পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় মহাদেশ ইউরোপ। গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্তই ৫৪৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ ইওরোপ ভ্রমণে গিয়েছে। আপনিও চাইলে শেয়ারট্রিপের ইউরোপ ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মহাদেশে ঘুরে আসতে পারবেন। আজকের পোস্টে আমরা কম খরচে ইউরোপ ভ্রমণ করতে বাংলাদেশে থেকে ইউরোপ যাওয়ার উপায় নিয়ে কথা বলবো। এসব জানার পর সুবিধামত প্যাকেজে ভেনিস বা প্যারিসের মত ঐতিহাসিক শহরে বেড়িয়ে আসতে পারবেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে সোজা চলে যাই বর্ণণায়।
কিভাবে ইউরোপ ভ্রমণে যাবেন?
ইউরোপ ঘুরে দেখার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো শেনজেন টুরিস্ট ভিসা। এই ভিসা দিয়ে ইউরোপের মোট ২৭টি দেশে ৯০দিন পর্যন্ত অবস্থান করা যায়। এছাড়া শেনজেন ভিসায় পার্শ্ববর্তী আরো ১৩ টি দেশ দেখার সুযোগ থাকে। শেয়ারট্রিপ-এর সাথে যোগাযোগ করে মাত্র ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা খরচ করেই শেনজেন ভিসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারবেন। এরপর এমব্যাসিতে ভিসা ফি পরিশোধ করার পর বিমান টিকেট কিনে বা ইউরোপ ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে চলে যেতে পারবেন উন্নত সভ্যতার জগতে।
ইউরোপের শেনজেন টুরিস্ট ভিসা পেতে কি কি লাগবে?
সাধারণ ভিসার জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে ঠিক সেগুলোই শেনজেন টুরিস্ট ভিসা পেতে দরকার হবে। সাধারণ ভাবে কিছু কাগজপত্র লাগে আর চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্টস দেখানোর দরকার হয়। এগুলো হলোঃ-
সাধারণ যেসব কাগজপত্র দেখাতে হবে
- আবেদন ফর্ম (আবেদনকারীর স্বাক্ষরসহ)
- গত তিন মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের দু কপি ছবি
- ৩ মাসের মেয়াদসহ পাসপোর্ট
- ভ্রমণ প্যাকেজ বা পরিকল্পনার লিখিত বর্ণনা
- রাউন্ড ট্রিপের বিমান টিকেট বা ফ্লাইট নাম্বার
- ট্রাভেল ইনসুরেন্স (যেখানে ৩০ হাজার ইউরোর কাভারেজ থাকবে)
- যেসব হোটেলে ও বাসায় থাকবেন তার বুকিং বা ঠিকানার ডকুমেন্ট
- ইউরোপের থেকে আসা কোনো ইনভাইটেশন লেটার
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা কোনো কোম্পানির স্পন্সরশিপ লেটার
- ভিসা ফি এর জন্য পর্যাপ্ত ব্যালেন্স দেখাবে এরকম প্রমাণপত্র
চাকুরিজীবিদের অতিরিক্ত যা যা দেখাতে হবে
- অফিসের চুক্তিপত্র
- অফিস থেকে ছুটির আবেদন ও অনুমতিপত্রের কপি
- ব্যাংকের গত ৬ মাসের ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট
- নিজস্ব আয়কর রিটার্ন করার ফর্ম
ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত যা যা দেখাতে হবে
- ট্রেড লাইসেন্সের কপি
- প্রতিষ্ঠানের গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্ন ফর্ম
শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত যা যা দেখাতে হবে
- শিক্ষার্থী হিসেবে প্রমাণপত্র বা সার্টিফিকেট
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া “নো অবজেকশন সার্টিফিকেট”
- বাবা-মা অথবা অভিভাবকের সম্মতি (অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে)
অবসরপ্রাপ্তদের অতিরিক্ত যা যা দেখাতে হবে
- সর্বশেষ ৬ মাসের পেনশন স্টেটমেন্ট
ইউরোপ ভ্রমণে কোথায় কোথায় ঘুরবেন?
এবারে আসা যাক আসল প্রশ্নে, ইউরোপে কোথায় ঘুরবেন? ইউরোপে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিময় অনেক দেশ আছে। তার মধ্য থেকে আমরা সবচেয়ে আলোচিত ও সুন্দর ১০টি দেশের তালিকা করেছি। এগুলো হলোঃ- গ্রেট ব্রিটেন, স্পেন, ফ্রান্স, তুরস্ক, ইতালি, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, গ্রিস, রোমানিয়া, ও জর্জিয়া। নাটক-সিনেমাতে অনেকবার আপনারা এই সকল দেশের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো দেখেছেন। চলুন এবার এক নজরে এসব দেশের মূল কিছু আকর্ষণে জেনে নেইঃ-
ব্রিটেন
লন্ডন ভ্রমণ করা সবার জন্য এক স্বপ্ন। এখানে বাকিংহাম প্যালেস, টাওয়ার অব লন্ডন, বিগ বেন, লন্ডন আই, ন্যাশনাল গ্যালারীসহ পৃথিবী বিখ্যাত সব কারুকার্য ও স্থাপনা দেখতে পারবেন। এছাড়া লন্ডনে প্রায় ৩৫০ একরের এক বিশাল হাইড পার্ক আছে । এই পার্কে পৃথিবী বিখ্যাত সব কনসার্ট গুলো দেখা যায়। লন্ডনে সারা বছরই বৃষ্টি হয়। তাই বসন্তের সময় ভ্রমণে যাওয়াই সঠিক হবে।
স্পেন
ইউরোপের বেশি ভ্রমণ করা দ্বিতীয় দেশ হলো স্পেন। এখানে ইউনেস্কো-এর তালিকা করা ৪৭টির বেশি স্থাপনা আছে। মিউজিয়াম, সমুদ্র সৈকত, ও জনবহুল রাস্তার জন্য স্পেনের বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ শহর বেশ বিখ্যাত। এছাড়া গ্রানাডা বা সেভিলের মত শহরে মুরিশ স্থাপনা দেখে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারবেন। এখানে বুল ফাইটিং এর মত দুর্ধর্ষ খেলা দেখা যায়। আরো একটা আকর্ষণীয় বিষয় হলো স্পেনের রেস্তোরা ও রাস্তায় খুবই উন্নত খাবার পাওয়া যায়।
ফ্রান্স
আইফেল টাওয়ারের শহর হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। এখানে আছে লুভর মিউজিয়াম ও ফ্রেঞ্চ রিভেরার মত মনোঃমুগ্ধকর স্থাপনা। ইতিহাসের সাথে মিশে যেতে এখানে ল্যাভেন্ডার ফিল্ড, রোমান্স রুইনস, মন্ট সেইন্ট মাইকেলের মত জায়গা আছে। সারা দেশ জুড়েই দুর্গ আর গীর্জার দেখা পাবেন। এছাড়া সময় কাটানোর জন্য অভিজাত ভবন, রেস্তারা আর কফিশপ পাবেন। খাবার ও রন্ধন শিল্পের জন্য ফ্রান্সের জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বকে ছাড়িয়ে যায়।
তুরস্ক
ইতিহাস, প্রকৃতি আর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এক দেশ তুরস্ক। ইস্তানবুলের হাজিয়া সোফিয়া থেকে ক্যাপাডোসিয়ান চিমনী, সবকিছুই আপনাকে মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে ইফিসাসের রোমান শহর ঘুরে দেখা যায়, পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরে একটা অংশ এজিয়ান সমুদ্র উপভোগ করা যায়। আর সময় কাটানোর জন্য প্রিন্স আইল্যান্ড বা বাটারফ্লাই ভ্যালী এর মত জায়গাগুলো তো আছেই। ভোজনরসিকেরা এখানকার গ্রান্ড বাজারের জনপ্রিয় সব খাবার খেতে পারবে।
ইতালি
পৃথিবী-বিখ্যাত বড় বড় সব ভবন ইতালিতে দেখা যায়। যেমনঃ- রোমে গেলে কোলাসিয়ামগুলো দেখতে পাবেন, আবার ফ্লোরেন্সে গেলে রেঁনেসার সময়কার আর্ট করা ভবন ও শিল্পকর্ম দেখা যায়। ইতালির ভেনিসে সারা শহরই পানির উপরে গড়ে উঠেছে, তাই গন্ডোলায় করে প্রিয় মানুষের সাথে শহড়জুড়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। আর পাহাড়ের গা বেয়ে গড়ে ওঠা শহর দেখতে হলে টুস্কানি আর সিংকি টেরেতে যেতে পারেন।
অস্ট্রিয়া
শিল্প ও ভাস্কর্য-এর দেশ অস্ট্রিয়া। প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ শুধুমাত্র এখানেই ঘুরতে যায়। এখানে ভিয়েনা ও সালসবার্গ-এর মত ঐতিহাসিক শহর আছে। এছাড়া নদীর পাড়ে রূপকথার রাজ্যের মত হালস্টাট গ্রাম দেখতে পারবেন। ভিডিও গেমের মধ্যে যেরকম বরফে মোড়ানো বিল্ডিং থাকে, এখানে ইনসব্রাক শহরে সেরকম বড় বড় বিল্ডিং আছে। সবকিছু দেখা শেষে গ্রসগ্লকনারের পাহাড়ি রাস্তা ধরে প্যানারমিক ভিউ দেখতে দেখতে ফেরা যায়।
জার্মানি
আধুনিক শিক্ষা ও জীবনব্যাবস্থার এক অনন্য উদাহরণ জার্মানি। এখানে একইসাথে ইতিহাস, শিল্প ও রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ব্রান্ডেনবার্গ গেটের মত স্থাপনাগুলো বার্লিন ওয়ালের বিশালতার কথা মনে করিয়ে দেবে। জার্মানিতে হাইকিং করার জন্য প্রচুর পাহাড় ও নদী আছে। রাইন রিভার, কোয়াইন্ট টাউন ও পুরনো দুর্গগুলোতে ঘুরে ভ্রমণ স্মরণীয় করে রাখা যায়। প্রকৃতি ভালবাসলে এখানে থাকা ব্লাক ফরেস্টের মাঝে হারিয়ে যেতে পারেন। বিভিন্ন ক্যাথাড্রেল, পাব আর উৎসবে মুখর স্খানের জন্য জার্মানি ইউরোপের অন্যতম সেরা ভ্রমণ স্থান।
গ্রিস
প্রাচীনকালের আবহে মোড়ানো গ্রিস এক অতুলনীয় ভ্রমণ স্থান। স্পার্টা, অ্যাথেন্স সহ অনেক ঐতিহাসিক নগরীর শুরু হয়েছিল এখানে। হানিমুনসহ বিভিন্ন কাজে আলো ঝলমলে স্যন্টোরিনি ক্লিফ আর মিকোনোতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। গ্রীসেই বিখ্যাত মিটিওরা মোনাস্ট্রি আছে যেখানে শতাব্দী পুরনো সংস্কৃতির দেখা মেলবে। যারা বিভিন্নরকম সীফুড পছন্দ করে তারা গ্রীসের সমুদ্র সৈকতের কাছের গ্রামে যেতে পারেন।
রোমানিয়া
সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর তালিকায় রোমানিয়া উপরের সারিতে থাকবে। পুরাণের গল্প আর প্রকৃতির রুপ একসাথে পাওয়া যায় দেশটিতে। দেশটির ব্রাসোভ-এ রঙ বেরঙের ঘরবাড়ি দেখা যায়। এছাড়া ফাগারাস মাউনটেইন নামে বিশাল উপত্যকা থেকে দূর দূরান্তের দৃশ্য দেখতে পারবেন। রোমানিয়ার অন্যতম আকর্ষণ রঙ করা মোনাস্ট্রিগুলো। রোমানিয়ার রাজধানী বুকারেস্টকে দেশী-বিদেশী পর্যটক ও জনপ্রিয় ব্যক্ত্বিদের মিলনামেলা বলা যায়।
জর্জিয়া
ইউরোপের দেশ হিসেবে জর্জিয়ার জনপ্রিয়তাও কম না। এখানে ১০ মিলিয়ন গ্যালন পানির বৃৃহৎ একুরিয়াম রয়েছে। এছাড়া পৃথিবীর বহু দেশে থেকে মানুষ রক সিটি গার্ডেনের মত পাহাড়ি ঢাল দেখতে যায়। দেশটিতে ২২ একরের বড় অলিম্পিক পার্ক আছে। আবার বার্জিয়া নামের একটা স্থানে পাথরের পাহাড়ের মধ্যে বানানো একটা গ্রাম আছে। আপনি চাইলে সেখান থেকে চিয়াটুরা বা মার্টভি ক্যানিয়নের মত জলপ্রপাতেও যেতে পারবেন। বিভিন্ন রকম অ্যাডভেঞ্চার করে বিচিত্রতা খুঁজে পাবার সেরা জায়গা জর্জিয়া।
কিভাবে কম খরচে ইউরোপ ভ্রমণ করবেন?
অনলাইনে শেয়ারট্রিপের প্যাকেজ নিয়ে ইউরোপে গেলেন, কিন্তু ঘোরাফেরা করার সময় কিছু পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত খরচ কমিয়ে আনতে পারবেন। এবারে আপনাদের জন্য রয়েছে এরকম খরচ কমানোর কিছু টিপস। যা যা করতে পারেনঃ-
- এয়ারপোর্ট থেকে কিছুটা হেঁটে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে যাবেন
- মেট্রো ও বাসের মত পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাবার চেষ্টা করবেন
- প্যারিস, বার্সিলোনা, রোম, বুকারেস্ট, ভিয়েনা এসব স্থানে হেটেই শহর দেখতে পারবেন
- ইউরোপের রেস্তোরাতে ওয়েটারকে ভালো বেতন দেয়, তাই টিপস না দিলেও কোনো সমস্যা হবে না
- কম খরচে খাবারের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ান রেস্টুরেন্ট পাবেন
- প্যাকেজের বাইরে অবস্থানের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করলে হোটেলের তুলনায় খরচ অনেক কম হবে
- কম পরিমানে মোবাইলের ডেটা ব্যবহার করে শহর বেশি উপভোগ করবেন
- খরচের হিসেব ঠিক রাখতে ডলার ও ইউরোর অর্থের পার্থক্য জেনে নিবেন
- সুপার মার্কেট থেকে স্থানীয় জিনিস না কিনে “ক্লিয়ারেন্স” নামক স্থান থেকে কম খরচে কিনতে পারেন
- বিভিন্ন দেশের স্মৃতি রাখতে দামী পোস্ট কার্ড না কিনে নিজের ছবি তুলে রাখতে পারেন
- নাস্তা, পানীয় ইত্যাদি স্থানীয় বার থেকে দাঁড়িয়ে খাবার অভ্যাস করতে পারেন
শেয়ারট্রিপের মাধ্যেমে আপনার ইউরোপ ভ্রমণ হোক আরও সুন্দর!
শেয়ারট্রিপ আপনাকে একই সাথে ভিসা কন্সাল্টেন্সি, আকর্ষণীয় হোটেল ডীলস, ফ্লাইট, ও হলিডে প্যাকেজ সহ সকল সু্বিধা দিতে পারবে। তাই vacation@sharetrip.net-এ ইমেইল করে দরকারি সকল প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পারেন। এছাড়া +8809617617617 নম্বরে কল করেও ইউরোপ ভ্রমণ বিষয়ক যেকোন তথ্য জেনে নিতে পারেন।