চট্টগ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় সারা বছরই এখানকার হোটেলগুলোতে ভিড় থাকে। তাই আপনার ভ্রমণ সহজ করতে আমরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের হোটেল ভাড়া নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।
পতেঙ্গার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে বেশি গ্রাহক সুবিধা আছে এমন হোটেলে ওঠা ভাল। কষ্ট করে হোটেল খুঁজতে না চাইলে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমেই সেরা হোটেলগুলো খুঁজে নিতে পারবেন। চলুন কথা না বাড়িয়ে হোটেলগুলোর নাম, ঠিকানা, সুবিধা ও ভাড়া সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।
পতেঙ্গার আবাসিক হোটেলের ভাড়া ও সুবিধাসমূহ
পতেঙ্গাতে থাকার মত খুব বেশি হোটেল নেই। চট্রগ্রাম শহরের একেবারে কাছে হওয়ায় সবাই সৈকত দেখে আবার শহরে ফিরে আসে। মান ও সুবিধার দিক থেকে হোটেল বেলমন্ড সিটি, ব্রিসা মারিনা সিবিসি রিসোর্ট, অর্কিড বিজনেস হোটেল, বাটারফ্লাই পার্ক রিসোর্ট, হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল এশিয়ান এস.আর, হোটেল ল্যান্ডমার্ক ইত্যাদি জনপ্রিয়।
এসব হোটেলের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্যক্তিবিশেষে আপনার ভাল লাগতে পারে। কম খরচে ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ১১,০০০ টাকার বিলাসবহুল রুম পাবেন। এবার সব হোটেলের কিছু বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক—
১. হোটেল বেলমন্ড সিটি (Hotel Belmond City)
ন্যাভাল বীচ ও বাটারফ্লাই পার্ক থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে হোটেল বেলমন্ড সিটি। এখানে সুন্দর ও ছিমছাম রুম পাবেন। রুমগুলোর আকার ১৫০ থেকে ২৫০ বর্গফুট। প্রতিটি রুমেই মূল্যবান জিনিস রাখতে লকার দেওয়া আছে। হোটেল থেকে মাত্র দশ মিনিট হেঁটে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়। থাকার জন্য সাধারণ ও বিলাসবহুল দুরকমের রুম নেয়ার সুযোগ আছে। এছাড়া বিনামূল্যে গাড়ি পার্কিং আর ব্যবসায়ীদের জন্য সেফটি ডিপোজিট বক্সের সুবিধা আছে ।
- ভাড়া: ১,২০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা
- ঠিকানা: সমুদ্র সৈকত রোড, চট্টগ্রাম ৪২০৪
২. ব্রিসা মারিনা সিবিসি রিসোর্ট (Brisa Marina CBC Resort)
শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলি নদীর তীরে অবস্থিত ব্রিসা মারিনা সিবিসি রিসোর্ট। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমগুলোতে টিভি, মিনিবার ও বারান্দা আছে। রুমের মধ্যে বাইরের আওয়াজ আসেনা এবং শৌচাগারে বিনামূল্যে সকল জিনিসপত্র পাবেন। অতিরিক্ত আরাম করতে রুমের বাইরে সুইমিং পুল, শরীরচর্চা করার জায়গা আর হাঁটাহাঁটি করার জন্য একটা বাগান পাবেন।
- ভাড়া: ৬,০০০ টাকা থেকে ১১,০০০ টাকা
- ঠিকানা: ১১ নং ঘাট, বিমানবন্দর রোড, পূর্ব পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম ৪২০৫
৩. অর্কিড বিজনেস হোটেল (Orchid Business Hotel)
চট্টগ্রামের তিন তারকা হোটেলগুলোর মাঝে অর্কিড বিজনেস হোটেল বেশ জনপ্রিয়। হোটেলটি শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে। হোটেলের উঁচু বিল্ডিং থেকে সারা শহরের দৃশ্য পাওয়া যায়। সাজানো-গোছানো এই হোটেলে বিশাল চত্বর ও সুইমিং পুল আছে। রুমের মধ্যে লিনেন কাপড়ের বিছানায় খুবই স্বস্তিতে ঘুমানো যায়। একজন, দুজন বা একাধিক মানুষের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা আছে।
- ভাড়া: ২,০০০ টাকা থেকে ৩,৫০০ টাকা
- ঠিকানা: ১৭৩৯, শেখ মুজিব রোড, চট্টগ্রাম ৪০০০
৪. বাটারফ্লাই পার্ক রিসোর্ট (Butterfly Park Resort)
বিলাসবহুল রুমসহ চমৎকার থাকার জায়গা বাটারফ্লাই পার্ক রিসোর্ট। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এখানে হাজার হাজার প্রজাপতি উড়তে দেখা যায়। চাইলে বনভোজনসহ বিভিন্নরকম খেলায় অংশ নিতে পারবেন। এখানকার রেস্তোরাতে “ক্যান্ডল লাইট ডিনার”-এর সুবিধা আছে। তাই হানিমুনসহ যেকোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়। এখানে শিশুদের জন্য অনেক ধরনের রাইডের পাশাপাশি পোষা প্রাণী নেয়ার অনুমতি আছে।
- ভাড়া: ৪,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকা
- ঠিকানা: ১৫ ন্যাভাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রোড, চট্টগ্রাম
৫. হোটেল প্যারামাউন্ট (Hotel Paramount)
বাজেটের মধ্যে আরো একটি ভাল থাকার জায়গা হোটেল প্যারামাউন্ট। এটা শাহ্ আমানত বিমান বন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অর্থাৎ নতুন ট্রেন স্টেশনের ঠিক উল্টো পাশে গেলেই হোটেলটি খুঁজে পাবেন। হোটেলের করিডর অনেক পাঁচ তারকা হোটেলের চেয়েও বড়। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও সাধারণ দুরকমের রুমই পাবেন। এছাড়া ড্রাই ক্লিনিংয়ের মাধ্যমে জামাকাপড় পরিষ্কার করার সুযোগ আছে। চাইলে এখান থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান ঘুরে আসতে পারবেন!
- ভাড়া: ৮০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা
- ঠিকানা: বাসা ১৭০, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম ৪০০০
৬. হোটেল এশিয়ান এস.আর (Hotel Asian S.R)
চট্টগ্রাম মূল বাস ও রেল স্টেশনের মাত্র ১০০ মিটার দূরেই হোটেল এশিয়ান এস.আর অবস্থিত। বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে হোটেলে যেতে মাত্র ২৫ মিনিট সময় লাগে। এই হোটেলের সব রুমে ব্যাগ রাখার জায়গা এবং জামাকাপড় ধুয়ে শুকানোর সুবিধা পাবেন।
- ভাড়া: রুম অনুযায়ী ১,০০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকা
- ঠিকানা: ২৯১ স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম ৪০০০
৭. হোটেল ল্যান্ডমার্ক (Hotel Landmark)
২৪ ঘন্টা নিরাপত্তায় মোড়ানো থাকার জায়গা হোটেল ল্যান্ডমার্ক। তিন তারকা হোটেলটিতে কনফারেন্স রুমসহ বিভিন্ন আকার ও ধারণ ক্ষমতার রুম পাবেন। এখানে যেকোনো সময় জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তার ডাকার সুবিধা আছে। আবার থাকার রুম থেকে শুরু করে বড় অনুষ্ঠান করার মত জায়গা রয়েছে।
- ভাড়া: রুম অনুযায়ী ২,৩০০ টাকা থেকে ৫,৫০০ টাকা
- ঠিকানা: ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম
কিভাবে কম খরচে পতেঙ্গার আবাসিক হোটেল ভাড়া নিবেন?
পতেঙ্গাতে বিশেষ মৌসুমে আগে থেকেই সব হোটেল রুম ভাড়া হয়ে যায়। তাই ভাল হোটেলে জায়গা পেতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এজন্য অগ্রিম ও সরাসরি হোটেল ভাড়া নেবার কিছু কৌশল জানতে হবে। শুধু তাই নয়; বাস, ট্রেন ও বিমানের মাধ্যমে সঠিক সময়ে পৌছাতে পারলে আগে-ভাগেই ভাল হোটেল ভাড়া নিতে পারবেন। এবার আমরা হোটেল ভাড়া নেবার ও দ্রুত পতেঙ্গা যাবার সকল কৌশল জেনে নেবো—
যেভাবে অগ্রিম হোটেল ভাড়া নিবেন
অগ্রিম হোটেল ভাড়া নেওয়ার বেশ কিছু উপায় আছে। প্রথমত, শেয়ারট্রিপ ওয়েবসাইটের হোটেল পেইজ থেকে চট্টগ্রাম বা পতেঙ্গার হোটেল খুঁজে বিশেষ মূল্যহ্রাসে ভাড়া নিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, গুগলের সাহায্যে পতেঙ্গার কাছাকাছি সেরা হোটেলগুলোর ওয়েবসাইট খুঁজে যোগাযোগ করতে পারেন।
যেভাবে সরাসরি হোটেল ভাড়া নিবেন
সরাসরি হোটেল ভাড়া নিতে হলে কিছু ব্যপার মাথায় রাখা লাগবে। আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির তালিকা করেছি—
- সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনে যাবেন। কারণ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মানুষ বেশি আসায় হোটেলের ভাড়া বেড়ে যায়।
- অনেকসময় নির্দিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে মূল্যহ্রাস পাওয়া যায়। তাই আপনার ব্যাংকের কার্ড কোনো সুবিধা দেবে কিনা জেনে নিন।
- যতটা সম্ভব সকালে পৌছানোর চেষ্টা করবেন। তাহলে অন্য ভ্রমণার্থীরা সকালে রুম ছাড়ার পরপরই ফাকা রুম পেয়ে যাবেন।
- আগে একবার থেকেছেন এরকম হোটেলে গিয়ে নিজের পরিচয় দিবেন। তাহলে বিশ্বস্ততার জন্য কিছু ছাড় পেতে পারেন।
- পরিবারে সামরিক কর্মকর্তা, সরকারি চাকুরিজীবি, অথবা মুক্তিযোদ্ধা থাকলে তাদের পরিচয় দিতে পারেন। অনেক হোটেল এরকম মানুষদের সম্মান দেখাতে মূল্যহ্রাস দিয়ে থাকে।
- খাবার সুবিধা আছে এরকম হোটেলে উঠতে পারেন। অতিরিক্ত পরিবেশনা থাকায় এসব হোটেলে থাকার ভাড়া তুলনামূলক কম হয়।
- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম ভাড়া নিতে পারেন, কারণ সাধারণ রুমের খরচ কম হওয়ার জন্য আগেই ভাড়া হয়ে যায়।
যেভাবে দ্রুত পতেঙ্গা গিয়ে হোটেল ভাড়া নিবেন
ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব বিভাগীয় শহর থেকেই চট্টগ্রামগামী গাড়িতে করে পতেঙ্গা যেতে পারবেন । আর খরচের চিন্তা না থাকলে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে বিমানে করে যেতে পারবেন।
- বাসে ভ্রমণ: সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সৌদিয়া, সোহাগ, গ্রীন লাইন, ইউনিক বা সিল্ক লাইন বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। গাড়ির মান অনুযায়ী ৮০০ টাকা থেকে ১,১০০ টাকা ভাড়া পড়বে। এস.আলম, হানিফ, শ্যামলী ইত্যাদি সাধারণ বাসে ভাড়া লাগবে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।
- রেলে ভ্রমণ: ঢাকা-চট্টগ্রামের ট্রেন রুটে সকাল ৭:৪০ টায় মহানগর প্রভাতী, সকাল ৯:২০ টায় চট্টলা এক্সপ্রেস, বিকেল ৩:০০ টায় মহানগর গোধুলী ও বিকেল ৪:২০ টায় সুবর্ণ এক্সপ্রেসে যেতে পারবেন। রাতে গেলে রাত ১১:০০ টায় তূর্ণা এক্সপ্রেসে যাবেন । ট্রেনে যেতে খরচ হবে ১৬০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা।
- বিমানে ভ্রমণ: ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার ও জিএমজি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে যেতে পারবেন। এছাড়া শেয়ারট্রিপের ফ্লাইট পেইজে গিয়ে নভো এয়ার, ইউ.এস. বাংলা এয়ারলাইনস ও এয়ার অ্যাস্ট্রা-তে ভালরকম মূল্যহ্রাসে টিকেট কিনতে পারবেন।
যেখানে কম খরচে মাঝারি মানের হোটেল খুঁজবেন
বাজেট একেবারে সীমিত হলে অথবা ভাল হোটেলে জায়গা না পেলে মধ্যমানের হোটেলে ওঠার বিকল্প নেই। চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল (CEPZ) এলাকায় এরকম হোটেলগুলো খুঁজে পাবেন। এসব হোটেলে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে দুজন থাকার মত রুমও আছে।
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার পতেঙ্গা ভ্রমণ হোক আরও সুন্দর!
এপ্রিল থেকে জুনে বৃষ্টি বেশি হয় এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে গরম বেশি থাকে । অর্থাৎ পতেঙ্গা ভ্রমণের আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে মার্চ। তাই শীতের এই ব্যস্ত মৌসুমে সেরা হোটেল পেতে আমাদের নির্দেশনা-মত হোটেল খুঁজতে হবে।
এছাড়া শেয়ারট্রিপের হলিডে প্যাকেজ থেকে সূলভমূল্যে চট্টগ্রাম ও পতেঙ্গা যেতে পারেন। বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে ভ্রমণে যেতে হলে ভিজিট করুন https://sharetrip.net/ । যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করুন ask@sharetrip.net অথবা কল করুন +8809617617617-এই নম্বরে।