মাল্টার ভিসা আবেদন করতে চাচ্ছেন? শেয়ারট্রিপের এক্সপার্ট ভিসা অ্যাসিস্ট্যান্স আছে আপনার সাথে!
ভ্রমণার্থীরা ভূমধ্যসাগরের দ্বীপগুলোর মধ্যে মাল্টা-কে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। এখানে একই সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘাটি, খ্রীস্টান ও মুসলিমদের ঐতিহাসিক নাইট টেম্পল ও দারুণ সব প্রাকৃতিক নিদর্শন দেখা যায়। ইতালি থেকে মাত্র ৯৩ কিমি দূরে হবার কারণে অনেকে মাল্টা ঘুরে ইতালি ঘোরার স্বাদ নেয়। আমাদের আজকের গাইড পড়লে আপনিও মাল্টার ভিসা আবেদন করে সহজে ঘুরে আসতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে মাল্টা ভ্রমণের সেরা মৌসুম, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ও সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো জেনে নিই।
যেভাবে মাল্টা ভ্রমণ করবেন
বছরের যেকোনো সময় মাল্টা ঘুরে আসা যায়। বাংলাদেশ থেকে ৫টি এয়ারলাইন্স সরাসরি ফিরতি টিকেটসহ মাল্টার টিকেট বিক্রয় করে। এরা হলোঃ
শেয়ারট্রিপের ফ্লাইট পেজ থেকে নির্দিষ্ট দিনের অগ্রিম টিকেট বুক করতে পারবেন। এয়ারলাইন্স অনুযায়ী ইকোনমি ক্লাসে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও বিজনেস ক্লাসে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। তবে টিকেট বুক করার আগে আপনাকে ভ্রমণ মৌসুম ও ভিসা আবেদনের নিয়ম জানতে হবে।
মাল্টা যাবার সেরা সময়
মাল্টাতে সারা বছরই সূর্যের আলো পাবেন। এখানে মোটামুটি রকমের বৃষ্টি হয়। শীতে তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও গরমে সর্বোচ্চ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে আবহাওয়া খুবই শুকনো থাকে। তাই কাঁদামাটি এড়িয়ে যেতে চাইলে এসময় যেতে পারেন। আবার মে থেকে অক্টোবরে সুইমিং সিজন থাকে। তাই লেক, সমুদ্র বা নদীতে সাঁতার কাটার ইচ্ছা থাকলে এসময় যেতে হবে।
মাল্টা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
একটা সময় ইন্ডিয়াতে গিয়ে মাল্টার ভিসা প্রসেসিং করতে হতো। কিন্তু এখন ভিএফএস গ্লোবাল ও শেয়ারট্রিপের মত প্ল্যাটফর্ম ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া অনেক সহজ করে দিয়েছে। বাংলাদেশিরা স্টাডি ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা ও ইমিগ্রান্ট ভিসার মাধ্যমে মাল্টা ঘুরতে পারবে। এছাড়া ইওরোপীয় শেনজেন ভিসা থাকলে কোনো রকমের কষ্ট ছাড়াই যেকোনো সময় মাল্টা ভ্রমণ করা যায়।
যেভাবে মাল্টার ভিসা আবেদন করবেনঃ
শেয়ারট্রিপের মাল্টা ভিসা আবেদন পেজ থেকে সহজেই দক্ষ সহায়তাকারীরর মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং সম্পূর্ণ করতে পারবেন। এছাড়া visa@sharetrip.net-এ মেইল করে কি কি ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে জেনে নিতে পারেন। এতে সবকিছু জমা দেবার পর শেয়ারট্রিপ আপনার ভিসার সব ব্যাবস্থা করে দিবে।
মাল্টা ভিসা পেতে যা যা লাগতে পারেঃ
- স্বাক্ষরসহ মাল্টা ভ্রমণের আবেদন পত্র
- সম্প্রতি তোলা রঙ্গিন ছবি (৩৫*৪৫ মিমি)
- কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদসহ পাসপোর্ট
- ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যেতে হলে জব অফার লেটার
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও কোভিড-১৯ সনদ
- কাজ বা ব্যাবসা দেখানোর জন্য প্রমাণপত্র
- দেশ থেকে নেওয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- ফ্লাইট বা ভ্রমণের সম্পূর্ণ বর্ণনা
- পর্যাপ্ত ব্যাংক ব্যালেন্সের প্রমাণ
মাল্টার সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
মাল্টাতে ইওরোপের রোমাঞ্চকর সকল স্থাপনা ও ঐতিহ্য দেখতে পারবেন। ছোট দেশ হবার কারণে গাড়ি ভাড়া করে সারা দ্বীপ ঘুরতে পারেন। এখানে মাল্টা, গোজো ও কোমিনো নামে তিনটি দ্বীপ রয়েছে। এসব স্থানে অনেক ধরনের গুহা ও শিপরেকের পাশাপাশি রাজধানী ভ্যালেট্টায় দেখার মত সব প্যালেস, মিউজিয়াম, পার্লামেন্ট ভবন, ব্লু লাগুন, ক্লাব ও রেস্তারা আছে। আমরা শত শত ভ্রমণ স্থানের ভিড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলোর তালিকা তৈরি করেছি।
মাল্টার সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান হলোঃ
১. রেক্কা পয়েন্ট
গোজো দ্বীপের এক প্রান্তে জনমানবহীন জয়গা রেক্কা পয়েন্ট। সরু পাহাড়ি রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হয় এখানে। সমুদ্রের তীরে গেলেই পাথরের দেয়ালের গায়ে আঁচড়ে পড়া ঢেউ দেখা যায়। সমৃুদ্র সৈকতের মত কোনো বালুভূমি পাবেন না এখানে । তার বদলে সমুদ্রে খাড়া পাথুরে ঢাল নেমে যেতে দেখবেন। অ্যাডভেঞ্চার লাভারদের জন্য এই ক্লিফগুলো দারুণ অনুভূতি দেবে। অনেকেই ক্লিফ থেকে নিচে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়তে দেখা যায়। পানিতে ঝাপ দেবার পর অনেক রঙচঙে মাছের ঝাঁক দেখতে পারবেন। তবে অবশ্যই সাবধানতা বজায় রাখতে হবে। এই এলাকাতে প্রচন্ড রোদ থাকে তাই সাথে অক্সিজেন মাস্ক ও সান-স্ক্রিন রাখতে ভুলবেন না।
২. ক্যাথিড্রাল কেভ
গহীন গুহার মধ্যে বিচরণ করতে ভাল লাগলে ক্যাথিড্রাল কেভ আপনার জন্য সেরা জায়গা। গোজো দ্বীপের এক প্রান্তে রয়েছে এই জনমানবহীন গুহা। কিন্তু সহজে এখানে যেতে পারবেন না। গুহার মুখ সমুদ্রের ভিতরে অবস্থিত। তাই আবারো ডাইভিং স্যুট নিয়ে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ে এখানে যেতে হবে। গুহা দেখে বের হয়ে পাশেই নিচু জমিতে হাইকিং করতে পারবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এখানে ব্রিটেন, আমেরিকা ও সোভিয়েট নৌবাহিনীর ঘাটি ছিল। ধারণা করা হয় তাদের কেউ লুকানো এই গুহা আবিষ্কার করেছিল।
৩. শিপরেক
মাল্টা ও গোজো দ্বীপের মধ্যখানে কোমিনো নামের আরেক দ্বীপে সমুদ্রের গভীরে এক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আছে। ২০০৬ সালে প্রায় ৭ তলা বাড়ির সমান জাহাজটি এখানে ডুবে যায়। এখানে ডাইভিং করতে নামলে টাইটানিক সিনেমার মতই জাহাজের বিভিন্ন জিনিস দেখতে পারবেন। একবার পানির গভীরে নামা শুরু করলে পানির ঘনত্বের কারণে আস্তে আস্তে দৃষ্টি ঘোলাটে ও নীলচে হয়ে যাবে। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের ঝাক ও লতাপাতার মধ্য দিয়ে জাহাজের ভিতরে ঢুকে টর্চ দিয়ে ভাঙা জিনিসপত্র দেখতে পারবেন।
৪. কোমিনো দ্বীপ
৩.৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট দ্বীপ কোমিনো। এখানে সাধারণ জনবসতি নেই, তবে ফেরীতে করে মাল্টা থেকে আসা ভ্রমণার্থীরা এখানকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করে। এখানে গাড়ি প্রবেশের কোনো অনুমতি না থাকলেও বিশ্রাম নেওয়া ও থাকার জন্য একটি হোটেল পাবেন। হোটেল থেকে সাদা বালি ও স্বচ্চ পানির ব্লু লাগুন দেখে আসা যায়। অনেক দর্শনার্থী ছবি তুলতে এখানে আসে।
৫. ভ্যালেট্টা
মাল্টার রাজধানী ভ্যালেট্টা। ১৯৮০ সালে ভ্যালেট্টাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়। ইওরোপের সবচেয়ে ছোট রাজধানী হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই শহরকে। এখানে নাইট হসপিটালারদের তৈরি অনেকরকম ক্যাথেড্রাল আর ফোর্টের দেখা মিলবে। বারাকা গার্ডেন নামে এক সুন্দর বাগানও আছে। বাগান থেকে প্রতিদিন অটোম্যানদের বিরুদ্ধে বিজয়ের স্মৃতি হিসেবে কামানের গোলাবর্ষণ দেখা যায়। এছাড়া সেইন্ট জন কো ক্যাথেড্রালে যেতে পারবেন। ক্যাথেড্রালের সারা দেয়াল ও সিলিংয়ে ক্লাসিক সব পেইন্টিং দেখবেন। সবশেষে ভ্যালেট্টার পার্লামেন্ট ভবন দেখেও আপনার ভাল লাগবে। বাতাসে দুটি পাথর ভেসে আছে এমন নকশার বিল্ডিংটি বেশ গা শিরশিরে অনুভূতি দেয়।
৬. রাবাত ও মদিনা
লাল গম্বুজের এই ক্যাথেড্রালকে মাল্টার ইতিহাসের প্রতীক বলা যায়। এখানে মার্বেলের ফ্লোর, কামান, পুরনো মুদ্রার সংগ্রহ, রোমান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আপনাকে কয়েক শতাব্দী পিছনে নিয়ে যাবে। এছাড়া ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে বিলুপ্তপ্রায় পাখির বাসা, মাছ ও পাথরসহ নানারকম প্যাঁচানো টানেল দেখতে পারবেন। আবার রাবাত-এ প্রাচীন রোমান সমাধি ক্ষেত্র আছে। এখানে সেইন্ট পল ও সেইন্ট অগাঁথা এর বিখ্যাত ক্যাটাকম্ব দেখা যায়।
৭. মেল্যিনা
মাল্টার উত্তর পশ্চিমে মেল্যিনা নামের একটা ছোট্ট শহর রয়েছে। কয়েকটা পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই শহর দেখতে অনেকটা গ্রামের মত। এখানে গোল্ডেন বে ও গাদিরা বে নামে দুটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত আছে। একসময় এখানে প্রচুর জলদস্যুরা বিচরণ করতো। তাদের প্রতিহত করতে রেড ফোর্ট নামে বেশ কয়টি দুর্গ তৈরি করা হয়। এখানে একটা পুরনো গুহার মধ্যে মেরি ও যীশুর প্রাচীন একটি ছবি আছে। এসবকিছুর পাশাপাশি অনেকরকম পাখি দেখার জন্য এখানে ন্যাচার রিজার্ভ নামে একটা অভয়ারণ্য আছে।
৮. সেইন্ট জুলিয়ান সিটি
আধুনিক মাল্টা উপভোগ করতে হলে আপনাকে সেইন্ট জুলিয়ান সিটিতে আসতে হবে। এখানে সময় কাটানোর জন্য অভিজাত সব হোটেল, রেস্তারা ও ক্লাব খুঁজে পাবেন। ক্যাফেতে ব্রেকফাস্ট সেরে এরপর পায়ে হেঁটে শহর দেখা শুরু করতে পারেন। এখানে স্পিনোলা বে নামের এক সৈকতে একটা লাভ মনুমেন্ট আছে। পানির প্রতিচ্ছবিতে ইংরেজিতে ‘LOVE’ লেখা দেখতে এবং সেটির সাথে ছবি তুলতে অনেকে এখানে যায়।
৯. হাগার কিম
হাগার কিম হলো একটা মেগালিথিক মন্দির। ধারণা করা হয় এখানকার স্থাপনা গুলো পিরামিডের চেয়েও অনেক আগে নির্মিত হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট কমিটি এটাকে ‘ইউনিক আর্কিটেকচারাল মাস্টারপিস’ ঘোষনা করে।
১০. গ্র্যান্ড মাস্টার্স প্যালেস
ষোড়শ ও অস্টাদশ শতাব্দীর দিকে নির্মিত হয় গ্র্যান্ড মাস্টার্স প্যালেস। এটা একসময় ব্রিটিশ রয়্যাল রেসিডেন্ট হয় আর কুইন নিজে এখানে থাকতো। আবার ১৯২১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এটাকে মাল্টার পার্লামেন্ট ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখানকার ভিতরে ও বাইরে নানারকম ঔতিহাসিক নিদর্শন দেখতে পাবেন। যেমনঃ বড় ঘড়ি, পেইন্টিং, ফাউন্টেন লাইট, যোদ্ধাদের বর্ম ইত্যাদি। এছাড়া থ্রোন রুম নামে একটা কাউন্সিল হল আছে।
শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে মাল্টা ভিসা নিয়ে ঘুরে আসুন ইউরোপে!
ইওরোপের দর্শনীয় দেশগুলোর মাঝে মাল্টা যেন এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। যারা ইতোমধ্যে বালি, শ্রীলংকা বা ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করেছেন, তারা মাল্টা ভ্রমণের মাধ্যমে সমুদ্র সৈকত উপভোগের অভিজ্ঞতা আরো বেশ কয়েক ধাপ উপরে নিতে পারেন। বিশেষ করে স্কুবা ডাইভিং করে পানির নিচের জগৎ দেখার জন্য মাল্টা সেরা জায়গা। মাল্ট্রা ভ্রমণ ও ভিসা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সহায়তা পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েসাইট https://sharetrip.net, ইমেইল করুন vacation@sharetrip.net-এ এবং কল করুন +8809617617617 নম্বরে।