কম্বোডিয়ার ভ্রমণ প্যাকেজ থেকে শুরু করে টুরিস্ট ভিসা, ফ্লাইট, হোটেল- সব পেয়ে যাচ্ছেন শেয়ারট্রিপে।
কম্বোডিয়া বাংলাদেশের কাছাকাছি দেখার মত সুন্দর একটি দেশ। বিভিন্ন রকমের মন্দির, দ্বীপ, পর্বতমালা ও ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ এখানকার মূল আকর্ষণ। সুস্বাদু খাবারের রেস্তারা আর ফরাসি ধাচের শিল্পকর্মের জন্যও বেশ জনপ্রিয় দেশটি। শেয়ারট্রিপ-এর মাধ্যমে কম্বোডিয়া ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট এই দেশে। আপনার ভ্রমণ সহজ করতে আজ আমরা কম্বোডিয়া ভ্রমণে কিভাবে যাবেন আর কি কি দেখবেন সেসব নিয়ে আলোচনা করবো।
কিভাবে কম্বোডিয়া ভ্রমণ করবেন?
কম্বোডিয়াতে ভ্রমণ করা বেশ সহজ। আপনাকে ভিসা আবেদন করতে হবে এবং ভালো কোনো বিমানসংস্থার ফ্লাইট বুক করতে হবে। ঢাকা থেকে কম্বোডিয়ার রাজধানী ফা’নম পেন-এর ফ্লাইট পাবেন। এছাড়া ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে সাশ্রয়ী খরচে দেশটির প্রধান পর্যটন স্থান গুলো দেখে আসতে পারবেন।
ঢাকা টু কম্বোডিয়া বিমান ভাড়া
প্রায় ৯টির মত বিমান সংস্থা ঢাকা থেকে কম্বোডিয়ার ফ্লাইট সচল রেখেছে, এবং এদের টিকেট প্রাইস ৩০,০০০ টাকা থেকে শুরু। মনে রাখা ভালো যে বিমান সংস্থা ও যাত্রার সময় বিবেচনা করে এই প্রাইস ওঠানামা করতে পারে। এই রুটে আপাতত কোন ডিরেক্ট ফ্লাইট নেই। থাই এয়ারওয়েজ ও মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স এর মাধ্যমে সবচেয়ে কম সময়ে ঢাকা থেকে কম্বোডিয়া যাওয়া যায়।
বিমান সংস্থাগুলো হচ্ছে:
- মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স
- থাই এয়ারওয়েজ
- চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স
- সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
- ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস
- ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
- এমিরেটস
- চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স
কম্বোডিয়ার ভ্রমণ প্যাকেজসমূহ
আপনি চাইলে ৩ দিন থেকে ১ সপ্তাহের প্যাকেজে কম্বোডিয়া গিয়ে এর অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করে আসতে পারেন। এভাবে এক ভ্রমণে রাজধানী ফা’নম পেন-সহ কাছাকাছি শহর বা দেশগুলিও দেখে আসা যায়। বর্তমানে শেয়ারট্রিপ এরকম ৪টি প্যাকেজ করেছে। সেগুলো হলোঃ
৩ দিনের কম্বোডিয়া ভ্রমণ প্যাকেজ
৩ দিনের প্যাকেজে বিভিন্ন বিলাসবহুল সুবিধা নিয়ে কম্বোডিয়া যেতে পারবেন। এতে প্রথম দিনে ফা’নম পেনে পৌছাবেন, দ্বিতীয় দিনে নিজের মত করে শহর ঘুরে তৃতীয় দিনে ফেরার প্রস্তুতি নিবেন।
- খরচঃ ৭ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা (সুবিধা ও ভ্রমণার্থীর সংখ্যা বিশেষে খরচের তারতম্য হয়)
- বিশেষ সুবিধাঃ মানসম্মত পরিবেশে থাকা ও সকালের নাস্তা করা
৪ দিনের কম্বোডিয়া ভ্রমণ প্যাকেজ
৪ দিনের প্যাকেজে ইংলিশ স্পীকিং গাইডসহ কম্বোডিয়ার উল্লেখযোগ্য সকল দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এতে প্রথম দিনে ফা’নম পেনে পৌছে বিশ্রাম নেবেন। দ্বিতীয় দিন থেকে রয়্যাল প্যালেস, সিলভার প্যাগোডা, ইনডেপেন্ডেনস্স মনুমেন্ট, ন্যাশনাল মিউজিয়াম ও জেনোসাইড মিউজিয়াম দেখা শুরু করবেন। তৃতীয় দিনে ২৫০ বছরের পুরনো ওডোং প্যালেস ও সিলভারস্মিথ ভিলেজ দেখে চতুর্থ দিনে ফেরার প্রস্তুতি নিবেন।
- খরচঃ ৩১ হাজার টাকা থেকে ৯৬ হাজার টাকা (সুবিধা ও ভ্রমণার্থীর সংখ্যা বিশেষে খরচের তারতম্য হয়)
- বিশেষ সুবিধাঃ থাকা, দুপুর ও রাতের খাবারসহ সকল ধরনের সার্ভিস চার্জ
৫ দিনের কম্বোডিয়া ভ্রমণ প্যাকেজ
৫ দিনের প্যাকেজে অভিজ্ঞ গাইডসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে কম্বোডিয়া ঘুরতে পারবেন। প্রথম দিনে ফা’নম পেনে পৌছে বিশ্রাম নিবেন। দ্বিতীয় দিনে টোল স্লেং মিউজিয়াম ও কিলিং ফিল্ড দেখবেন। এরপর সাইক্লো নামের তিন চাকার বাইকে রাইড করে সিলভার প্রাগোডা ও ন্যাশনাল মিউজিয়ামে যাবেন। তৃতীয় দিনে সীম রিপে পৌছে হোটেলে বিশ্রাম নিবেন। পরেরদিন প্রম-এর গাছে মোড়ানো পাথরে মন্দিরসহ কামার রুইনস দেখে অ্যাংকর থম সিটি, এলিফ্যান্ট টেরেস ইত্যাদি দেখে ফিরবেন। পঞ্চম দিনে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিবেন।
- খরচঃ ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকা (সুবিধা ও ভ্রমণার্থীর সংখ্যা বিশেষে খরচের তারতম্য হয়)
- বিশেষ সুবিধাঃ থাকা, খাওয়া, নৌকা ভ্রমণ ও শীততপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িসহ সবখানের প্রবেশ মূল্য
৬ দিনের কম্বোডিয়া ভ্রমণ প্যাকেজ
৬ দিনের প্যাকেজে ভ্রমণের পাশাপাশি সময় কাটাতে দারুণ সব বিনোদন ব্যাবস্থা পাওয়া যায়। এতে প্রথম দিনে ফা’নম পেনে পৌছে বিশ্রাম নেবেন বা নিজের মত শহর ঘুরবেন। পরের দিন রয়্যাল প্যালেস, সিলভার প্যাগোডা, জোনোসাইড মিউজিয়াম, হিল অব প্যাগোডাসহ বিভিন্ন রকম এন্টিক ও প্রসাধণীর দোকান দেখবেন। তৃতীয় দিনে ফা’নম থেকে সিঙ্গাপুর গিয়ে বিশ্রাম নিবেন। পরেরদিন ইউনিভার্সাল স্টুডিও দেখে, বিভিন্ন রকম রাইড নিয়ে ফিরবেন। পঞ্চমদিনে নাইট সাফারিতে দারুণ সব জায়গা ও পশুপাখি দেখে ষষ্ঠ দিনে ফেরার প্রস্তুতি নিবেন।
- খরচঃ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার আশেপাশে (সুবিধা ও ভ্রমণার্থীর সংখ্যা বিশেষে খরচের তারতম্য হয়)
- বিশেষ সুবিধাঃ থাকা, খাওয়া, নাইট সাফারি, এয়ারপোর্ট শাটল সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্থানের প্রবেশমূল্য
কম্বোডিয়ার সেরা দর্শনীয় স্থান কি কি?
ভ্রমণ প্যাকেজে কম্বোডিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা গুলো দেখানো হয়। এছাড়া আপনি সময় নিয়ে অ্যাংকর মন্দির, দক্ষিণের দ্বীপ, ফা’নম পেন, কার্ডামম পর্বতমালা, সীম রিপ, বেতমবাং, প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দিরসহ বেশ কিছু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে মোড়ানো স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। চলুন এক নজরে জেনে নিই এসব জায়গাতে কি কি দেখা যায়ঃ
অ্যাংকর মন্দির
অতীতে খেমার রাজ্যের রাজধানী অ্যাংকর। এখানে অ্যাংকর ওয়াট কমপ্লেক্সে হিন্দু ও বুদ্ধ ধর্মের উপাসনার জন্য মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। বিশাল জঙ্গল পরিষ্কার করে কারুকার্যময় মন্দিরগুলো বানানো হয়। পাথর কেটে মুখের অবয়বে বানানো বেয়ন মন্দিরটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া বিশাল গাছের শিকড় দিয়ে মোড়ানো প্রম নামের একটা মন্দির আছে। পাশেই মায়ান নকশাতে বানানো বেং মিয়ালিয়া নামের মন্দিরও দেখতে পাবেন এখানে।
দক্ষিণের দ্বীপ
কম্বোডিয়ার দক্ষিণের দ্বীপগুলোতে বেশ কিছু সমুদ্র সৈকত আছে। থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়ার মত এখানকার সৈকতগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় পাবেন না, তাই আরামে সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ পাবেন। এখানে কোহ রং নামে একটা সৈকত খুব জনপ্রিয়। এছাড়া কোহ কং নামের একটা দ্বীপ আছে যেখানে এখনো আদিম সভ্যতার নিদর্শন দেখা যায়।
ফা’নম পেন
কম্বোডিয়ার রাজধানী ফা’নম পেনের কথা তো না বললেও চলে! চমৎকার এক শহর এটি। শহরের মূল আকর্ষণ বিলাসবহুল হোটেল এবং সুস্বাদু সব খাবার। এখানে রয়্যাল প্যালেস, জেনোসাইড মিউজিয়াম, ইনডেপেন্ডেন্স মনুমেন্ট, রাশিয়ান মার্কেট, ওট ওনালম মোনাস্ট্রিসহ স্মৃতি বিজড়িত অনেক স্থাপনা আছে। প্রায় সব জায়গাতেই ফরাসি সাম্রাজ্য থাকাকালীন নকশার বাড়িঘর দেখতে পাবেন।
কার্ডামম পর্বতমালা
সুবিশাল প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে কার্ডামম পর্বতমালা কম্বোডিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এই রেইনফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপে বিশ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে বড় বড় গাছপালা রয়েছে। বিশেষ করে স্টাং এরেং উপত্যকা, খানং খার অসমতল ভূমি, বটম সাঁকোর পার্ক এখানকার মূল আকর্ষণ। এখানে ক্যাম্প করে বা লজে থেকে বণ্য প্রাণীর অভয়ারণ্য দেখে নিতে পারবেন।
ক্রাতিয়ে
ফা’নম পেন ও লাওসরে মাঝে সংযোগ তৈরি করেছে এখানকার মেকং নদী। দর্শনার্থীরা মনোরম সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে এখানে আসেন। এখান থেকে কাছেই কোহ ত্রং দ্বীপ। আবার দ্বীপের উত্তর পাশে থাকার জন্য বাসার আদলে করা লজ আছে। এখানে সাইকেল চালিয়ে আশেপাশের গ্রামে ঘোরা যায়। চাইলে প্রিয়জনকে নিয়ে নৌকায় চড়তে পারবেন।
সীম রিপ
সীম রিপের অসাধারণ হোটেল ও রেস্তারাগুলি আপনাকে অভিভূত করবে। এখানে দেখার মত নানান রকম চাইনিজ স্থাপনা, অপ্সরা নৃত্যের আসর, হাতের কারুকাজ করা জিনিস, জেলেপল্লী ও সিল্ক ফার্ম আছে। তনলে সাপ নামক একটা হ্রদে কিছু ভাসমান গ্রামেরও দেখা মিলে। ভ্রমনার্থীরা এখানে রাতের বাজার উপভোগ করতে পারে। সীম রিপে পাখির অবাধ বিচরণের জন্য একটা স্যাংচুয়ারি রয়েছে।
বেতমবাং
ফরাসি ঔপনিবেশের ছাপ পেতে হলে বেতমবাং আপনার জন্য সেরা ভ্রমণ স্থান হবে। এখানকার রেস্তারা ও আর্ট গ্যালারি গুলো দেখে মনে হবে প্যারিসে ভ্রমণে এসেছেন। বেতমবাংয়ের অন্যতম আকর্ষণ হলো বাঁশের তৈরি ব্যাম্বু ট্রেন। রেলে ট্র্যাকের উপর বাঁশের তৈরি ছোট ছোট কোচ নিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হয় এই ট্রেনে। আবার এখানে বেশ কিছু মন্দিরও আছে। এই শহরে মোটামুটি বর্ণিল জিনিসের দেখা পাওয়া যায়।
প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দির
কম্বোডিয়ার ডাংক্রেক নামক পর্বতমালার উপর দাড়িয়ে আছে প্রিয়াহ ভিহিআর মন্দির। খামের রাজ্যের শাসকদের হাতে তৈরি হয় মন্দিরটি। ইউনেস্কো এটাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। চারপাশে মেঘ ও জঙ্গলের মাঝে দাড়িয়ে থাকা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এক অন্যমাত্রার অনুভূতি দেবে। মনে হবে টাইম-ট্রাভেল করে পুরনো রাজা বাদশাহ-দের শাসনামলে চলে গিয়েছেন।
কম্বোডিয়া টুরিস্ট ভিসা কিভাবে পাবেন?
কম্বোডিয়াতে চার প্রকার ভিসা পাওয়া যায়। সেগুলো হলোঃ টুরিস্ট ভিসা, স্টিকার ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। এর মধ্যে ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা নেওয়া বাধ্যতামূলক। শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে সহজে ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
কম্বোডিয়া টুরিস্ট ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় যা যা লাগবে:
- পুরাতন এবং নতুন পাসপোর্ট
- সম্প্রতি তোলা ২ কপি রঙিন ছবি
- ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট (সর্বশেষ ৬ মাসের বিবরণসহ)
- ব্যাঙ্ক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
- ২ কপি বিজনেস ভিজিটিং কার্ড
- ট্রেড লাইসেন্স (নোটারি করা)
- ভিসা ফি
শেয়ারট্রিপের সাথে কম্বোডিয়া ভ্রমণ হবে আরও সুন্দর!
অনেকেই পারিবারিক ভ্রমণ বা হানিমুনের জন্য থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনামে ভ্রমণ করেন। কিন্তু ভ্রমণ মৌসুমে এসব দেশে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় থাকে। তাই যাতায়াত খরচ বেশ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নিরিবিলি ভ্রমণের জন্য কম্বোডিয়া সেরা পছন্দ হতে পারে। পর্যটন নির্ভর দেশ হবার জন্য নিরাপত্তার দিক থেকেও ভ্রমণার্থীরা এখানে স্বস্তি নিয়ে চলাফেরা করতে পারবে। আর ভ্রমণ প্যাকেজে গেলে সাথে বিশ্বস্ত গাইড ও লোকবল সাথে থাকছেই। কম্বোডিয়া ভ্রমনের জন্য যেকোনো রকমের তথ্য পেতে ইমেইল করুন vacation@sharetrip.net -এ এবং কল করুন +8809617617617 নম্বরে।