বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বিভাগীয় শহর বরিশাল, যা ‘বাংলার ভেনিস’ নামক খ্যাতি অর্জন করেছে দেশি এবং বিদেশি পর্যটকদের কাছে। রাজধানী ঢাকা থেকে অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন আর উপভোগ করেন ‘বাংলার ভেনিস’ এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। সেই সাথে এখানে আছে অনেক সুন্দর সুন্দর ট্যুরিস্ট স্পট যা ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে। তবে এত সব স্থানের মধ্যে কোন জায়গায় আগে ঘুরবেন, কিভাবে যাবেন কিংবা কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে থাকে দ্বিধা। তাই এসকল সমস্যা সমাধানে আর আপনার বরিশাল ভ্রমণকে সহজতর করতে আমাদের আজকের বরিশাল ট্রাভেল গাইডটি সাজানো হয়েছে।
কখন বরিশাল ঘুরতে যাব?
যেকোন স্থানে যেতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল টাইমিং, অর্থাৎ আপনি সঠিক সময়ে সেই স্থান ভিজিট করছেন কিনা। এর কারণ হল এক এক স্থান এক এক সময়ে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে ভ্রমনকারীদের মনে এক বিশেষ স্থান দখল করে রাখে। তাই আপনার বরিশাল ভ্রমণের ক্ষেত্রে এদিকটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। শীতকালকে কেন্দ্র করে অনেকে বরিশাল ভ্রমণ এর প্ল্যান করে থাকলেও সবচেয়ে উত্তম সময় হল অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মার্চের শেষ পর্যন্ত। তবে সেই সাথে বর্ষাকালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে ভাসমান পেয়ারা বাগান। তাই সুবিধামত যেকোন সময়ে ঘুরে আসতে পারেন বরিশাল থেকে।
কিভাবে বরিশাল যেতে পারব?
রাজধানী ঢাকা থেকে খুব সহজে বরিশাল যেতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে আপনারা বাস, লঞ্চ, কিংবা বিমানের যেকোন একটি সিলেক্ট করতে পারেন। বরিশাল ভ্রমণের জন্য আগে সবার ফার্স্ট চয়েজ ছিল বরিশালের বিখ্যাত লঞ্চ। আধুনিক বিলাসিতা আর আরামদায়ক যাত্রার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুর সমারোহ আছে এসব লঞ্চে। ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভালো সার্ভিস লঞ্চগুলো হলো- এম ভি মনামী, অ্যাডভেঞ্চার 1, কীর্তনখোলা 2 ও 10, সুন্দরবন 10 ও 11, গ্রীন লাইন ইত্যাদি। লঞ্চে করে বরিশাল যেতে চাইলে আপনাকে রাজধানীর সদরঘাটে যেতে হবে আর সেখান থেকে টিকেট নিতে হবে। লঞ্চের পাশাপাশি সড়কপথে বরিশাল যেতে চাইলে আপনাদের জন্য রয়েছে এসি কিংবা নন-এসি বাসে চড়ে বরিশাল যাওয়ার সুবিধা। এক্ষেত্রে আপনাকে চলে যেতে হবে গাবতলী, সায়দাবাদ কিংবা আব্দুল্লাহপুর আর সেখান থেকে আপনাদের পছন্দের বাসে চড়ে যেতে পারেন বরিশাল। বর্তমানে পদ্মা ব্রিজ হওয়ার সুবাদে অনেকেই নিজস্ব গাড়ি কিংবা ভাড়া গাড়ি করেও বরিশাল যাতায়াত করছেন এবং এতে গড়ে ৬-৭ ঘন্টা সময় প্রয়োজন।
কিন্ত আপনি যদি আরামদায়ক ভ্রমণবিলাসী হয়ে থাকেন এবং খুব কম সময়ে বরিশাল যেতে চান, তাহলে প্লেন এর কোন বিকল্প নেই। রাজধানীর শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে মাত্র ৫০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবেন বরিশাল। এত কম সময়ে এত দূর পথ অতিক্রম করতে পারার কারণে অনেক ভ্রমণপিপাসু বাস কিং লঞ্চ ত্যাগ করে এই বিমান পথেই বরিশাল যেয়ে থাকেন। তবে বরিশালে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আপনার বাজেট কিংবা সময়ের উপর ডিপেন্ড করে আপনি আপনার যাত্রার মাধ্যম সিলেক্ট করতে পারেন।
বরিশালে কোথায় থাকতে পারব?
বরিশালে বেশ কয়েকটি নামকরা হোটেল এবং রিসোর্টস আছে যেখানে আপনি আপনার পরিবার নিয়ে বেশ আরামদায়কভাবে থাকতে পারবেন। এর মধ্যে কয়েকটি আপনার সুবিধার্থে উল্লেখ করা হলো:
হোটেল গ্রান্ড পার্ক
বেলস পার্ক লেকের পাশে কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত হোটেল গ্রান্ড পার্ক (Hotel Grand Park)। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সকল পর্যটকদের একটি সুন্দর গন্তব্য। বর্তমানে বরিশাল শহরে থাকার জন্যে সবচেয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিজনেস কোয়ালিটির সুন্দর হোটেল গ্রান্ড পার্ক।
হোটেল সেডোনা
হোটেল সেডোনা (Hotel Sedona) বরিশালের অভিজাত হোটেল গুলোর মধ্যে একটি। বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে এর অবস্থান। এখানে অবস্থান করে বেশ আরামদায়কভাবে আশেপাশের ট্যুরিস্ট স্পটগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
রিচমার্ট রেস্ট হাউস
বরিশাল ভ্রমণের অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা পাবেন রিচমার্ট রেস্ট হাউসে। রিচমার্ট রেস্ট হাউস (Rich Mart Rest House) এটি প্রিমিয়াম বিজনেস মানের হোটেল যা প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা প্রদান করে। বরিশাল লঞ্চ ঘাটের একদম সামনেই এই হোটেলের অবস্থান এবং অনায়াসে বরিশালের যেকোন প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারবেন।
হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল
এথেনা ইন্টারন্যাশনাল (Hotel Athena International) বরিশালের কাঠপট্টি রোড এ অবস্থিত আর এখানে থেকে যেকোন ট্যুরস্ট স্পট খুব সহজে ঘুরতে এতে পারবেন।
Navigate forward to interact with the calendar and select a date. Press the question mark key to get the keyboard shortcuts for changing dates.
Navigate backward to interact with the calendar and select a date. Press the question mark key to get the keyboard shortcuts for changing dates.
বরিশালের ট্যুরিস্ট স্পট
শাপলা গ্রাম, সাতলা
ইটের শহরের যান্ত্রিকতা ফেলে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে আপনাদের জন্য শাপলা বিল একটি চমৎকার ট্যুরিস্ট স্পট। আর এই মনোরম ভিউ উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে চলে যেতে হবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে, যা বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৬০ কি.মি. দূরে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি 'শাপলার বিল' হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এই সাতলা গ্রামের প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমি নিয়ে শাপলা বিল গড়ে উঠেছে। বিলের যত ভেতরে যাবেন, ততই চোখে পরবে শাপলা ফুলের গালিচা। লাল, সাদা, বেগুণী ৩ ধরনের শাপলা ফুটে থাকলেও, এই বিলের লাল শাপলার সমাহার যেকোন পর্যটকের মন কেড়ে নেয়। বিলের পানিতে ফুটে থাকা হাজারো লাল শাপলা যেন সূর্য্যের লাল আভাকেও হার মানায়। সারাবছরই কম বেশি শাপলা ফুল ফুটে থাকে এই বিলে। মার্চ থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত শাপলার সমারোহ থাকলেও আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বেশি শাপলা ফুটে থাকে। শাপলার অপার সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হতে চাইলে এই তিন মাসের মধ্যেই প্ল্যান করে ঘুরে আসতে পারেন শাপলা বিলে। তবে, শাপলা দেখতে হলে অবশ্যই খুব সকালে যেতে হবে কারণ বেলা গড়ানোর সাথে সাথে শাপলা ফুল মুর্ছে যায়। সাথে সাথে অনেক ফুল ব্যবসায়ীরা শাপলা ফুল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। বিল জুড়ে হাজারো শাপলা কাছ থেকে দর্শন করতে চাইলে এর জন্য আছে নৌকার সুব্যবস্থা। আপনি চাইলেই নৌকায় চড়ে বিলের মাঝে গিয়ে ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে পারেন এই অপরূপ দৃশ্য।
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ঐতিহাসিক নিদর্শন সবর্দাই নজর কাড়ে আর লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি সেক্ষেত্রে কোন অংশেই কম নয়। এটি বরিশাল জেলা সদরের কাশিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত, যা বরিশালের বিখ্যাত জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে শ্মশান মোড় এবং সেখান থেকে লাকুটিয়া বাবুরহাটে যাওয়ার অটোরিক্সা, টেম্পু নিলে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। ৪০০ বছরের পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ, সুবিশাল দীঘি, মাঠ এবং কারুকার্যমন্ডিত জমিদার বাড়ি। এছাড়াও তিনটি মন্দির, দুইটি পুরোনো বাড়ি ও একটি বিশাল দিঘী যেন এর শোভা আরও বাড়িয়ে তোলে। লাকুটিয়া জমিদারদের সব থেকে সুন্দর স্থাপনা হলো মন্দিরগুলো। ওই জমিদার বাড়ির আরও একটি অন্যতম নিদর্শন হলো রাণী দীঘি। এই দীঘিতে প্রতি বছর চারদিক আলোকিত করে ফোটে বড় বড় পদ্মফুল। জলের কিনারা রাঙা দেহে সাজিয়ে তুলতে পদ্মফুল যেন এরই প্রতীক। আপনি অনন্য সুন্দর ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে।
দুর্গাসাগর দিঘী
বরিশাল জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে রানী দুর্গাবতীর দুর্গাসাগর। এটি মূলত একটি বিশাল বড় দীঘি আর এর বিশালতা বুঝানোর জন্য এর নামের সাথে সাগর যুক্ত করা হয়েছে। দুর্গাসাগর দিঘীর তিন দিকে ৩টি ঘাট এবং দিঘীর মাঝখানে একটি টিলা বা ছোট দ্বীপ রয়েছে। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া। দিঘীর উত্তর পাশের বাঁধানো বড় ঘাটটি দিঘীর বৃক্ষঘেরা স্বচ্ছ জলকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে। শীত ও বসন্ত ঋতুর শুকনো মৌসুমে দুর্গাসাগর দিঘীর সৌন্দর্য উপভোগ করার উপযুক্ত সময়। এসময়টা লোকে-লোকারণ্য হয়ে প্রাণবন্ত করে তোলে দীঘি জুড়ে পুরো এলাকা। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অসংখ্য অতিথি পাখির ঝাঁক দেখতে পাবেন যাদের কলকাকলীতে দুর্গাসাগর দিঘী হয়ে উঠে মুখরিত। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দীঘির মাঝখানের পাড়ে আশ্রয় নেয় কিংবা সাঁতার কাটে দীঘির স্বচ্ছ পানিতে। দুর্গাসাগর দিঘীর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সবুজে ঘেরা ছোট একটি দ্বীপ, যা দিঘীর সৌন্দর্যকে আরও বিমোহিত করে তুলে। তবে সেখানে যাওয়ার কোনো মাধ্যম না থাকায় দ্বীপটি দূর থেকেই উপভোগ করতে হয়। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি, প্রভৃতি বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়, যা বর্তমানে দিঘিটির শোভা বর্ধন করে চলেছে। দুর্গাসাগর দীঘির চারপাশ সবুজে আচ্ছাদিত গাছ-গাছালিতে ঘেরা যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
গুঠিয়া মসজিদ
এশিয়ার বৃহত্তম জামে মসজিদগুলোর একটি, গুঠিয়া মসজিদটি বরিশাল বিভাগের উজিরপুর থানার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গুরিয়া গ্রামে অবস্থিত। বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে সুবিশাল ১৪ একর জমিতে এই মসজিদটি অবস্থিত। গুঠিয়া মসজিদ নামে পরিচিত হলেও এর আসল নাম বায়তুল আমান। একটি মসজিদ, সুদৃশ্য মিনার, ২০ হাজার লোকের ধারণক্ষমতার ঈদগাহ্ ময়দান, একটি ডাকবাংলো, এতিমখানা, গাড়ি পার্কিং, পুকুর, লেক এবং ফুলের বাগান নিয়ে গুঠিয়া মসজিদ কমপ্লেক্সটি নিমির্ত হয়েছে। এছাড়াও মসজিদ কমপ্লেক্সে কাবা শরীফ, জমজম কূপের পানি, আরাফার ময়দান, জাবালে রহমত, জাবালে নূর, নবীজীর জন্মস্থান, মা হাওয়া-এর কবর স্থান, খলিফাদের কবরস্থান, অন্যান্য বিখ্যাত মসজিদ এবং বিখ্যাত জায়গার মাটি সংরক্ষন করা আছে, যা দর্শনার্থীরা দেখে বিমোহিত হবেন। ঈদগাহ্ প্রবেশের পথে দুই দিকে দু'টি ফোয়ারা মসজিদের সৌন্দর্য আরও তুলে ধরেছে। পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যতুল্য এই গুঠিয়া মসজিদকে দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন অনেকেই৷ মসজিদে নামায আদায় করতে প্রতিদিন হাজারো দর্শণার্থীর আগমন ঘটে। এই মসজিদটিতে এক সঙ্গে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লী নামাজ পড়তে পারেন।
ভাসমান পেয়ারা বাজার
কেমন হতো, যদি বাংলাদেশেও থাইল্যান্ডের ড্যামনোয়েন সাদুয়াক কিংবা ফিলিপাইনের কাবিয়াও-এর মত ভাসমান বাজার থাকতো? সেসব দেশে তাজা শাকসবজি ও ফলমূলের পসরা সাজিয়ে সারি সারি ভাসমান নৌকায় বসে এসব বাজার। বাংলাদেশেও ঠিক এমনই একটি বাজার রয়েছে, যা বরিশালের ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating Guava Market) নামে বিখ্যাত। ভাসমান এ পেয়ারা বাজার দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা পাড়ি জমান বরিশালে। পেয়ারার মৌসুম সাধারণত চলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। তাই পেয়ারার পাইকারি বাজারের রমরমা পরিবেশ উপভোগ করতে হলে সেখানে যেতে হবে জুলাইয়ের শেষ দিকের সময়টাতে। তবে বছরের আর্দ্র সময়টিতেও ভাসমান বাজারের জমজমাট চিত্র থাকে অপরিবর্তিত।
এ বাগানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে গাছ থেকে হলুদ-সবুজ পেয়ারা তুলে খাওয়ার মত বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা। এরপর কীর্তিপাশা খাল ধরে ছোট নৌকায় চড়ে ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে এগুতে থাকলে বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য্যের দেখা মেলে। দুই পাশের সারি সারি গাছ আর তাদের মাঝে বয়ে চলা খালে ভাসমান বাজারের ব্যস্ত অথচ নির্মল পরিবেশ মনকে করে বিমোহিত। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে এ ভাসমান পেয়ারা বাজার। আঁকাবাঁকা নদী, সুমিষ্ট পেয়ারায় ভর্তি নৌকা ও খালের দু'ধারের সবুজে ঘেরা পরিবেশ একত্রে মিশে সৃষ্টি করে এক স্বর্গীয় অনুভূতি ভাসমান পেয়ারা বাজারের ব্যস্ততম সময় দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৩ টা বা ৫ টা পর্যন্ত। ব্যস্ততা বেশি হলে শেষ বিকেল অবধি গিয়ে গড়ায় বাজার। তাই বাজারের প্রকৃত রূপ উপভোগ করতে এ সময়ের মধ্যে যাওয়াই উত্তম।
শংকর মঠ
আপাতদৃষ্টিতে বরিশালের শংকর মঠকে মনে হতে পারে কেবলই একটি ধর্মীয় উপাসনালয়। কিন্তু ভ্রমণপিয়াসীদের দৃষ্টিতে এটি হলো শত বছরের সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। শুধু তা-ই নয়, শংকর মঠ তৎকালীন ভারতবর্ষের স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন।
শংকর মঠ আশ্রম তৈরীর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্বদেশিকতা। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নেতা সতীশ চন্দ্র মুখোপ্যাধায় (স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী) ১৯১২ সালে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শংকর মঠের অভ্যন্তরে রয়েছে তিনটি কক্ষ। উৎসবের দিনগুলোতে নতুনরূপে সাজে শংকর মঠ। বরিশাল শহরের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয় শংকর মঠ প্রাঙ্গনে। আশ্রম সাজে বর্ণিল আলোকসজ্জায় আর সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকা মেলা দিন-রাত আশ্রমকে করে রাখে উৎসবমুখর। মেলায় দেখা মেলে নানা প্রান্ত থেকে আসা দেশীয় হস্তশিল্পের, সাথে থাকে পিঠাপুলিসহ মুখরোচক খাবারের আয়োজন। এসময় হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমান শংকর মঠ পরিদর্শন ও উৎসবের আমেজ উপভোগ করতে।
বিবির পুকুর
'বিবির পুকুর' খ্যাত বিশালাকার জলাশয়টি অবস্থিত বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে। প্রথম দেখায় এটিকে সাধারণ একটি জলাশয় মনে হলেও একে ঘিরে রয়েছে বরিশালের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। এককালে বিখ্যাত কীর্তনখোলা নদীর সাথে দু'টি সংযোগ ছিল এ পুকুরটির, নিয়মিত হতো জোয়ার-ভাটা। নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত কৃত্রিম জলাশয় 'বিবির পুকুর' ৪০০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮৫০ ফুট প্রশস্ত। বরিশাল নগরী এ পুকুরটিকে ঘিরেই ক্রমে প্রসারিত হয়েছে। এটি বরিশাল নগরীর অন্যতম সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ পুকুর হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ফটোশুট স্পটে। আর এটির আশেপাশে রয়েছে হরেকরকম মজাদার খাবারের স্টল। কর্মব্যস্ত দিন শেষে আড্ডা আর খোশগল্পে মেতে উঠতে স্থানীয়রা পুকুর পাড়ে ভিড় জমান। তাই বরিশালের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় সগর্বে জায়গা করে নিয়েছে ঐতিহাসিক 'বিবির পুকুর'।
অক্সফোর্ড মিশন চার্চ
প্রাগৈতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শনের সাক্ষী হতে ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে যান অক্সফোর্ড মিশন চার্চ (Oxford Mission Church) দেখতে। গ্রিক স্থাপত্য শৈলীর অনুকরণে নির্মিত এ চার্চের অবাক করা সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। শুধু তাই হয়, বাংলাদেশের অন্যতম শৈল্পিক গীর্জা স্থাপত্যের নিদর্শন, অক্সফোর্ড মিশন চার্চকে এশিয়ার ২য় বৃহত্তম চার্চ হিসাবে গন্য করা হয়।
অক্সফোর্ড মিশন চার্চ বরিশাল বিভাগের বগুড়াগামী রোডে অবস্থিত। প্রাচীন এ গীর্জার কেতাবী নাম 'এপিফ্যানি চার্চ' বা 'ইপিফানি চার্চ' হলেও এটি 'অক্সফোর্ড মিশন চার্চ' নামেই পরিচিতি লাভ করে।
৩৫ একর জমির একাংশ জুড়ে নির্মাণ করা হয় চার্চটি। বিস্তৃত চার্চ এলাকা ঘুরে দেখতেই দর্শনার্থীদের পুরো একটি দিন কেটে যায়। প্রাচীর পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই একে একে দৃষ্টিগোচর হয় সবুজ ঘাসের চাদরে ঢাকা মাঠ, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি পাম গাছ, ঘাট বাঁধানো তেরটি ছোট-বড় পুকুর, চোখজুড়ানো ফুলের বাগান ও নানা প্রজাতির ঔষধি গাছের সমারোহ। এখানে আরো আছে অক্সফোর্ড মিশন প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল, লাইব্রেরি, হাসপাতাল, ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল ও খেলা মাঠ। মূল বেদির ওপর স্থাপন করা হয়েছে একটি বিশাল আকৃতির ক্রুশ।
চল্লিশটি খিলানের উপর দাঁড়িয়ে থাকা লাল রঙা অক্সফোর্ড মিশন চার্চ উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। একতলা গীর্জাটি উচ্চতায় পাঁচতলা ভবনের সমান। চার্চটির রয়েছে প্রায় ৫০ ফুট আয়তনের বিশাল প্রার্থনাকক্ষ, যার নান্দনিকতা পর্যটকদের করে বিমোহিত। এটির সিলিং তৈরী করা হয়েছে নকশা খোদাই করা কাঠ দিয়ে এবং মেঝেতে রয়েছে সুদৃশ্য মার্বেল পাথরের টাইলস্। গীর্জার পাশে আছে ফাদার্স হাউস ও মাদার্স হাউস। অক্সফোর্ড মিশন চার্চে আছে আকর্ষণীয় একটি ঘণ্টা। প্রতিদিন নিয়ম করে সাতবার এ চার্চেই বাজানো হয় 'এশিয়ার বৃহত্তম ঘন্টা'। ঘন্টাটির নীচেই রয়েছে চার্চের ছোট্ট অফিস। দিগন্তবিস্তৃত সবুজের মাঝে লাল ইটের তৈরী গীর্জাটি চমৎকার নির্মাণশৈলী ও সুনিপুণ কারুশিল্প দ্বারা স্থান করে নেয় পর্যটকদের মনে। সকাল থেকে বিকেল ৪:০০ টা পর্যন্ত আগত দর্শনার্থীদের জন্য চার্চটি খোলা থাকে।
আপনার বরিশাল ভ্রমন প্ল্যান করুন শেয়ারট্রিপের সাথে
আপনি কি বরিশালের ট্যুরিস্ট স্পটগুলো ভ্রমণে আগ্রহী? তাহলে আপনার শিডিউল ফিক্স করে খুব সহজেই ট্যুর প্ল্যান করুন শেয়ারট্রিপ-এর সাথে। শেয়ারট্রিপ-এ আপনি পাবেন ঢাকা থেকে বরিশাল এবং বরিশাল থেকে ঢাকা রুটের সর্বনিম্ন ফ্লাইট ফেয়ার। যেহেতু টিকেটের মূল্য ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হতে থাকে, তাই আপনি ডেস্টিনেশন সিলেক্ট করার সাথে সাথেই টিকেট বুক করে ফেলুন। এছাড়াও, আপনার বাজেট এবং প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করে নিতে পারেন এক্সক্লুসিভ প্যাকেজ ডিলস। আরো জানতে ভিজিট করুন www.sharetrip.net অথবা ডাউনলোড করুন শেয়ারট্রিপ মোবাইল অ্যাপ। এছাড়াও, যেকোন তথ্য জানতে ইমেইল করুন vacation@sharetrip.net এ অথবা সরাসরি কল করুন +8809617617617 নম্বরে।