শেয়ারট্রিপের সাথে সিমলা-কুলু-মানালি ভ্রমণ এখন আরও সহজ!
হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণ না করলে হয়তো পৃথিবী দেখা বাকি রয়ে যাবে। দেবভূমি নামে পরিচিত ভারতের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি রাজ্য এই হিমাচল। এখানে একইসাথে বিশাল তৃণভূমি, বরফে মোড়ানো পাহাড়, খরস্রোতা নদী, বাগান, মন্দির, আশ্রম-সহ অনেক প্রাকৃতিক নিঃসর্গ দেখে আসা যায়। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই হিমাচলের সিমলা, কুলু বা মানালি ভ্রমণ করে থাকে। আজকের গাইডে জানতে পারবেন মানালির দর্শনীয় স্থান কি কি, কিভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন।
কিভাবে হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণে যাবেন?
হিমাচলের প্রধান আকর্ষণ যেহেতু কুলু মানালি, তাই সরাসরি বিমানে করে গেলে সময় বাঁচবে। ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন হয়ে থাকলে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে ঢাকা টু কুলু ফ্লাইট টিকেট নিয়ে কুলু এয়ারপোর্টে, অথবা ঢাকা টু দিল্লি ফ্লাইট বুক করে দিল্লি নেমে মানালি যেতে পারবেন। সাথে মানালি ভ্রমণ প্যাকেজ নিলে গাইড ও যাতায়াত সুবিধা-সহ মানালির সেরা পর্যটন স্থানগুলি একে একে ঘুরে শেষ করতে পারবেন।
মানালি ভ্রমণের খরচ ও সিমলা-কুলু-মানালি ভ্রমণ বর্ণনা
শেয়ারট্রিপের মানালি ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে সবচেয়ে কম খরচে মানালি ঘুরে আসতে পারবেন। ৩ থেকে ৯ দিনের বেশ কিছু ভ্রমণ প্যাকেজ পাবেন। এতে জনপ্রতি প্রায় ২২ হাজার থেকে ৪১ হাজার টাকার মধ্যে হিমাচল ও মানালির গুরুত্বপূর্ণ সব পর্যটন স্থান দেখে আসা যায়। এবার এক নজরে সেরা কিছু মানালি ভ্রমণ প্যাকেজ দেখে নেয়া যাকঃ-
৫ দিনের হিমাচল-মানালি ভ্রমণ প্যাকেজ
৫ দিনের প্যাকেজে প্রথমে দিল্লি থেকে মানালি যাবেন। সারাদিন হাড়িম্বা মন্দির, তিব্বতী আশ্রম, তাংখা ছবির দোকান, ক্লাব হাউজের মত জায়গা ঘুরবেন। এরপর কুফরিতে নানানরকম বিনোদন নিয়ে সিমলার শপিং মলে কেনাকাটা করে দিল্লিতে ফিরে আসতে পারবেন।
প্যাকেজে যেসব সুবিধা পাবেনঃ-
- হোটেলে সকালের নাস্তা ও ৪ রাত ৫ দিন থাকার ব্যবস্থা
- সকল ধরনের পার্কিং ফি, ট্যাক্সসহ সকল যাতায়াত খরচ
- যাত্রাপথে গাইড ও অভ্যর্থনাকারীর সহায়তা পাওয়া
যেসব হোটেলে থাকবেনঃ-
- স্নো পীক রিট্রিট (মানালি)
- ফেয়ারমাউন্ট হোটেল সিমলা (সিমলা)
৭ দিনের হিমাচল ভ্রমণ প্যাকেজ
৭ দিনের প্যাকেজে প্রথমে দিল্লি থেকে সিমলা গিয়ে পেঞ্জোর গার্ডেন ও টিম্বার ট্রেইল ঘুরে সিমলাতে আসবেন। এখানে ক্রাইস্ট চার্চ ও ভ্যালীতে ছবি তুলে পরেরদিন জাখু মন্দির ও কুফরিতে ঘুরবেন। এখানে গলফ খেলে বা ঘোড়ায় চড়ে পরের দুইদিন হাড়িম্বা মন্দির, ক্লাব হাউজ, তিব্বতি আশ্রম ইত্যাদি দেখবেন। পাশাপাশি রক ক্লাইম্ব, বাইক রাইড, প্যারাগ্লাইডের সাথে রাহালা জলপ্রপাত, রানী নাল্লা, নেহেরু কুন্ড এর মত দারুণ সব জায়গা দেখে নিতে পারবেন।
প্যাকেজে যেসব সুবিধা থাকবেঃ-
- হোটেলে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার এবং ৬ রাত ৭ দিন থাকার ব্যবস্থা
- সকল ধরনের পার্কিং ফি, ট্যাক্সসহ সকল যাতায়াত খরচ
- যাত্রাপথে গাইড ও অভ্যর্থনাকারীর সহায়তা পাওয়া
যেসব হোটেলে থাকবেনঃ-
- স্নো পীক রিট্রিট (মানালি)
- স্নো কিং রিট্রিট (সিমলা)
- হোটেল সান পার্ক (চন্ডিগড়)
- রিজেন্ট কন্টিনেন্টাল (দিল্লি)
-
৯ দিনের হিমাচল ভ্রমণ প্যাকেজ:
৯ দিনের প্যাকেজে দিল্লি থেকে সিমলা গিয়ে সেখানকার সবকিছু দেখবেন। পরেরদিন জাখু মন্দির, শিভালিক রেঞ্জেস, কুফরি দেখে সাইক্লিংসহ অনেকরকম এক্টিভিটি করবেন। এরপর কুলু শাল ফ্যাক্টরি ও বীয়াস নদী দেখে মানালি যাবেন। মানালিতে দুদিন ধরে হাড়িম্বা মন্দির, ক্লাব হাউজ, তিব্বতী আশ্রম ঘুরে দেখবেন। এই সুযোগে লাদাখের যাবার রাস্তায় রোথাং পাসের সৌন্দর্যও দেখে নিবেন। এরপর নেহেরি কুন্ড, রাহালা প্রপাত, রানী নল্লা দেখে পরেরদিন কুলু নগর দূর্গ, মণিকর্ণ দেখতে যাবেন। পরদিন মানালি থেকে চন্ডিগড় গিয়ে রক গার্ডেন, রোজ গার্ডেন, সুখনা লেখ ইত্যাদি দেখে দিল্লিতে ফিরতে পারবেন।
প্যাকেজে যেসব সুবিধা থাকবেঃ-
- হোটেলে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার এবং ৮ রাত ৯ দিন থাকার ব্যবস্থা
- সকল ধরনের পার্কিং ফি, ট্যাক্সসহ সকল যাতায়াত খরচ
- যাত্রাপথে গাইড ও অভ্যর্থনাকারীর সহায়তা পাওয়া
যেসব হোটেলে থাকবেনঃ-
- হোটেল সত্যম প্যারাডাইজ (সিমলা)
- হোটেল সত্যম প্যারাডাইজ (মানালি)
- হোটেল ডায়মন্ড প্লাজা (চন্ডিগড়)
এরকম আরো বেশ কিছু রকমের প্যাকেজ নিয়ে সুষ্ঠু নিরাপত্তা ও বিলাবহুল সব সুবিধা নিয়ে মানালি ঘুরে আসতে পারবেন।
মানালির দর্শনীয় স্থান
মানালিতে দেখার জন্য বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর জায়গা পাবেন। সনাতন ও শিখ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হবার জন্য এখানকার আইন শৃংখলা ব্যবস্থা খুবই ভালো। তাই প্রিয়জনের সাথে ঝুটঝামেলা ছাড়া একান্ত সময় কাটানো যায়। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের মানালির বিশাল পর্বতে হাইকিং ও স্নো বাইক চালানোর সুযোগ তো আছেই। চলুন এবার মানালির দর্শনীয় স্থানগুলোর মূল আকর্ষণ কি জেনে নেওয়া যাকঃ
মানালির সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
রোথাং পাস
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার মিটার উপরে অবস্থিত রোথাং পাস। আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এখানে যেত হয়। রাস্তার দুপাশে পড়ে তাকা বিশাল সব পাথরের খন্ড দেখবেন। আইস স্কেটিং করার জন্য এটা সেরা জায়গা। ডিসেম্বর থেকে জুন মাসে যাতায়াত বন্ধ থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই আগে থেকে খোঁজ নিয়ে যাওয়া ভাল।
সোলাং ভ্যালী
মানালীর মাত্র ১৪ কিমি দূরে সোলাং ভ্যালীর দেখা পাবেন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা এখানে প্যারাগ্লাইডিং, প্যারাসুটিং, স্কেটিং, বাঞ্জি জাম্পিং, জরবিং, ইত্যাদি করতে পছন্দ করে। বরফ দেখতে হলে অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে এখানে যেতে হবে। মেঘ বা কুয়াশা না থাকলে সোলাং ভ্যালী থেকে হিমালয়ের দূর্দান্ত দৃশ্য পাওয়া যায়।
মণিকর্ণ
ভারতের অন্যতম একটি তীর্থস্থান হচ্ছে মণিকর্ণ বা মানিকরন। এখানে অসংখ্য মন্দিরের পাশাপাশি গুরুদুয়ার ও মহাদেব মন্দিরের মত স্থাপনা আছে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ গরম বাষ্পের হট স্প্রিং। পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে কখন সময় চলে যাবে টেরই পাবেন না। হট স্প্রিংয়ে নিজেকে শুদ্ধ করার সাথে মসলিন কাপড়ে ভাত রান্না ও ট্র্যাকিং করে সময় কাটাতে পারবেন।
বনবিহার
মানালির সেরা বাগানগুলোর মধ্যে বন বিহার একটি। বিশাল গাছগাছালির মাঝে পিকনিক করতে অনেকেই এখানে যায়। এখানে সারাক্ষণ অল্প আওয়াজে সুরেলা গান হতে থাকে। মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে গেলে বিভিন্ন রকম পাখি, ফল ও ফুলের গাছ দেখার সৌভাগ্য হয়। এই পার্কের একেবারে কাছেই বীয়াস নদী আর তিব্বতী মার্কেট আছে।
রাহালা জলপ্রপাত
রোথাং পাসের ফিরতি রাস্তায় রাহালা জলপ্রপাতের দেখা মিলে। হিমালয়ের হীম ঠান্ডা বরফ গলে সেই পানি এখানে এসে পৌছায়। আশেপাশে অনেক দেবদারু ও অন্যান্য বড় গাছ দেখতে পাবেন। ফটোগ্রাফারদের জন্য রাহালা জলপ্রপাতকে স্বর্গ বলা যায়। শহুরে জীবন ছেড়ে একেবারে নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে বেড়ানোর জায়গা এটি।
বীয়াস নদী
মানালি শহরের রাস্তার সাথে সমানভাবে এগিয়ে চলেছে বীয়াস নদী। এটি লম্বায় ৪৭০ কিমি। গ্রীক শাসক আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত চলে গিয়েছে এই নদী। এখানে রিভার র্যাফটিং, বাইকিং, সাইক্লিং আর ট্র্যাকিং করে সময় কাটানো যায়। নদীর তীর থেকে কাছেই হিমাচল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেখার জন্য একটা জাদুঘর আছে।
কুলু
মানালির অন্যতম পাহাড়ি রাজ্য কুলু। এখানে মহাদেব মন্দির, বৈষ্ণব দেবী মন্দির, সামস লেক, হাংগিং ব্রিজ-সহ দেখার মত অনেক কিছু আছে। এখানে রোথাং পাস, সালাং ভ্যালী, কোঠি, রঘুনাথ মন্দির, বশিষ্ঠ হট স্প্রিং, সুলতানপুর প্যালেস, বিজলী মন্দির-সহ অনেক প্রাকৃৃতিক আকর্ষণ রয়েছে। সনাতন ধর্মের কাব্যগাঁথা ’মহাভারত’-এ কুলুটা নামে প্রাচীন এই রাজ্যকে বর্ণনা করা হয়েছে।
মান্ডি
হিমাচলের একটি শহর মান্ডি। এই শহরেই সুকেটি ও বীয়াস নদীর সংযোগ হয়েছে। মান্ডিতে দেখার জন্য পরাশ্বর লেক, রিয়ালশ্বর লেক, সুন্দরনগর লেক ও পান্ডু ড্যামের মত প্রাকৃতিক সৃষ্টি রয়েছে। পান্ডু ড্যামে গেলে চলমান টার্বাইন-সহ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সব কাজ দেখতে পারবেন। মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরে মান্ডির সেরা দৃশ্যগুলি পাওয়া যায়।
যেভাবে মানালি ভ্রমণের প্রস্তুতি নিবেন
হিমাচল ও মানালি যেহেতু শীত প্রধান অঞ্চল, তাই যাবার আগে সবকিছু দেখে-শুনে যেতে হবে। নিচের নির্দেশন মত গেলে কোনো ধরনের ঝামেলাতে পড়ার আশংকা থাকবে না-
- অতিরিক্ত শীত সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে মে থেকে অক্টোবর হলো মানালি ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময়। অন্যান্য মাসে তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়।
- পরিবার ও বাচ্চা নিয়ে একা না গিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির ভ্রমণ প্যাকেজে যাওয়া ভালো। এতে ভূমিধ্বস বা অতিবৃষ্টির পর চলাচলে কোনো ধরনের সমস্যাতে পড়বেন না।
- ভারী শীতের কাপড় নিয়ে যেতে হবে। যদিও এখানে শীতের কাপড় ভাড়া পাওয়া যায়, কিন্তু বারবার স্থান পরিবর্তনের জন্য আপনি যথেষ্ঠ সময় পাবেন না।
- কিছুটা দুর্গম হওয়াতে মানি এক্সচেঞ্জ করারা ভালো ব্যবস্তা পাবেন না। তাই ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অথবা কলকাতা বা দিল্লি থেকে ডলার ভাঙিয়ে নিতে হবে।
- প্যারাসুটিং বা প্যারাগ্লাইডিং করলে অবশ্যই এজেন্টদের কাছে খোঁজ নিয়ে যাবেন। অনেক সময় খারাপ আবহাওয়াতে এজেন্টদের না জানিয়ে প্যারাগ্লাইডিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ও আইনি জটিলতায় পড়তে হয়।
- পরিবেশ রক্ষার জন্য মানালিতে ধূমপান করা নিষেধ। তাই হোটেলের স্মোকিং জোনের বাইরে ধূমপান করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা লাগবে।
- ভিসা ও পাসপোর্টের সকল কাগজপত্র কাছে রাখা লাগবে। যেন কোনো কারণে রাস্তা বন্ধ হলে অতিরিক্ত সময় থাকার ব্যবস্থা করা যায়।
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার মানালি ভ্রমণ হবে আরও সহজ!
হিমালয় নিয়ে আগ্রহ থাকলে হিমাচলের মানালিকে আপনার ভ্রমণ তালিকার উপর থাকবে। এখানকার প্রকৃতির ও শীতল আবহাওয়ার জনজীবন দেখে নাটক বা সিনেমার দৃশ্যে মনে হবে। মানালি ভ্রমণ বিষয়ক যেকোনো তথ্য পেতে মেইল করুন vacation@sharetrip.net -এ এবং কল করুন +8809617617617 নম্বরে।