আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত ছোট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হল সিঙ্গাপুর। আকার এবং আয়তনে ছোট হলেও আধুনিক স্থাপত্যশিল্প এবং অপরূপ সৌন্দর্যে এটি বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল আর জনপ্রিয় রাষ্ট্র। প্রতিবছর লাখো পর্যটকের সমাগমে মুখরিত থাকে এই দেশটি। এটলিস নামক অর্গানাইজেশন এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে প্রায় ২.৯৬ মিলিয়ন বিদেশী পর্যটক ভ্রমণ করেছেন যার মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার পর্যটক বাংলাদেশি। এতে করে বুঝা যায়, বাংলাদেশিদের জন্য অন্যতম একটি ট্রাভেল ডেস্টিনেশান হল সিঙ্গাপুর। আর হবেই বা না কেন? এখানে মেরিনা বে, সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার, সিঙ্গাপুর বোটানিক গার্ডেন সহ আরো অসংখ্য ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন রয়েছে যা যেকোনো পর্যটক এর মন কেড়ে নিবে। তবে সিঙ্গাপুর ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করার শুরুতেই যে বিষয়টি সবাই চিন্তা করে তা হল কিভাবে সিঙ্গাপুর ভিসা পাব, কোথা থেকে এপ্লাই করব, কী কী ডকুমেন্টস লাগবে অর্থাৎ ভিসা প্রসেসিং। তাই সকলের কনফিউশান ক্লিয়ার করতে আর সিঙ্গাপুর ভিসা পাওয়ার একটি কমপ্লিট গাইডলাইন দিতেই আমাদের আজকের সিঙ্গাপুর ভিসা গাইড ব্লগটি সাজানো হয়েছে।
সিঙ্গাপুর ভিসার জন্য কী কী ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
রাজধানী ঢাকাতে সিঙ্গাপুর কনস্যুলেট অফিস আছে আর এখান থেকেই সিঙ্গাপুরের ভিসা ইস্যু করা হয়। কিন্ত আপনি সরাসরি এসে এখান থেকে ভিসার আবেদন কিংবা প্রসেসিং করতে পারবেন না। কেননা তারা সরাসরি ভিসা এপ্লিকেন্টদের থেকে সিঙ্গাপুর ভিসা আবেদন সংগ্রহ করেন না। এজন্য আপনাকে অবশ্যই সিঙ্গাপুর কনস্যুলেট এর অনুমোদিত ভিসা এজেন্টদের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। সিঙ্গাপুর ভিসার জন্য এপ্লাই করার আগে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। নিচে বিস্তারিতভাবে কী কী ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
পাসপোর্ট এবং ছবি
দেশের বাইরে ট্রাভেল করতে হলে সবার আগেই আবশ্যক হল নিজস্ব পাসপোর্ট। ভিসা এপ্লাই করার আগে পাসপোর্ট এর কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরী। এগুলো হলঃ
-
আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ৭ মাস বা তার বেশি থাকতে হবে
-
আপনার পাসপোর্টে মিনিমাম দুটি ফাঁকা পাতা থাকতে হবে ভিসা ও ইমিগ্রেশান সিলের জন্য
-
আপনার যদি এক কিংবা একাধিক পুরনো পাসপোর্ট থাকে, তাহলে অবশ্যই সেগুলো নতুন পাসপোর্ট এর সাথে দিতে হবে
সিঙ্গাপুর ভিসা আবেদন এর জন্য আপনার ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের (৩.৫ সে.মি * ৪.৫ সে.মি), সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড এর ল্যাব প্রিন্ট ছবি প্রয়োজন। খেয়াল রাখবেন আপনার ছবিটি যাতে গত ৩ মাসের মধ্যে তোলা হয়। সবচেয়ে ভাল হয় এপ্লাই করার ৪-৫ দিন আগে নতুন ছবি তুলে সেটি ব্যবহার করা।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
সিঙ্গাপুর ভিসার জন্য আপনার বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে এবং একাউন্ট এ কারেন্ট ব্যালেন্স মিনিমাম ৬০,০০০ টাকা থাকতে হবে। আপনি যদি ফ্যামিলি হিসাবে আবেদন করে থাকেন তাহলে আপনার মিনিমাম ১,২০,০০০ টাকা থাকতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর অরিজিনাল কপি জমা দেওয়া আবশ্যক। ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর ক্ষেত্রে আপনার পার্সোনাল কিংবা স্যালারি একাউন্ট এর যেকোন একটা দেখাতে পারেন। এক নজরে ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ
-
৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর অরিজিনাল কপি
-
একা যেতে হলে কারেন্ট ব্যালেন্স মিনিমাম ৬০,০০০ টাকা
- ফ্যামিলি সহ যেতে হলে মিনিমাম ১,২০,০০০ টাকা
ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর সাথে আপনাকে আপনার ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট/লেটার জমা দিতে হবে। আপনার ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এ কারেন্ট ব্যালেন্স উল্লেখ করতে পারলে ভাল তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। ব্যাংক সলভেন্সি এর অরিজিনাল কপি জমা দেওয়া আবশ্যক।
বিভিন্ন পেশা অনুযায়ী ভিসার ডকুমেন্ট
যেকোন দেশের ভিসা আবেদনের জন্য আপনার পেশার প্রমাণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক এক পেশার ক্ষেত্রে এক এক প্রকার ডকুমেন্ট প্রদান করতে হয়। নিচে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
চাকুরিজীবী
আপনি যদি চাকুরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে সবার আগে আপনাকে অফিস থেকে NOC (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিয়ে জমা দিতে হবে। NOC-টি অবশ্যই আপনার কোম্পানির অফিশিয়াল প্যাডে থাকতে হবে এবং এতে আপনার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ভ্রমণ ডেস্টিনেশান ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে। অফিসিয়াল প্যাডে থাকার কারণ হলো এতে করে এম্বাসি থেকে আপনার অফিসে ফোন দিয়ে আপনার ব্যাপারে তথ্য জানতে পারে। সেই সাথে আপনার অফিসের ভিজিটিং কার্ড এবং আইডি কার্ডের এর ফটোকপি সাথে দিয়ে দিতে হবে। এক নজরে ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ
-
অফিস থেকে NOC
-
NOC কোম্পানির অফিশিয়াল প্যাডে থাকতে হবে
-
NOC-তে আপনার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ভ্রমণ ডেস্টিনেশান ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে
-
অফিসের ভিজিটিং কার্ড
-
অফিসের আইডি কার্ড
ফ্রিল্যান্সার
আপনি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকলে আপনি যে প্ল্যাটফর্মে কাজ কার করেন, সেই প্ল্যাটফর্মের কিছু প্রমাণ দিতে হবে। যেমনঃ আপনার প্রোফাইল স্ক্রিনশট, আর্নিং হিস্টোরি, ‘Certificate of Earnings’ দিতে পারেন। এক নজরে ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ
-
প্রোফাইল স্ক্রিনশট'
-
আর্নিং হিস্টোরি
-
Certificate of Earnings’ ইত্যাদি
ছাত্র/স্টুডেন্ট
আপনি যদি ছাত্র হন তাহলে আপনার আইডি কার্ড এর কপি দিতে হবে। অনেক সময় আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একটা NOC- (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) এবং রেকমেন্ডেশান লেটার আপনার ছাত্রত্ব প্রমাণ হিসেবে দিতে হবে। এক নজরে ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ
-
স্টুডেন্ট আইডি কার্ড
-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার
-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নো অবজেকশান সার্টিফিকেট
ব্যবসায়ী
ব্যবসায়ী ট্রাভেলারদের ট্রেড লাইসেন্সের কপি জমা দিতে হবে এবং সেই লাইসেন্সে এ আপনার নাম থাকতে হবে। নিজস্ব মালিকানা হলে ট্রেড লাইসেন্স আর লিমিটেড কোম্পানি হলে ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলের কপি জমা দিতে হবে। সেই সাথে ভিজিটিং কার্ড এর কপিও জমা দিতে হবে। এক নজরে ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ
-
ট্রেড লাইসেন্সের কপি
-
লিমিটেড কোম্পানি হলে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল/ কোম্পানি প্যাড
-
ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদি
ডাক্তার/আইনজীবী
ডাক্তার হলে হাসপাতাল থেকে NOC অথবা BMDC সার্টিফিকেট লাগবে। আপনারা ভিজিটিং কার্ড থাকলে সেটার একটা কপি দেওয়া ভাল।আর আইনজীবী হলে বার কাউন্সিল সনদ বা আপনার ল ফার্মের NOC। এক নজরে ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ
-
হাসপাতাল থেকে NOC
-
ভিজিটিং কার্ড
-
BMDC সার্টিফিকেট
-
বার কাউন্সিল এর সনদ অথবা ল ফার্মের NOC
ভিসা রিকোয়েস্ট লেটার এবং লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন (LOI)
ভিসা অফিসার, এম্বাসি অফ সিঙ্গাপুর বরাবর একটা কভার লেটার/ রিকোয়েস্ট লেটার লিখে জমা দিতে হবে। এই কভার লেটারে আপনার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, পেশা, পেশার উপাধি, কবে যেতে চান এবং আপনার ভরণ পোষণ কে বহন করবে এইসব কিছু উল্লেখ থাকতে হবে। ফ্যামিলি নিয়ে গেলে সবার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।সিঙ্গাপুরে ভ্রমণের আগে যেকোন প্রাপ্তবয়ষ্ক ট্রাভেলার (২১ বছর বা অধিক) এর যে কোন স্থায়ী সিঙ্গাপুর নাগরিক কর্তৃক এই লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন ফর্মটি ইস্যু করাতে হবে এবং তা সাথে জমা দিতে হবে।
হোটেল বুকিং এবং রিটার্ন এয়ার টিকেট
সিঙ্গাপুর এ আপনি যেই যেই হোটেলে এ থাকবেন তার একটি কপি ভিসা আবেদনের সময় দিতে হবে। শুধু বুকিং কপি জমা দিলে হবে, কনফার্ম করার প্রয়োজন নেই, ভিসা হলে আপনি আপনার হোটেল বুকিং কনফার্ম করতে পারেন।আপনার বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর এবং ফিরতি এয়ার টিকেট এর বুকিং কপি কিংবা কনফার্ম এয়ার টিকেট এর কপি ভিসা আবেদনের সময় দিতে হবে। আপনার যাত্রার তারিখ কনফার্ম হলে আগে ভাগে কম দামে বা বিশেষ ছাড়ে টিকেট করে ফেলতে পারেন।তাছাড়া ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার সময় নিম্নের ডকুমেন্টস জমা দিতে হবেঃ
-
শিশুদের জন্য জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট বা স্কুল আইডি কার্ডের কপি
-
বিবাহিত হলে ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে
সিঙ্গাপুর ট্রাভেল পরিকল্পনা করুন শেয়ারট্রিপ এর সাথে
শেয়ারট্রিপ এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে সিঙ্গাপুর ভিসা আবেদন করতে পারেন। ফরম পূরণ থেকে শুরু করে আবেদন জমা দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া পর্যন্ত আপনাকে সহায়তা করতে আছে আমাদের সুদক্ষ ভিসা টিম। তাই ঝামেলাবিহীন ভ্রমণের জন্য বেছে নিন শেয়ারট্রিপ-কে। সেই সাথে, শেয়ারট্রিপ আপনাকে দিচ্ছে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা রুটে বিশেষ ফ্লাইট ফেয়ার এবং আপনার পছন্দের সিঙ্গাপুর হোটেল বুকিং এর সুযোগ।
ভিসা ফি: LOI-সাপোর্ট ছাড়া ৩,৬৫০ টাকা / LOI-সাপোর্টসহ ৪,৩০০ টাকা (অফেরতযোগ্য)
ডেলিভারির সময়ঃ ৭ থেকে ১০ কার্যদিবস
ভিসার মেয়াদঃ ৩৫ দিন
ভিসার টাইপঃ ট্যুরিস্ট, একক প্রবেশ
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পূর্ব বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ভিসার রেট পরিবর্তির হতে পারে
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভিসা প্রদানের অধিকার সিংগাপুর দূতাবাস দ্বারা সংরক্ষিত
ভিসা সংক্রান্ত যেকোন তথ্য পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট www.sharetrip.net অথবা শেয়ারট্রিপ অ্যাপ। সিঙ্গাপুর কিংবা যেকোন দেশে ট্রাভেল সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য মেইল করুন vacation@sharetrip.net ঠিকানায় অথবা কল করুন আমাদের হটলাইন নাম্বার +৮৮-০৯৬১৭৬১৭৬১৭।