আপনার গ্যাংটক ভ্রমণ এর অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর করতে পড়ুন আমাদের এই ব্লগ।
সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে হিমালয়ের দৃশ্য, বৌদ্ধ সংস্কৃতি, এবং বরফসহ শত বছরের পুরনো স্থাপনা আছে। এখানেই পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তর চূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাওয়া যায়। সবকিছু মিলিয়ে তরুণদের জন্য সিকিম ও গ্যাংটক অনেক রোমাঞ্চকর ভ্রমণ স্থান।
তাই আপনার গ্যাংটক পর্যটনকে আরও আকর্ষণীয় ও সহজ করতে শেয়ারট্রিপ দিচ্ছে বেশ কিছু সিকিম ভ্রমণ প্যাকেজ। কিন্তু তার আগে আপনার দরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস। চলুন জেনে নেই সিকিম যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন, ঢাকা থেকে সিকিম কিভাবে যাবেন, কি কি সতর্কতা নিবেন, এবং গ্যাংটকের হোটেল ভাড়া কেমন পড়বে।
কিভাবে সহজে সিকিম ভ্রমণ করবেন?
বাংলাদেশে থেকে বাসে, ট্রেনে, ও বিমানে - এই তিনভাবে সিকিম ভ্রমণ করা যায়। শীতের মৌসুমে সবচেয়ে কম খরচে ভ্রমণ করতে পারবেন, কিন্তু সমগ্র সিকিম তখন বরফে মোড়ানো থাকবে। তাই ভেবে চিন্তে নির্দিষ্ট ভ্রমণ মৌসুমে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা সহজ হবে। মোটামুটি সাত থেকে দশ দিনের ট্যুরে গেলে গ্যাংটকসহ আশেপাশের সকল এলাকা দেখে আসতে পারবেন।
সিকিম ভ্রমণে যাওয়ার উপযুক্ত সময়
ফেব্রুয়ারি থেকে মে হলো সিকিম ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সবচেয়ে বেশি পর্যটক এই মৌসুমেই ভ্রমণ করে। আবার জুন থেকে সেপ্টেম্বরে সিকিমের আবহাওয়া সবচেয়ে সহনশীল থাকে। কিন্তু বৃষ্টিতে ভূমিধ্বস হয়ে আকস্মিক রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত হেমন্তের আমেজে বেশ ভালো ভ্রমণ হবে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পুরো সিকিম বরফে ঢেকে যায়। এসময় লোকজন কম থাকায় কম খরচে ঘুরে আসা যায়। ভিড়, খরচ, আবহাওয়া ইত্যাদি দেখে নিজের পছন্দের সময় বেছে নিতে পারবেন।
সিকিম ভ্রমণে যাওয়ার সকল উপায়
ঢাকা থেকে গ্যাংটক দ্রুত ভ্রমণের জন্য বিমান সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম। কারণ, বাস ও ট্রেনের যাত্রা কম খরচে হলেও সময় বেশি লাগবে।
- বিমানঃ ঢাকা থেকে গ্যাংটক রুটে সরাসরি কোনো বিমান যায়না। সিকিমের একমাত্র বিমানবন্দর পাকিং এয়ারপোর্টে বাংলাদেশ থেকে ট্রাভেল করতে চাইলে কলকাতা হয়ে যেতে হবে। তাই শেয়ারট্রিপ থেকে মাল্টিসিটি ট্রিপে ঢাকা টু কলকাতা এবং কলকাতা টু সিকিম ফ্লাইট টিকেট নিতে পারেন। কোন কারনে যদি কোলকাতা টু সিকিম ফ্লাইট না পাওয়া যায় তাহলেও চিন্তার কোন কারন নেই, কেননা ট্রেন বা বাসে কলকাতা থেকে গ্যাংটক যেতে পারবেন।
- বাসঃ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা থেকে হানিফ বাসে সিকিম যেতে পারবেন। ইন্ডিয়ান বর্ডারের ইমিগ্রেশন শেষে অটোতে ফুলবাড়ি স্ট্যান্ডে যাবেন। সেখানে সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট অফিসের অনুমতি নিয়ে ৬ ঘন্টায় প্রাইভেট কারে গ্যাংটকে পৌছাতে পারবেন। চাইলে শ্যামলী পরিবহনের বাসে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি গিয়ে সেখান থেকেও গ্যাংটকে যেতে পারবেন।
- ট্রেনঃ ট্রেনে করে বেনাপোল যাবেন, এরপর বর্ডার ক্রস করে কলকাতা যাবেন। কলকাতা হতে এক থেকে দেড় হাজার টাকায় শিলিগুড়ি যাবেন। চাইলে সরাসরি ঢাকার ক্যন্টনমেন্ট থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে জলপাইগুড়ি গিয়ে সেখান থেকে ট্যাক্সিতে শিলিগুড়ি যেতে পারবেন। পৌছে এরপর জিপ গাড়িতে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ করে সিকিম যাবেন।
সিকিমে থাকার সেরা হোটেল কি কি?
সিকিম ও গ্যাংটকের হোটেল ভাড়া বেশ কম। ভ্রমণার্থীদের কাছে জনপ্রিয় কিছু হোটেল হলো দ্য গ্রিফন নেস্ট, সুহিম পোর্টিকো হোটেল, হোটেল মাউন্ট সিনিউলচু, সামিট ডেনজং হোটেল অ্যান্ড স্পা, হোটেল প্রিয়দর্শিনী ইত্যাদি।
এসব হোটেলে ১ থেকে ৫ হাজার টাকায় সাধারণ রুম আর ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিলাসবহুল রুম পাওয়া যায়। শেয়ারট্রিপের হোটেল ক্যাটালগ সার্চ করে অফার বা ডিস্কাউন্টের সাথে সিকিমের হোটেলসমূহ অগ্রিম বুকিং করতে পারবেন। চলুন হোটেলগুলোর সুবিধা জেনে নেই:
দ্য গ্রিফন নেস্ট (The Griffon's Nest)
ঠিকানাঃ জহরলাল নেহেরু রোড (এনশি স্কুল থেকে দুমাইল দূরে), গ্যাংটক
বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ৭৭ মাইল দূরে দ্য গ্রিফন নেস্ট। এখান থেকে গণেশ টক মন্দিরে হেঁটে যাওয়া যায়। হোটেলের রুমে পর্যাপ্ত আসবাবপত্র আছে। খাবার জন্য হোটেলেই ভাল রেস্তোরা আছে। এখানে বাগান, ফ্রি পার্কিং আর লাউঞ্জের সুবিধা পাবেন। ভিতরে সময় কাটানোর জন্য ক্যাসিনো আছে আর বাইরে সাইক্লিং ও হাইকিং-এ যেতে পারবেন।
সুহিম পোর্টিকো হোটেল (Suhim Portico Hotel)
ঠিকানাঃ হেলিপ্যাড রোড (জেলা কোর্টের পাশে), গ্যাংটক
সুহিম পোর্টিকো হোটেল একটি বিলাসবহুল থ্রি স্টার হোটেল। গ্যাংটক মূল শহর থেকে এখানে যেতে মাত্র আট মিনিট সময় লাগে। হোটেল থেকে নানান রকম পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায়। থাকার জন্য বিভিন্ন খরচের রুম আছে। হোটেলে আলাদা সিটিং এরিয়া, টি মেকার ও সেফ বক্স পাবেন। এছাড়া অনুষ্ঠান করার জন্য ১০০ জন ধারণক্ষমতার কনফারেন্স রুম আছে।
হোটেল মাউন্ট সিনিউলচু (Hotel Mount Siniolchu)
ঠিকানাঃ ভিআইপি কলোনি রোড, সুঙ্গাভা, গ্যাংটক
গ্যাংটক মূল শহর থেকে পাঁচ মিনিট দূরে হোটেল মাউন্ট সিনিউলচু অবস্থিত। এর ঠিক পাশেই ১৭০ বছর পুরনো এনশি আশ্রম আছে। হোটেলটি বেশ নিরিবিলি এবং কাঠের সাজসজ্জায় মোড়ানো রুমগুলো বেশ পরিপাটি। এখানে আলো ঝলমলে পরিবেশে একটি বিজনেস সেন্টার, বারবিকিউ ডেক, বার ও ক্যারাওকেতে গান করার সুবিধা আছে।
সামিট ডেনজং হোটেল অ্যান্ড স্পা (Summit Denzong Hotel & Spa)
ঠিকানাঃ কাজী রোড, ভিশাল গাঁও, গ্যাংটক
সামিট ডেনজং হোটেল অ্যান্ড স্পা একটি ফোর স্টার হোটেল। এখানে হল, ফিটনেস সেন্টারসহ অনেক ধরনের সুবিধা আছে। অতিথিরা তিন ধরনের রুম থেকে পছন্দের রুম বেছে নিতে পারে। রুমের সাথেই কফি মেকার, বার আর ইলেক্ট্রনিক সেফ বক্স আছে। ইন্ডিয়ানসহ বিভিন্ন দেশী খাবারের রেস্টুরেন্টও আছে।
হোটেল ফ্লোরা ফাউন্টেন (Hotel Flora Fountain)
ঠিকানাঃ জিওয়ান থিং মার্গ, সুঙ্গাভা, গ্যাংটক
হোটেল সার্ভিস ও খাবারের স্বাদের দিক থেকে হোটেল ফ্লোরা ফাউন্টেন স্বনামধন্য। বিশেষ করে পরিবার নিয়ে ভ্রমণে গেলে এখানে থাকতে পারেন। রুমগুলোর ডেকরেশন জাঁকজমকপূর্ণ নয় কিন্তু বেশ সুন্দর। রুমের ভিতরে টি টেবিল, ওয়ারড্রোব, ড্রেসিং রুম, টিভি ইত্যাদি সবকিছু আছে।
সিকিমের ভাল খাবার হোটেল কোথায় পাবেন?
অনেকেই জানেন না যে সিকিমে কীটনাশক ব্যবহার করা নিষেধ, তাই এখানে সবসময় অরগ্যানিক খাবার পাওয়া যায়। ভাল মানের স্ট্রিট ফুডের জন্য এমজি মার্কেট ও লাল বাজার রোডে যেতে পারেন। এছাড়া হোটেলের কাছের রেস্টুরেন্ট গুলোতে থুকপা, শা ফালেয়, ব্রেড, ও লাচ্ছির মত স্থানীয় খাবার পাবেন।
সিকিমের সেরা পর্যটন স্থান কি কি?
রূপ ঐশ্বর্যের জন্য অনেকে সিকিমকে ‘সুখী স্বদেশ’ বলে। এখানে চারটি জেলায় সবমিলিয়ে ৩০টির বেশি দেখার জায়গা আছে।
সিকিমের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গাগুলি হলো— গুরুদংমার লেক, বুদ্ধ পার্ক, সাঙ্গু লেক, রামটেক মঠ, এম জি মার্গ, হনুমান টক, কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক, সেভেন সিস্টার ওয়াটারফল, সিঙ্গশোর সেতু, সাই মন্দির, জুলুক ওয়াইল্ডলাইফ এরিয়া, ছপ্তা ভেলি, নাথাং ভ্যালি, নর্বুগাঙ্গ পার্ক ইত্যাদি।
এবারে কিছু জায়গার বর্ণনা দিবো যা না দেখলে গ্যাংটক ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে:
তিব্বতি মোনাস্ট্রি
রুমটেক, সুক লা খাং ও পেমাযাংসে-এর মত তিব্বতি মোনাস্ট্রিতে গেলে তিব্বতি সংস্কৃতি ও শিল্পকর্ম দেখতে পারবেন। স্থানীয় সংস্কৃতিকে গভীরভাবে দেখার জন্য নামগ্যাল ইনস্টিটিউট অব তিবেতলোজিতে যেতে পারেন। লামাদের জীবনযাপন কেমন রিসার্চ করতে অনেকেই এখানে যায়।
পেলিং
পেলিংকে হাইকার ও ট্র্যাকারদের পছন্দের জায়গা বলা হয়। এখানে পাহাড়ের উপর ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে মন্দিরে যাবার মত রোমাঞ্চকর অনুভূতি পাবেন। এছাড়া রিম্বি নামের একটা নদীর পাশে এলাচ, কমলা, কাঠবাদাম ইত্যাদি গাছ দেখা যায়। এখানেই ৩০০ বছরের পুরনো পেমায়ংতসে আশ্রম রয়েছে।
লাচুং
তিব্বতের বর্ডারের কাছে একটি গ্রাম লাচুং। গ্যাংটক থেকে যেতে সময় লাগবে পাঁচ ঘন্টার মত। এখানে তিস্তা নদীর নীলাভ পানি দেখা যায়। পাশে ইয়মথাং নাসে একটা বরফে ঘেরা ভ্যালী আর উনবিংশ শতাব্দীর বৌদ্ধ মঠ দেখে নিতে পারবেন। এখানে ভীম নালা জলপ্রপাত, খান্দা জলপ্রপাত ও স্নো পয়েন্ট আছে।
সাঙ্গু লেক
সমুদ্রপৃষ্ট থেকে তিন মাইলেরও বেশি উঁচুতে অবস্থিত সাঙ্গু লেক বেশ জনপ্রিয়। এখানে আঁকা বাঁকা সুন্দর রাস্তা দিয়ে সাঙ্গু লেকে যাওয়া যায়। তুষারপাত হলে এখানে বরফ ছোড়াছুড়ি খেলা যায়। যত উপরে যাবেন ঠান্ডা তত বাড়তে থাকবে।
ইয়মথাং ভ্যালী
ফুলের রাজ্য নামে পরিচিত ইয়ামথাং ভ্যালী। ফেব্রুয়ারির পর থেকে এখানে বিভিন্ন রঙের ফুল দেখবেন। এখানে থেকে সহজে লাজেন আশ্রম, রাভাংলা বৌদ্ধ পার্ক, রালাং আশ্রম, সানরাইজ ভিউ পয়েন্ট, চার ধাম মন্দির, আর কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক যাওয়া যায়।
সিকিম ভ্রমণে কি কি সতর্কতা রাখবেন?
সিকিমে শীতের মৌসুমে হীমশীতল পরিবেশ বিরাজ করে। এজন্য দোকানপাট থেকে গাড়ি সবকিছু আগেভাগেই বন্ধ হয়ে যায়। আবার হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তখর লোকজন কম থাকায় অসংখ্য সমস্যার তৈরি হবে। তাই কিছু সাবধানতা বজায় রাখা লাগবে। যেমনঃ
- ঢাকা থেকে অগ্রিম হোটেল বুকিং দিয়ে যাবেন
- রাত ৯টার আগে বাইরে খাওয়া দাওয়ার কাজ সেরে ফেলবেন
- ভাল জ্যাকেট, মোজা, টুপি সাথে রাখবেন
- শিলিগুড়ি সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট অফিস থেকে অনুমতি নিবেন
- উত্তর সিকিমে যাবার সময় ড্রাইভার ছাড়াও লোকাল গাইড সাথে রাখবেন
- মনে করে পুলিশ চেকপোস্ট থেকে ‘এন্ট্রি’ ও ‘এক্সিট’ সীল নিবেন
- ভিসা, কোভিড সার্টিফিকেট, ও ৭/৮ কপি ছবি সাথে রাখবেন
- বর্ডার থেকে ভাল রেটে মানি এক্সচেঞ্জ করে নিবেন
- পাবলিক প্লেসে ময়লা ফেলা নিষেধ, তাই সাথে বিন বা পলি রাখবেন
- যোগাযোগের জন্য ভাল সিগন্যাল আছে এরকম সিম কিনে নিবেন
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার গ্যাংটক ভ্রমণ এর অভিজ্ঞতা হোক আরও সুন্দর!
সম্পূর্ণ সিকিম রাজ্য এক বিশাল পর্যটন এলাকা। পাহাড়ি ঝর্ণা, উপত্যকা, রডোডেন্ড্রন ফুল, লেক, মোনাস্ট্রি-সহ শত শত দেখার মত জায়গা আছে এখানে। এজন্য খুব কঠোর বিধিনিষেধও মেনে চলা হয়। বাইরে থাকার ব্যবস্থা না হলে রাতে বেশ ঝামেলায় পড়বেন।
তাই আগে থেকেই শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে ফ্লাইট টিকেট ও হোটেল বুক করে ফেললে ভ্রমণ অনেক সহজ হয়ে যাবে। ভিসা না থাকলে অনলাইনে ভারতের ভিসা আবেদন করে ছুটির মৌসুমকে কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়া সিকিম ও গ্যাংটক ট্যুর সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে হলে মেইল করুন vacation@sharetrip.net এ, অথবা কল করুন +8809617617617 নম্বরে।