ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং নান্দনিক আয়োজনে পরিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় অন্যতম একটি দেশ মালয়েশিয়া। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া’র এই দেশটি প্রায় সারা বছরই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। বাংলাদেশি ভ্রমণপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় মালয়েশিয়া বরাবরই প্রথম সারিতে রয়েছে , আর সেটা বোঝা যায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া-তে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা দেখে। টুরিজম মালয়েশিয়া বাংলাদেশ-এর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ ভ্রমণের উদ্দেশ্য মালয়েশিয়া ট্রাভেল করেছেন। পেট্রোনাস টাওয়ার, গেনটিং হাইল্যান্ড, লংকাওয়ে-এর মতো জমজমাট টুরিস্ট স্পট দেখতে হাজারো মানুষের ছুটে আসাটাই স্বাভাবিক। তবে ব্যবসায়-বাণিজ্য, চাকরি, ভ্রমণ কিংবা কিছুদিনের অবসর যাপন - যে উদ্দেশ্যেই মালয়েশিয়া যান না কেন, প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো ভিসা। অনেক সময় ভিসা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় পুরো প্রসেসটিই হয়ে পড়ে জটিল এবং দীর্ঘ। তাই আপনার মালয়েশিয়া ট্রিপ-এর ভিসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে থাকছে আমাদের আজকের ভিসা গাইডটি।
মালয়েশিয়া ভ্রমণের জন্য কোন ভিসাটি বেছে নিবেন
মালয়েশিয়ান এম্বাসি থেকে কয়েক ধরণের ভিসা ইস্যু করা হয় ,যেমন-
- মালয়েশিয়া টুরিস্ট ভিসা
- মালয়েশিয়া মেডিকেল ভিসা
- মালয়েশিয়া এমপ্লয়মেন্ট ভিসা
- মালয়েশিয়া বিজনেস ভিসা
- মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা ইত্যাদি।
এই ভিসাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো টুরিস্ট ভিসা। ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেকোনো বাংলাদেশি খুব সহজেই টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
মালয়েশিয়া ভিসা কী কী ধরণের হয়ে থাকে
দুই ধরণের ভিসার মাধ্যমে আপনি মালয়েশিয়া ভ্রমণ করতে পারেন- সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা এবং মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা।বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে সঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা ( Single Entry Visa or SEV)। ভিসাটি একবার এন্ট্রির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটির মেয়াদ থাকছে ইস্যু করার তারিখ থেকে তিন (3) মাস পর্যন্ত। তবে তিন মাসের মধ্যে ভিজিট করতে না পারলে আপনাকে নতুন করে ভিসার আবেদন করতে হবে। সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার ক্ষেত্রে নুন্যতম একটি দেশ ( ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাদে) ভ্রমণের সিল থাকা প্রয়োজন, তবে উপযুক্ত কাগজপত্রের ভিত্তিতে এটি শিথিলযোগ্য।
মালয়েশিয়া ভিসার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
বেসিক ডকুমেন্ট
আপনার পেশা যেটাই হোক, পারপাস নির্বিশেষে মালয়েশিয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে ডকুমেন্টগুলো অবশ্যই প্রয়োজন, তা হলো-
পাসপোর্ট
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, তথা বিশ্বের যেকোনো দেশে ভ্রমণ করতে প্রথমেই আপনার প্রয়োজন একটি বৈধ পাসপোর্ট। পাসপোর্ট জমা দেওয়ার আগে লক্ষ্য রাখবেনঃ
- পাসপোর্টের মেয়াদ অবশ্যই ছয় মাস বা তার বেশি হতে হবে
- ভিসা ও ইমিগ্রেশন সিলের জন্য পাসপোর্টে পরপর ৩ টি ফাঁকা পাতা থাকতে হবে
- যদি পুরানো পাসপোর্ট থেকে থাকে, তবে সেটিও নতুন পাসপোর্টের সাথে জমা দিতে হবে
- পাসপোর্টের ফটোকপি (যে পৃষ্ঠাতে আপনার ব্যক্তিগত বিবরণ রয়েছে এবং আগে কোনো পাসপোর্ট থাকলে সেটির বিবরণ )
ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম ও ছবি
মালয়েশিয়া হাই কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে আপনি ভিসা আবেদনপত্র ডাউনলোড (https://www.kln.gov.my/web/bgd_dhaka/forms) করে নিতে পারেন। ফর্মটি পূরণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেনঃ
- ফর্মটি ব্লক লেটার দিয়ে পূরণ করতে হবে এবং
- ভিসা আবেদনপত্রে অবশ্যই আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকতে হবে
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা সাম্প্রতিক ২ কপি ছবি লাগবে। ছবির সাইজ হবে 35 মিমি X 50 মিমি এবং তা অবশ্যই স্টুডিও প্রিন্ট হতে হবে। ছবি অবশ্যই ম্যাট পেপারে প্রিন্ট হতে হবে।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে ভিসা এপ্লিকেশনের সময় ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবেঃ
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে
- অবশ্যই ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর অরিজিনাল কপি জমা দিতে হবে
- একা ভ্রমণের ক্ষেত্রে কারেন্ট ব্যালেন্স মিনিমাম ৬০,০০০ টাকা থাকতে হবে
- ফর্মটি ব্লক লেটার দিয়ে পূরণ করতে হবে এবং
- ভিসা আবেদনপত্রে অবশ্যই আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকতে হবে
- ব্যাংক তার গ্রাহকের সাথে লেনদেনের ভিত্তিতে একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়ে থাকে, এটিই ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট। অবশ্যই ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটের মূল কপি জমা দিতে হবে।
ভিসা রিকোয়েস্ট লেটার
সকল আবেদনকারীকে ভিসা অফিসার (VO) বরাবর একটি ভিসা রিকোয়েস্ট লেটার লিখতে হবে। লেটার-এ অবশ্যই পাসপোর্ট নাম্বার, ডেস্টিনেশন, স্পন্সর ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।
হোটেল বুকিং কপি এবং এয়ার টিকেট বুকিং কপি
মালয়েশিয়াতে আপনি যে হোটেলে থাকবেন সেটির বুকিং কপি ভিসা আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। শুধু বুকিং কপিটি হলেই হবে, কনফার্মেশনের প্রয়োজন নেই। আপনার ভিসা হয়ে গেলে তারপর আপনি হোটেল বুকিং কনফার্ম করতে পারেন।এর সাথে প্রয়োজন ঢাকা-মালয়েশিয়া-ঢাকা এয়ার টিকেটের বুকিং কপি। এক্ষেত্রেও টিকেটের বুকিং কপি জমা দিলেই চলবে, কনফার্মেশনের প্রয়োজন নেই। হোটেল বুকিং এবং এয়ার টিকেটের জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন।
পেশা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
যেকোনো দেশের ভিসার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভ্রমণকারীর পেশা একটি গুরুত্তপূরণ ব্যাপার, কেননা পেশা অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট ডোকুমেন্ট প্রয়োজন। সেজন্য কোন পেশার ক্ষেত্রে কোন কোন ডকুমেন্ট আবশ্যক, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
ব্যবসায়ী
আপনি যদি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন, তবে ভিসা এপ্লিকেশনের সাথে আপনাকে নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলো জমা দিতে হবেঃ
- ট্রেড লাইসেন্স কপি ( ইংরেজিতে অনুবাদিত)
- লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে স্মারকলিপি (Memorandum of Article)
- অফিসের প্যাডের ফাঁকা পাতা ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদি।
চাকুরিজীবী
চাকুরিজীবীদের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে একটি অত্যাবশ্যক ডকুমেন্ট হলো NOC (No Objection Certificate) আপনার কোম্পানি যে আপনাকে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দিচ্ছে তা প্রমাণের জন্য NOC অবশ্যই নিতে হবে। তাছাড়া, এটি এম্বাসির কাছে আপনার আবেদনটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে এবং ভিসাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলবে। NOC উত্তোলনের সময় যে বিষয়গুলো নিশ্চিত করবেন, তা হলোঃ
- এটি কোম্পানির প্রতিনিধি, অর্থাৎ উক্ত কোম্পানির এইচ আর দ্বারা লিখিত হতে হবে
- এটি কোম্পানির প্যাডে থাকতে হবে
- NOC-তে আপনার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ভ্রমণ ডেস্টিনেশান ইত্যাদির স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।
আপনি যদি আইনজীবী হয়ে থাকেন, তবে বার কাউন্সিল সার্টিফিকেট এবং ডাক্তার হয়ে থাকলে বিএমডিসি সার্টিফিকেট সংযুক্ত করতে হবে।
ছাত্র/স্টুডেন্ট
আপনি যদি পেশায় একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তবে নিম্নোক্ত ডোকুমেন্টগুলো প্রয়োজনঃ
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নো অবজেকশান সার্টিফিকেট
- প্রতিষ্ঠানের রেকমেন্ডেশন লেটার ইত্যাদি
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট কপি (ডবল ডোজ)
- ভিজিটিং কার্ড ( চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে)
- ম্যারেজ সার্টিফিকেট ( ফ্যামিলিসহ ট্রাভেলের ক্ষেত্রে)
- সন্তানসহ ট্রাভেলের ক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম নিবিন্ধন ( Birth Certificate) কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র ( NID)।
মালয়েশিয়া-তে মেডিকেল ভিসা
উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা নিতে অনেকেই মালয়েশিয়া ভ্রমণ করছেন। মেডিকেল আবেদন করতে সাধারণ ভিসার ডকুমেন্টগুলো, যেমনঃ ভ্যালিড পাসপোর্ট, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট ইত্যাদি লাগবে। পাশাপাশি, আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লাগবে, তা হলোঃ
- মালয়েশিয়ান হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার
- বাংলাদেশি ডাক্তারের রেকমেন্ডেশন লেটার
- রোগীর পূর্বের কোনো ডকুমেন্ট, যেমনঃ টেস্ট রিপোর্ট, অন্যান্য মেডিকেল রিপোর্ট ইত্যাদি।
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদনে আপনার জন্য আছে শেয়ারট্রিপ !
দেশের টপ অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি, শেয়ারট্রিপ আপনাকে দিচ্ছে মালয়েশিয়া ভিসা প্রসেসিং-এর সব সহায়তা। ভিসা আবেদন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট রিটার্ন করা পর্যন্ত সব ক’টি ধাপেই আপনাকে গাইড করতে রয়েছে আমাদের দক্ষ ভিসা টীম। পাশাপাশি, শেয়ারট্রিপ দিচ্ছে ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটের বেস্ট ফ্লাইট রেট। শুধু তা-ই নয়, শেয়ারট্রিপ-এ আপনি পাবেন মালয়েশিয়াতে বেস্ট রেটে আপনার পছন্দের হোটেলে থাকার সুযোগ এবংপছন্দসই নানা আকর্ষণীয় প্যাকেজ।
ভিসা ফিঃ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন ফি ৫,৩০০ টাকা (অফেরতযোগ্য)
ডেলিভারির সময়ঃ ৭ থেকে ১০ কার্যদিবস
ভিসার মেয়াদঃ ৩০ দিন
ভিসার টাইপঃ টুরিস্ট, একক প্রবেশ
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পূর্ব বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ভিসার রেট পরিবর্তির হতে পারে
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভিসা প্রদানের অধিকার মালয়েশিয়া দূতাবাস দ্বারা সংরক্ষিত
ভিসা সংক্রান্ত যেকোন তথ্য পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট www.sharetrip.net অথবা ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল অ্যাপ। ট্রাভেল সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য ই-মেইল করুন vacation@sharetrip.net ঠিকানায় অথবা কল করতে পারেন আমাদের হটলাইন নম্বর +৮৮-০৯৬১৭৬১৭৬১৭-এ।