প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান বলা যায়। মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপের আরেক নাম “নারিকেল জিন্জিরা।” এখানে বছরে তিন লাখেরও বেশি মানুষ ভ্রমণ করে।
তাই আপনার ভ্রমণ সহজ করতে আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান, ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, সহজে যাবার উপায় এবং সেন্ট মার্টিনের হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া বিস্তারিত জানাবো। এগুলা জানার পর শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে আপনি নিজেই জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট-এর মত মনোরম থাকার জায়গা খুঁজে পাবেন।
তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ এই দ্বীপে কখন ভ্রমণে যাবেন, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এবং কি কি দেখবেন।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এসময় শীতের আমেজে আবহাওয়া একেবারে অনুকুল থাকে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা না থাকায় গরমের মৌসুমে ভ্রমণ খুবই কষ্টকর হয়। আর বর্ষা মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টিতে উত্তাল সমুদ্রে নামার কথা ভাবাই যায়না!
তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভ্রমণে গেলে নিরিবিলি সবকিছু উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, শীত মৌসুমে হোটেল ও রিসোর্টের চাহিদা বেশি থাকবে, তাই অনেক বেশি ভাড়া গুণতে হবে।
সবচেয়ে সহজে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবার উপায়
বাসে ভ্রমণ
সৌদিয়া বাসে চার থেকে পাঁচ’শ টাকার মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যেতে পারবেন। টেকনাফ নেমে ৫০ বা ৬০ টাকায় ডিম-পরোটা দিয়ে হালকা নাস্তা সেরে নিবেন।
জাহাজে ভ্রমণ
দুভাবে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন: ১. কক্সবাজার-টু-সেন্টমার্টিন, ২. কক্সবাজার-টু-টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টিন।
টেকনাফের জেটি ঘাট থেকে অগ্রিম টিকেট নিয়ে যাওয়া বেশি ভালো হবে। জাহাজের ভাড়া ৬৫০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে হয়। প্রত্যেকটা জাহাজে আলাদারকম সুবিধা আছে। এরকম কিছু জাহাজ হলো—
- কিয়ারি সিন্দাবাদ: টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন
- এমভি গ্রীন লাইন (১): ছোট জাহাজে খুবই অভিজাত ভ্রমণ করতে পারবেন
- এমভি বে ক্রুজ (১): সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাহাজে বিলাসবহুল ভ্রমণ হবে
- কর্ণফুলি এক্সপ্রেস: কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন
- কিয়ারি ক্রুজ ডাইন: খাবারের সুবিধাসহ সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন
ট্রলারে ভ্রমণ
বেশি অ্যাডভেঞ্চার পেতে হলে বন্ধুদের সাথে ট্রলারে সেন্ট মার্টিন যেতে পারেন। ট্রলার ভাড়া ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে সাঁতার না জানলে ট্রলারে উঠবেন না।
বাইক/রিকশা ভ্রমণ
সেন্টমার্টিনে নামার পর হেঁটে রিকশা নিলে কমপক্ষে ১০০ টাকায় যেতে পারবেন। বাইক ভাড়া করেও যেতে পারেন। তবে হয়রানি এড়াতে রিসোর্টের দূরত্ব বুঝে ভাড়া ঠিক করবেন।
খাবারের খরচ
বাইরে লাঞ্চ বা ডিনারে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। রেস্টুরেন্টের মাছ পছন্দ হলে দরদাম করে অর্ডার দিবেন। আবার প্যাকেজ সিস্টেমে প্যাকেজে ভর্তা, ডাল, মাছ সবকিছু নিয়ে খেতে পারেন।
যেভাবে সহজে সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট ভাড়া করবেন
প্রথমেই মনে রাখবেন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হতে পারে। কিন্তু যাচাই করে ভাল হোটেল ও রিসোর্টে সাশ্রয়ী খরচে থাকা যায়।
যেমন—জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট, ব্লু মেরিন রিসোর্ট, কোরাল ভিউ রিসোর্ট, নীল দিগন্তে রিসোর্ট, প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট, ড্রিম নাইট রিসোর্ট ইত্যাদি রিসোর্টে যুগলভাবে বা বন্ধুদের সাথে যেতে পারবেন।
এবারে এসকল রিসোর্টের কিছু বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক —
জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট
নারিকেল গাছ ঘেরা সৈকতের সামনে জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট। এখানে পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবেন। পরিবেশ বান্ধব কটেজগুলো আপনাকে শহরে ফেরার কথা ভুলিয়ে দিবে! এখানকার কিছু সুবিধা—
- ২,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন
- শিশু ও পরিবার নিয়ে থাকলে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা পাবেন
ব্লু মেরিন রিসোর্ট
সেন্টমার্টিনের ফেরিঘাটের একেবারে কাছেই ব্লু মেরিন রিসোর্ট। এখানে সর্বমোট ৪১টি গেস্টরুম আছে। একজন, দুজন, তিনজন, ছয়জন ও দশজনের আলাদা রুম পাবেন। খরচ ও সুবিধা যেমন হবে—
- ৫,০০০ টাকার আশে-পাশে নন-এসি রুম ও ১৫,০০০ টাকার আশেপাশে এসি রুম পেতে পারেন
- গ্রুপ ভ্রমণে ৫,০০০ টাকার আশেপাশে দশ জন থাকার মত বড় রুম পেয়ে যাবেন
কোরাল ভিউ রিসোর্ট
পূর্বদিকের সৈকতের পাশে জাহাজঘাটের সাথেই কোরাল ভিউ রিসোর্ট খুঁজে পাবেন। থাকার জন্য এটিও সেরা রিসোর্টের একটি। যে সুবিধা পেতে পারেন—
- ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকার রুম থেকে সমুদ্র দেখতে পারবেন
- সুন্দর ও গোছালো আলো ঝলমলে পরিবেশে ছবি তুলতে পারবেন
নীল দিগন্তে রিসোর্ট
সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে মোড়ানো নীল দিগন্তে রিসোর্ট। এটা জাহাজের জেটি থেকে কিছুটা দূরে দক্ষিণ দিকের সৈকতের কোণাপাড়ায় গেলে খুঁজে পাবেন। এখানে যেসব সুবিধা পাবেন—
- বিভিন্নরকম ছোট কটেজের মত রুম আছে
- ২,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন
দ্য আটলান্টিক রিসোর্ট
৪৩টি রুমের দ্য আটলান্টিক রিসোর্টের আগের নাম ছিল লাবিবা বিলাশ রিসোর্ট। বাজেট সীমিত হলে এখানে কম সাজসজ্জার থাকার জায়গা পাবেন। আবার বিলাসবহুল রুম ও আছে। যেসব সুবিধা পেতে পারেন—
- অনুষ্ঠান করার জন্য আলাদা পার্টি স্পেস আছে
- ১,৫০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের থাকার জায়গা পাবেন
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন ব্যবস্থা সমূহ
নিরাপদে সেন্ট মার্টিনে গিয়ে রিসোর্ট ভাড়া নেয়ার পর সকল প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্য ঘুরে দেখতে পারবেন। এখানে গর্জনসহ ঢেউ দেখে, প্রবালে ভর্তি সৈকতে হেঁটে এবং মনোরম ছেড়া দ্বীপে ঘুরে সময় কাটানো যায়। আবার ভাঁটার সময় বাইক চালিয়ে ছেড়াদ্বীপে যাওয়া যায়। এছাড়া ভোরবেলা জেটি থেকে সতেজ সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। শুধু তাই নয়, অক্সিজেন ভর্তি ট্যাংক নিয়ে স্কুবা ডাইভিং ও স্নোরকেলিং ও করা যায়।
- সৈকত দেখা: মাত্র কয়েক মিনিট হেঁটেই দ্বীপের যেকোনো প্রান্তে যেতে পারবেন। দিনের বেলায় সানস্ক্রিন, পানি ও স্যান্ডেল নিয়ে যেতে ভুলবেন না। কারণ খুব বেশি ছায়াশীতল জায়গা পাবেন না।
- প্রবাল দেখা: ঢেউ আছড়ে পড়লে প্রবাল, শামুখ ও বিভিন্নরকম জলজ প্রাণীর দেখা মিলে সেন্ট মার্টিনে। এসবকিছু জোয়ারের সময় তলিয়ে গেলেও ভাঁটার সময় দেখা যাবে। কিন্তু পাথর পিচ্ছিল হবার জন্য সাবধানে দেখেশুনে হাঁটবেন।
- ছেড়া দ্বীপে যাওয়া: পরিবারের সাথে ট্রলারে করে ছেড়া দ্বীপে যাবার মজা অন্যরকম। চারিপাশে নীল সমুদ্র দেখে সারাজীবন মনে রাখার মত স্মৃতি তৈরি হবে। হাঁটতে কষ্ট হলে ভাড়া নিয়ে বাইক ও চালাতে পারবেন।
- দোলনা বিলাস করা: সারাদিন ঘোরার পর বিকালে দোলনায় শুয়ে অবসর কাটাতে পারেন। সুমদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে সূর্যাস্ত দেখে ঘুমিয়ে নিতে পারেন। সমুদ্রের গর্জন বিশালতার কথা মনে করিয়ে দেবে।
- সাইকেল চালানো: হেঁটে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ঘুরতে বেশি সময় লাগবে মনে হলে সাইকেল ভাড়া নিতে পারেন। এখানে ঘন্টা অনুযায়ী সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। তবে বালু ও চোরাবালির স্তূপ থেকে সাবধানে সাইকেল চালাবেন।
- স্কুবা ডাইভিং করা: সমুদ্রের নিচের জগতে কি আছে দেখতে চাইলে রোমাঞ্চকর স্কুবা ডাইভিং করতে পারেন। রং-বেরঙের সামুদ্রিক প্রাণী ও গাছপালা দেখে নতুন কিছু উপভোগ করবেন। খরচ পড়বে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা।
- সন্ধ্যা বাজার থেকে কেনা: বিকেল থেকেই দ্বীপে অস্থায়ী বাজার বসা শুরু হয়। এখানে বিস্কুট, চিপস, টুপিসহ বাচ্চাদের অনেক খেলনা ও শো-পিস পাবেন।
- নারিকেল গাছ দেখা: “নারিকেল জিঞ্জিরা”-এর নারিকেল গাছ না দেখলে কি হয়? লম্বা লম্বা নারিকেল গাছের সামনে দারুণ সব ছবি তুলতে পারবেন।
কখন সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যাবেন না
সেন্ট মার্টিনে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত জাহাজ চলাচল করে। বাকি সময় প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে প্রশাসন জাহাজ ভ্রমণ বন্ধ রাখে। তাই সাবধানে ভ্রমণ করতে চাইলে এই সময়ের মধ্যে যাওয়া বুদ্ধিদীপ্ত কাজ হবে। অনেকে স্পিড বোট বা ট্রলারে করে দ্বীপে যায়, কিন্তু এভাবে বড় কোনো দুর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা থাকে।
যেভাবে অগ্রিম সেন্টমার্টিন দ্বীপে হোটেল ভাড়া করবেন
শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে কম খরচে ভালো হোটেল ও রিসোর্ট খুঁজে নিতে পারেন। এখানে অনায়াসে মূল্যছাড় ও মান যাচাই করে মেরিন বিচ রিসোর্ট, সূর্যস্নান টুইন বিচ রিসোর্ট ও গোধুলি ইকো রিসোর্টের মত শীর্ষ শ্রেণীর রিসোর্ট ভাড়া করতে পারবেন। যেভাবে খুঁজবেন—
১. শেয়ারট্রিপ ওয়েবসাইটে হোটেল ট্যাবে ক্লিক করে পেইজটি ভিজিট করুন
২. যেখানে ভ্রমণ করবেন সেই স্থানের নাম লিখুন, যেমন— Saint Martin
৩. ভ্রমণের তারিখ বাছাই করে সার্চ বাটনে ক্লিক করুন, পেইজটি লোড হবার জন্য অপেক্ষা করুন
৪. এবার হোটেল ও রিসোর্টের তালিকা থেকে পছন্দের হোটেল বুক করুন
এভাবে রিভিউ ও মূল্য দেখে ভাড়া নিতে পারবেন । মৌসুমের সময় বিশেষ মূল্যহ্রাস পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক মানুষের ভিড়ে পরিবার নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ার কোনো সুযোগ থাকবেনা।
আবার একই ভাবে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ পেয়ে যাবেন। প্যাকেজে গেলে তুলনামূলক কম খরচে যাওয়া, থাকাসহ সকল সুবিধা পেয়ে যাবেন।
সেন্টমার্টিনে আপনার ট্রিপ বুক করুন শেয়ারট্রিপের সাহায্যে!
সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হওয়ায় সারাবছরই উপচে পড়া ভিড় থাকে। মৌসুমের সময় অবশ্যই সাপ্তাহিক ছুটির দিন এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। আর বন্ধুদের নিয়ে গেলে তো সবচেয়ে কম খরচে বড় রুম গুলোই নিতে পারবেন। নিজে সেন্ট মার্টিনে হোটেল ও রিসোর্ট খোঁজার ঝামেলা এড়াতে হলে শেয়ারট্রিপ তো আছেই! এছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে vacation@sharetrip.net-এ মেইল অথবা +8809617617617-নম্বরে কল করুন।