছড়ি
হোটেল শিল্পী
মোটামুটি খরচে থাকার জন্য হোটেল শিল্পী-তে উঠতে পারেন। এখানে রুমগুলো বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। একজন, দুজন বা একাধিক মানুষ থাকার জন্য ভিন্ন-ভিন্ন মানের রুম আছে। হোটেলে থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থাও আছে। গাড়ি পার্কিংসহ এখানে উন্নত হোটেলের সাধারণ সকল সুবিধা পাবেন।
- ভাড়া: ১,৩০০ টাকা থেকে ২,৮০০ টাকা
- ঠিকানা: দীঘিনালা সড়ক, চ্যাংরাছড়ি, চট্টগ্রাম
গিরি থেবার রিসোর্ট
গিরি থেবার খাগড়াছড়ির অন্যতম নিরাপত্তাবেষ্টিত হোটেল ও রিসোর্ট। খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্টের ঠিক ভিতরে রিসোর্টটি খুঁজে পাবেন। সময় কাটানোর জন্য রিসোর্টের সামনে বড় সুইমিং পুল ও নকুজে ঘেরা উদ্যান আছে। এখানে প্রায় সব রুমই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। একজন ও দুজন থাকার জন্য আলাদা রুম এবং আরাম আয়েশে থাকার জন্য ভিআইপি রুমের ব্যবস্থা আছে।
- ভাড়া: ১,৩০০ টাকা থেকে ২,৮০০ টাকা
- ঠিকানা: খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট
খাগড়াছড়িতে হোটেল ভাড়া করতে কি কি লাগবে?
সাধারণত হোটেল ভাড়া করতে বিশেষ কোনোকিছুর দরকার হয়না। কিন্তু আপনার ও জনসাধারণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হোটেল কর্তৃপক্ষ কিছু বিশেষ তথ্য ও কাগজপত্র চাইবে। কোনো ধরনের সমস্যা হলে এই তথ্যের মাধ্যমে হোটেল ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আপনাকে সহযোগিতা করতে পারবে।
হোটেল কর্তৃপক্ষকে যেসব তথ্য ও কাগজপত্র দিতে হবে—
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- বাস, ট্রেন অথবা বিমানের টিকেটের ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি
- হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী ফর্মের ফটোকপি
- অগ্রিম কিছু ভাড়া
- বিদেশীদের জন্য পাসপোর্টের ফটোকপি
- সচল মোবাইল ফোন নম্বর
- বর্তমান নাম ও ঠিকানা
- খাগড়াছড়ি ভ্রমণের যৌক্তিক কারণ
- অগ্রিম ভাড়া নিলে ইমেইল বা ফর্মের ফটোকপি
যেসব সাবধানতা বজায় রাখতে হবে—
অনেকসময় পারিবারিক অনুষ্ঠানে বা ব্যবসায়িক কারণে হঠাৎ করেই খাগড়াছড়ি যাওয়া লাগতে পারে। কিন্তু দেখে শুনে হোটেল না নিলে অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। তাই হোটেল ভাড়া নেয়ার সময় বিশেষ কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে—
- হোটেলর নিরাপত্তা দেখা: পাহাড় অঞ্চলে প্রায়শঃই সন্ত্রাসী, ডাকাত, অপহরণকারীর উপদ্রব দেখা যায়। তাই হোটেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন আগে দেখে নেবেন। নিরাপত্তা কর্মীরা কতটা তৎপর সেটাও খোঁজ নেবেন।
- নিচতলার রুম না নেওয়া: হোটেলের নিচতলায় শব্দ, মশা, এসবের উৎপাৎ বেশি থাকে। নিচতলার জানালা গুলো চোর-ডাকাতের নাগালের মধ্যে থাকে। তাই কখনোই নিচতলার রুম ভাড়া নেওয়া উচিৎ না।
- ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দেওয়া: হোটেল কর্তৃপক্ষকে কোনো আপনজনের ফোন নম্বর দিয়ে রাখতে পারেন। কোনো বিপদে পড়লে বা ফোন হারিয়ে গেলে তারা আপনার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে। আবার হোটেলের ঠিকানা ও ফোন নম্বর আপনজনকে জানিয়ে রাখবেন।
- সামাজিক মাধ্যমে সচেতন থাকা: স্থানীয় কারো গোপনীয়তা নষ্ট করে ছবি-ভিডিও তুলবেন না। আবার কাউকে নিজের বর্তমান লোকেশন জানাবেন না। নির্জন এলাকা হওয়ায় শত্রুতাবশঃত যে কেউ আপনার ক্ষতি সাধন করতে পারে।
- জিনিসপত্র সাবধানে রাখা: রুম পরিষ্কার করার সময় নিজের ব্যক্তিগত জিনিসে নজর রাখবেন। আবার রুমে কোথাও লুকানো ক্যামেরা আছে কিনা যাচাই করবেন।
যখন খাগড়াছড়ি ভ্রমণে গেলে সহজে ভাল মানের হোটেল পাওয়া যাবে
শীতের মৌসুমে খাগড়াছড়িতে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাই অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে হোটেলে জায়গা পাওয়া আর যুদ্ধ করা একই কথা! এসময় ভ্রমণে গেলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনে যাবার চেষ্টা করবেন। সবচেয়ে ভাল হয় শেয়ারট্রিপের মত কোনো বিশ্বস্ত মাধ্যম থেকে হোটেল খুঁজে ভ্রমণ করা।
আপনার খাগড়াছড়ি ভ্রমণকে আরও সুন্দর করুন শেয়ারট্রিপের সাথে!
মনে রাখবেন, খাগরাছড়ির দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে আপনার কমপক্ষে ৩ দিন সময় লাগবে। তাই লম্বা সময় থাকার মত পরিবেশ আছে এরকম হোটেল খুঁজে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। চাইলে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে সহজে খাগড়াছড়ির হোটেল বুক করতে পারেন।
শেয়ারট্রিপের ভ্রমণ প্যাকেজে অফার-সহ যাতায়াত করা এবং ভালো মানের হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন। আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন https://sharetrip.net/ অথবা ডাউনলোড করুন শেয়ারট্রিপ অ্যাপ। যেকোনো প্রয়োজনে মেইল করুন vacation@sharetrip.net -এ অথবা শেয়ারট্রিপ হটলাইন +8809617617617-এ কল করে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন।