মিশরের হোটেল, সেরা ট্যুরিস্ট স্পট, মিশরের প্যাকেজ ও ভিসা, এবং ঢাকা টু মিশরগামী ফ্লাইটের তথ্য নিয়ে জানতে পারবেন এই ব্লগে।
ইতিহাস ও সংস্কৃতির ভান্ডারে পূর্ণ দেশ মিশর। এখানকার পিরামিড না দেখলে পৃথিবীর অন্যতম বিরল স্থাপনা দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই আপনার ভ্রমণ সহজ করতে আজ আমরা ঢাকা টু মিশর বিমান ভাড়া-সহ মিশর ভ্রমণে গিয়ে কি কি দেখতে পারবেন তার একটা তালিকা তৈরি করেছি। আজকের লেখা পড়ে আপনি সহজেই ভিসা নিয়ে প্রাচীন সভ্যতার দেশটিতে ঘুরে আসতে পারেন।
মিশর ভ্রমণে কখন ভিসা আবেদন করবেন?
প্রতিবছর ১ কোটির বেশি মানুষ মিশর দেখতে যায়। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি। এত মানুষের ভিড়ে মিশর ভ্রমণের ভিসা পেতে অন্তত মাসখানেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী মিশরের ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সাত থেকে দশ কর্মদিবস লাগবে বলা হয়। কিন্তু দেখা যায়, আবেদনপত্র জমা করা থেকে ভিসা হাতে পেতে বিশদিনের বেশি সময় চলে যায়। তাই যতটা সম্ভব আগে ভিসা আবেদনের প্রস্তুতি নিলে সেরা সিদ্ধান্ত হবে।
ঢাকা টু মিশর বিমান ভাড়া কেমন পড়বে?
গতবছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে মাত্র ৪৫,০০০ টাকায় মিশর ঘুরে আসা যেত। বর্তমানে ঢাকা টু মিশর বিমান ভাড়া কমপক্ষে ৪৯,০০০ টাকা থেকে ৩,৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত, যা সিজন, কেবিন ক্লাস, এয়ারলাইন্স ইত্যাদির কারনে পরিবর্তিত হতে পারে। রাউন্ড ট্রিপে ৭৮,০০০ টাকা থেকে ৩,৮৩,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। ইকোনমিক ও বিজনেক দুরকমের টিকেটই নিতে পারবেন।
মিশরের রাজধানী কায়রো দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান। তাই বেশিরভাগ ভ্রমণপ্রেমী পিরামিড কায়রোতেই অবতরণ করে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঢাকা থেকে কায়রোগামী ১২ টি বিমানসংস্থা রয়েছে। সকল বিমানে ওয়ান ওয়ে ও রাউন্ড ট্রিপের ব্যবস্থা আছে।
ঢাকা থেকে কায়রো যাবার বিমান সংস্থাসমূহ—
কায়রোগামী বিমানগুলো বেশ কয়েকটি দেশের উপর দিয়ে কায়রোতে অবতরণ করে। এই রুটের বেশিরভাগ বিমানই বিলাসবহুল যাত্রী সেবা দিয়ে থাকে। সব মিলিয়ে টিকেটের খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি মনে হতে পারে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মিশরগামী বিমান সংস্থাগুলো হলো—
- কাতার এয়ারওয়েজ
- জাজিরা এয়ারওয়েজ
- ওমান এয়ার
- টার্কিশ এয়ারলাইন্স
- এমিরেটস
- এতিহাদ এয়ারওয়েজ
- কুয়েত এয়ারওয়েজ
- সৌদিয়া এয়ারলাইন্স
- ইজিপ্ট এয়ার
- মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
- শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
মিশরের ভালো থাকার হোটেল কি কি?
- মিশরে গিয়ে কম খরচের হোটেলে থাকার জন্য বার্লিন হোটেল এবং বেল্লা লূনা হোটেল খুঁজে পাবেন। এসব হোটেলের ভাড়া মিশরের অন্যান্য হোটেলের চাইতে তুলনামুলক কম।
- মাঝারি-মানের হোটেলে থাকতে চাইলে পিরামিডস ভিউ ইন্ এবং গোল্ডেন হোটেল কাইরো-তে উঠে যেতে পারেন।
- আর যদি বিলাসবহুল বা ফাইভ-স্টার পরিবেশে থাকতে চান তাহলে কেম্পিনস্কি নীল হোটেল কায়রো এবং সোফিটেল কায়রো ঈল গেজিরাহ বুক করতে পারেন।
পিরামিডস ভিউ ইন্
১০ ফিংস স্ট্রিট, নজলেত-এ-সেমান, গীজা-তে অবস্থিত হোটেল পিরামিডস ভিউ ইন্। বিমানবন্দর থেকে এখানে যেতে ২৫ মিনিট সময় লাগে। হোটেল থেকে ৫ মিনিট হেঁটে মিনি মার্কেট, বেকারী ও ফার্মেসীতে যাওয়া যায়। এমনিতে হোটেলের রুমগুলো বেশ বড়। সময় কাটাতে রুমের ভিতরে চা-কফি বানাতে পারবেন ও বড় পরিবার নিয়ে থাকতে পারবেন।
গোল্ডেন হোটেল
১৩ তালাত হার্ব স্ট্রিটে গেলে গোল্ডেন হোটেল খুঁজে পাবেন। এখান থেকে কয়েক মিনিট হেঁটে মিশরীয় জাদুঘর, নীল নদ ও সাদ্দাত মেট্রো স্টেশনে যাওয়া যায়। এমনিতে হোটেলে মিনিবারসহ যাবতীয় পশ্চিমা আরাম আয়েশের ব্যবস্থা আছে। এখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সারা শহর ঘুরে দেখা যায়।
কেম্পিনস্কি নাইল হোটেল কায়রো
বিমানবন্দর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কর্ণিচ এল নাইল, ১২ আহমেদ রাঘব স্ট্রিটে, গার্ডেন সিটি-তে অবস্থিত কেম্পিনস্কি নাইল হোটেল কায়রো। নীল নদীর তীরের এই হোটেলে বিলাসবহুল সব রুম আছে। পাশাপাশি সুইমিং পুল, বার ও ফিটনেস সেন্টার আছে । এখানকার রেস্তোরাতে ইটালিয়ান খাবারের সুবিধা আছে।
সোফিটেল কায়রো নাইল ঈল গেজিরাহ
৩ নং এল থরা কাউন্সিল স্ট্রিট, জামালেকে গেলে সোফিটেল কায়রো নাইল ঈল গেজিরাহ হোটেলটি খুঁজে পাবেন। এটি একটি বিলাসবাহুল হোটেল। বিমানবন্দর থেকে এর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। পাঁচ তারকা এই হোটেলটি থেকে হেঁটে অপেরা হাউজ ও কায়রো টাওয়ারে যেতে পারবেন। এখানকার রেস্তোরাতে মরোক্কান, ইটালিয়ান, ও মিশরীয়-সহ চার প্রকার খাবার পাওয়া যায়। রুমের বাহারি সাজসজ্জা হানিমুন বা অন্য পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য উপযোগী।
বার্লিন হোটেল
২ নং এল শরবী সড়বে বার্লিন হোটেল অবস্থিত। এটা তাহিরী স্কয়ার থেকে মাত্র ৬০০ মিটার দূরে। কায়রো বিমানবন্দর থেকে এখানে যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগবে। রুম থেকে বড় জানালায় সারা শহরের দৃশ্য দেখা যায়। এখানে মিশরীয় ভাষা ও বেলী ডান্সিং শেখার জন্য ক্লাসের ব্যবস্থা আছে। যারা অতিরিক্ত জাকজমক রুম পছন্দ করেন না তারা এখানে উঠতে পারেন।
বেল্লা লূনা
২৭ তালাত হার্ব স্ট্রিটে অবস্থিত বেল্লা লুনা হোটেল। বিমানবন্দর থেকে ৩০ মিনিটে এখানে যেতে পারবেন। এখানে লন্ড্রি সার্ভিস ও এয়ারপোর্ট শাটল বাসের ব্যবস্থা পাবেন। রুমগুলো বেশ সাধারণ হলেও শোভনীয়। দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য স্টোরেজ রুমের সুবিধা আছে। সব রুমই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
মিশর ভ্রমণে গিয়ে কি কি দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবেন?
মিশরে হাজারো ফারাও স্থাপনার ভিড়ে বিশেষ কিছু স্থান আছে যা না দেখলেই নয়। যেমন– গীজার পিরামিড, মিশরীয় জাদুঘর, খান এল খলিলি বাজার, সালাহ এল দীনের দূর্গ, নীল নদ, আল আজহার মসজিদ, আলেক্সান্দ্রিয়া, সাকারা গ্রাম ও লুক্সর শহর না দেখলে পুরো মিশরই অদেখা থেকে যাবে। তাই এবার আমরা খুব সংক্ষেপে এই জায়গাগুলোর ব্যাপারে জেনে নেবো। সব জানার পর অতিরিক্ত খরচ না করে সরাসরি আপনার পছন্দমত জায়গায় যেতে পারবেন—
১. গীজার পিরামিড
বিশ্বের সপ্তমাশ্চর্যের একটি হলো গীজার পিরামিড। প্রায় ৪,৫৯০ বছর আগের এই স্থাপনায় মমি করা ফারাওদের সমাধি রয়েছে। পিরামিডগুলো বাইরে থেকে দেখতে ৮০০ টাকা ও ভিতরে ঢুতে দেখতে ১৫০০ টাকার টিকেট কাটা লাগে। এমনিতে ৫০ ফুট উপরে ঘুরে দেখা যায়, কিন্তু ভিতরে ঢুকলে খুপড়ি ঘর দিয়ে দশতলার সমান উঁচুতে উঠতে হবে।
২. মিশরীয় জাদুঘর
ফারাওদের ধন-সম্পদ, মমি, মূর্তি ও অস্ত্র গোলাবারুদ-সহ প্রায় ১,২০,০০০-এর বেশি প্রত্মতাত্ত্বিক জিনিসে ভর্তি মিশরীয় জাদুঘর। কায়রোতে অবস্থিত এই জাদুঘর ঘুরে দেখতে হলে ৬০০ টাকার টিকেট নিতে হবে। সোমবার ছাড়া সপ্তাহের যেকোনোদিনই এখানে ঘুরতে পারবেন।
৩. খান এল খলিলি বাজার
কায়রোর অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ খান এল খলিলি বাজার। এই বাজারকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের পুরনো বাজারের একটি বলা যায়। দশম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা করা এই বাজারে জামাকাপড়, প্রসাধনী, মশলা-সহ শত শত ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে পারবেন।
৪. সালাহ আল দীনের দূর্গ
সালাহ আল দীনের দূর্গ বা “কায়রো সিটাডেল” একাদশ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়। বর্তমানে এখানে বেশ কয়েকটি সামরিক ও পুলিশ জাদুঘর আছে। পাশাপাশি বেশ কিছু জনপ্রিয় মসজিদ দেখা যায়। মসজিদগুলোদর কারুকার্য আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে।
৫. নীল নদ
মিশরের নীল নদের কথা জানেনা এমন কেউ নেই! একসময় উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার মূল চালিকাশক্তি ছিল এই নদ। ৬ কিলোমিটারের বেশি লম্বা এই নদী হাজার হাজার বছর ধরে মিশরের জমির সেচকাজে পানি দিয়ে আসছে। অনেক ঐতিহাসিক ছবি ও দলিলে এই বিখ্যাত নীল নদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
৬. আল আজহার মসজিদ
আল আজহার মসজিদ পৃথিবীর অন্যতম ইসলামিক বইয়ের সংগ্রহ আছে। কায়রোর সবচেয়ে পুরনো এই মসজিদটিকে ইউনেস্কো “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট” হিসেবে ঘোষণা করেছে। নবম শতাব্দীর দিকে এটি তৈরি করা হয়। মসজিদের জাদুকরী নির্মাণশৈলী আপনাকে প্রশান্তি দেবে।
৭. আলেক্সান্দ্রিয়া
মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলো আলেক্সান্দ্রিয়া। আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের হাতে নির্মিত এই শহরের সুবিশাল ইতিহাস আছে। এখানে একটা উঁচু “লাইট হাউজ” দেখতে পাবেন। এছাড়া এখানে পাঠাগারসহ অনেক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আছে। ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই শহরে সমুদ্রের দৃশ্য, পম্পি’স পিলার, আবু আল আব্বাস আল মুরসি মসজিদ-সহ বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা আছে।
৮. সাকারা গ্রাম
ছোট ছোট অসংখ্য পিরামিডে বিস্তৃত একটি গ্রাম “সাকারা ভিলেজ”। মৃতদেহের দেবতা সোকারের নাম অনুযায়ী এই গ্রামের নামকরণ করা হয়। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পাথরে নির্মিত দালান রয়েছে। এখানে গেলে প্রাচীন আমলে মিশরীয়রা কিভাবে থাকতো সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।
৯. লুক্সর শহর
নীল নদের পাশে গোলাপী আভায় মোড়ানো শহর লুক্সর। এটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল উড়ন্ত জাদুঘর বলা হয়। কারণ এখানে গ্যাসের বেলুনে চড়ে কর্ণকে অবস্থিত মন্দিরগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। আবার থাকার জন্য “ক্রোকোডাইল রিসোর্ট আইল্যান্ড” নামে একটা মনোরম দ্বীপ আছে।
মিশর ভ্রমণ প্যাকেজ, ভিসা, ফ্লাইট, ও হোটেল- এখন সব শেয়ারট্রিপে!
মিশরের নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব না। তাই আপনাকে চার বা পাঁচদিনের ভ্রমণে যেতে হবে। এজন্য সহজে হোটেল ভাড়া করা থেকে শুরু করে চমৎকার সব মিশর ভ্রমণ প্যাকেজ পেতে ভিজিট করুন শেয়ারট্রিপ হলিডে-তে, মেইল করুন vacation@sharetrip.net অথবা কল করুন +8809617617617 -এই নম্বরে।