শেয়ারট্রিপের ট্রাভেল গাইড আপনার পবিত্র হজ্জ যাত্রা কে সহজ করতে দিচ্ছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
বাংলাদেশ থেকে হজ্জে গেলে সরকারি বা বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জ প্যাকেজ নিতে হয়। হজ্জ প্যাকেজে ফ্লাইট টিকেট, আবাসন, পরিবহন, খাবার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু যারা প্রথমবারের মত হজ্জে যাচ্ছেন বা যেতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে অনেকেই ঢাকা টু জেদ্দা ফ্লাইট প্রাইস, এবং হজ্জের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত নন। চলুন এসব বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
হজ্জ প্যাকেজ ২০২৪-এর খরচ ও সময়সীমা
গতবছরের নভেম্বরে হজ্জ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বেসরকারিভাবে হজ্জের প্যাকেজ ঘোষণা করছে। এবছর যাত্রীসুবিধার কথা মাথায় রেখে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮৩ হাজার টাকার মত খরচ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।২০২৪ সালের হজ্জ যাত্রীদের প্রথমে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়েছে, এবং বাকি টাকা ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে প্রতি বছর-ই হজ্জ প্যাকেজ কেনার জন্য নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা থাকে। চলুন তাহলে প্যাকেজের অন্যান্য তথ্য জেনে নেওয়া যাক—
হজ্জ প্যাকেজের সময়সীমা কতদিন?
সংবাদ সম্মেলনে হজ্জ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি জানান, হজ্জ প্যাকেজে ৩০ থেকে ৪৮ দিনের মেয়াদ থাকবে। এতে হজ্জযাত্রীরা ৫ থেকে ৮ দিন মদিনায় অবস্থান করতে পারবেন। চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে আগামী ১৬ই জুন হজ্জ অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যে এজেন্সির থেকে প্যাকেজ নিবেন তারা আগেভাগেই আপনাকে বাংলাদেশ টু সৌদি টু বাংলাদেশ ফ্লাইট টিকেট,বিস্তারিত কার্যক্রম ও সময় সূচী দিয়ে দেবে।
২০২৪ সালের হজ্জ প্যাকেজে খরচ কত?
২০২৪ সালের সরকারি হজ্জ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বেসরকারি হজ্জ প্যাকেজ খরচ ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। প্যাকেজের ধরন এবং এজেন্সির নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী খরচের তারতম্য দেখা গিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে হজ্জে যাবার আগে আপনার নির্বাচিত এজেন্সির নির্ধারিত প্যাকেজ-ক্যাটাগরি ও শর্তসমূহ অবশ্যই জেনে নিবেন।
এবছর বেসরকারিভাবে দুরকমের সর্বনিম্ন প্যাকেজের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এজেন্সি চাইলে অতিরিক্ত খরচে হজ্জযাত্রীদের আলাদা সুবিধা দিতে পারবে। প্যাকেজ দুটি হলো—
- সাধারণ প্যাকেজ: ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা (সর্বনিম্ন)
- বিশেষ প্যাকেজ: ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা (সর্বনিম্ন)
তবে মনে রাখবেন, হজ্জের সময় কোরবানি দেওয়া বাবদ খরচ হলে সেটা নিজের সঞ্চয় থেকে খরচ করতে হয়। সাধারণত কোনো এজেন্সির প্যাকেজে এটা উল্লেখ করা থাকেনা। তাই নিজে যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সাধারণ প্যাকেজ ও বিশেষ প্যাকেজের পার্থক্য কি কি?
সাধারণ প্যাকেজে হজযাত্রীরা মসজিদুল হারাম থেকে সর্বোচ্চ ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হোটেলে অবস্থান করবেন। অন্যদিকে বিশেষ প্যাকেজে হজযাত্রীরা মসজিদুল হারাম থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে হোটেলে অবস্থান করবেন। এই প্যাকেজে সুষ্ঠুভাবে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া যায়,আবার মক্কায় ২ বা ৩ সিটের নিরিবিলি রুম নেবারও সুবিধা থাকে।
সরকারি ও বেসরকারি হজ্জ প্যাকেজের পার্থক্য কি কি?
সরকারি ভাবে সর্বনিম্ন ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকায় হজ্জ প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়েছে, যা বেসরকারি সর্বনিম্ন প্যাকেজ থেকে কিছুটা কম। বেসরকারি প্যাকেজে খরচ বেশি কারণ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। এগুলো হলো:
- আবাসন: সরকারি হজ্জ প্যাকেজে মক্কা ও মদিনায় মসজিদুল হারাম থেকে সর্বোচ্চ ১ কিলোমিটারের মধ্যে হোটেলে থাকা যায়। অন্যদিকে, বেসরকারি হজ্জ প্যাকেজে মক্কা ও মদিনায় মসজিদুল হারাম থেকে সর্বোচ্চ ১ কিলোমিটার থেকে ৩ কিলোমিটারের ভিতর ভাল মানের হোটেলে থাকা যায়।
- পরিবহন: সরকারি হজ্জ প্যাকেজে হজ্জ যাত্রীরা ঢাকা থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত বিমানে যেতে পারবেন। অন্যদিকে, বেসরকারি হজ্জ প্যাকেজে হজ্জ যাত্রীরা ঢাকা থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত বিমানে গিয়ে এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী সড়কপথেও ভ্রমণ করতে পারেন।
- খাবার: সরকারি হজ্জ প্যাকেজে মক্কা ও মদিনায় থাকাকালীন তিনবেলা নিয়মিত খাবার পাওয়া যায়। এদিকে বেসরকারি হজ্জ প্যাকেজে মক্কা ও মদিনায় থাকাকালীন তিনবেলা খাবারের পাশাপাশি নাস্তা ও ইফতার পাবেন।
- ভিসা: সরকারি হজ্জ প্যাকেজ অনুযায়ী যাত্রীদের ভিসা সৌদি আরবের সরকার থেকে সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে, বেসরকারি হজ্জ প্যাকেজে এজেন্সির সাহায্যে নিজেদের ভিসা সংগ্রহ করতে হয়।
এছাড়া সরকারি প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকালে সাধারণভাবে স্বাস্থ্যসেবা, বীমা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা দেয়া হয়। অন্যদিকে, বেসরকারিভাবে প্যাকেজের ধরন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা, বীমা, বিশেষ পরীক্ষা, গাইড এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হতে পারে।
কোন প্যাকেজ নেওয়া ভাল তা হজ্জযাত্রীর নিজস্ব চাহিদা ও বাজেটের উপর নির্ভর করে। খরচ কমাতে চাইলে সরকারি হজ্জ প্যাকেজ ভালো। কিন্তু ভালো আবাসন, পরিবহন, খাবার, এবং অন্যান্য সুবিধার জন্য শেয়ারট্রিপের মত কোনো এজেন্সির বেসরকারি হজ্জ প্যাকেজ নেওয়া সেরা হবে।
কিভাবে হজ্জ যাত্রা পরিকল্পনা করবেন?
হজ্জ প্যাকেজে সাধারণত ঢাকা টু সৌদি ফ্লাইট রিটার্ন টিকেট সহ অনর্ভুক্ত থাকে। জনসাধারণের ফ্লাইট ও যাতায়াত সহজ করতেই প্রতি বছরই ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ‘হাব’-এর যৌথ আলোচনায় হজ্জ প্যাকেজ নির্ধারিত হয়। তাই যাত্রার আগে ভাল হজ্জ প্যাকেজ নির্বাচন করতে কি কি সুবিধা অন্তর্ভুক্ত আছে তা জানা প্রয়োজন।
হজ্জযাত্রী রা সাধারনণত ঢাকা থেকে জেদ্দাগামী ফ্লাইট ব্যাবহার করে থাকেন, যদিও অল্প সংখ্যক হজ্জ এর ফ্লাইট ঢাকা থেকে মদিনা রুট এও যাতায়াত করে।
হজ্জ প্যাকেজের মধ্যে যা যা অন্তর্ভুক্ত থাকে
হজ্জ প্যাকেজের মধ্যে অনেকগুলো সুবিধা একসাথে পাওয়া যায়। বিশেষ করে বেসরকারি প্যাকেজে সৌদি টু বাংলাদেশ ফ্লাইট টিকেটের সাথে সকল খরচ অগ্রিম পরিশোধ করে দেওয়া যায়। তাই ফ্লাইট আর বাসে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া নিয়ে কোনো ঝামেলা তৈরি হয়না। এবছর বেসরকারি প্যাকেজে ১ লাখ ১৭ হাজার হজ্জযাত্রী বিশেষ তত্ত্বাবধানে যেতে পারবে। চলুন দেখে নেই তারা সর্বনিম্ন প্যাকেজে কি কি সুবিধা পাবে—
- বিমান ভাড়া: ঢাকা থেকে মক্কা ও মদিনা যাতায়াত ও ফিরে আসা
- হোটেল ভাড়া: মক্কা ও মদিনায় থাকার জন্য হোটেল ভাড়া
- খাবার: মক্কা ও মদিনায় থাকাকালীন খাবার ব্যবস্থা
- যাতায়াত: মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যবস্থা
- ভিসা: সৌদি আরবে হজ্জের জন্য বিশেষ ভিসা
- ট্রাভেল এজেন্টের ফি: হজ্জ পালনের জন্য ট্রাভেল এজেন্টের ফি
- জিনিসপত্র: ছাতাসহ প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ
হজ্জে গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় রিয়েল, অন্যান্য কিছু খরচ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। আগেই বলেছি, কোরবানির খরচ রাখা লাগবে কিনা সেটা এজেন্সির সাথে কথা বলে নিশ্চিত করা লাগবে। ফ্লাইট চলাকালীন সময়ে প্রত্যেক যাত্রী দুটি ব্যাগে সর্বোচ্চ ২৩ কেজি মালামাল নিতে পারবে। আর দেশে ফেরার পর হাজীরা ঢাকার বিমানবন্দর থেকে জমজমের পানি সংগ্রহ করতে পারবে, তাই মক্কা মদিনাতে ঘোরার সময় জমজমের পানি সংগ্রহ নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবেনা।
যেভাবে হজ্জের প্রস্তুতি নিবেন
বিগত বছরগুলোতে ৬৫ বছরের উপরের কেউ হজ্জে যেতে পারত না। কিন্তু ২০২৪ সালের হজ্জ প্যাকেজে বয়স নিয়ে কোনো সময়সীমা থাকবে না, অর্থাৎ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। তাই নিজের ও পরিবারের সতর্কতার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা লাগবে—
- আপনার চাহিদা এবং বাজেট অনুযায়ী হজ প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে
- প্যাকেজের শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিতে হবে
- ভালো মানের এবং বিশ্বস্ত হজ্জ এজেন্সি নির্বাচন করতে হবে
- হজ্জের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, দোয়ার বই সংগ্রহ করতে হবে
- জামা-কাপড় ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে হবে
ঢাকা টু জেদ্দা ফ্লাইট প্রাইস কত?
ঢাকা টু জেদ্দা ফ্লাইট প্রাইস ৪৪,০০০ টাকা থেকে শুরু, তবে ভালো ফ্লাইট গুলো ৫৫,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। কম দামী ফ্লাইট গুলোর রুট অনেক বড় হয়ে থাকে, তাই স্বল্প সময়ে ঢাকা টু জেদ্দা যেতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার, ও এয়ার অ্যারাবিয়ার মত এয়ারলাইন্সে ৫৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজাড় এর মধ্যে টিকেট কেনা ভালো। উল্লেখ্য, হজ্জ প্যাকেজে এয়ার টিকেট অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এয়ার এরাবিয়া-তে টিকেট চেক করার পদ্ধতি
অনেক এজেন্সি স্বল্প খরচে ভাল মান পেতে এয়ার এরাবিয়া কোম্পানির বিমানে মাধ্যমে যাত্রীদের হজ্জে নিয়ে যায়। আপনি এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে গেলে অনলাইনে আপনার ফ্লাইটের টাইম ও রিজার্ভেশন চেক করে নিতে পারবেন। এর জন্য কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন—
- প্রথমে এয়ার এরাবিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যাবেন
- এরপর মেন্যু বার থেকে ‘Manage’ বাটনে ক্লিক করবেন
- এবার পেইজে অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন।
- সব অপশনের মধ্য থেকে ‘Modify flight’ বাটনে ক্লিক করবেন
এবার টেক্সট বক্সে আপনার টিকিটে পাওয়া ‘Reservation Number,’ ‘Contact Person Last Name’ এবং ‘Departure Date’ লিখে ‘Continue’ বাটনে ক্লিক করলে টিকেট ও ফ্লাইটের সকল তথ্য সামনে চলে আসবে। টিকেট চেক করতে কোন সমস্যা হলে যেই এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জ প্যাকেজ কিনেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা টু জেদ্দা যায়?
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা থেকে জেদ্দাগামী ফ্লাইট চালু আছে। তবে হজ্জের মৌসুমে সকল এয়ারলাইন্স স্বাভাবিক ওয়ান ওয়ে ও রাউন্টট্রিপ ফ্লাইট নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকে। আপনার এজেন্সি ও প্যাকেজের উপর নির্ভর করবে তারা কোন বিমানের টিকেট রিজার্ভ করবে। অনেক এজেন্সির ওয়েবসাইটে বুকিং ও রিজার্ভেশন চেক করার ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া কল বা ইমেইল করলে তারা দেরি না করে আপনার ফ্লাইটের স্ট্যাটাস জানিয়ে দেবে।
হজ্জ পরিকল্পনা করার সময়ে যা যা মনে রাখবেন
সব মুসলিমের জীবনেই একবার হজ্জ করে নিজেকে পূণ্য করার একটা আকাঙ্খা থাকে। কিন্তু বারবার হজ্জে যাবার সুযোগ সবার হয়ে ওঠেনা। তাই যাত্রা পরিকল্পনা করার সময় সবকিছু ভালোভাবে বিবেচনা করে নিবেন। হজ্জ প্যাকেজ নেওয়ার সময় আপনার বাজেট, প্যাকেজের সুবিধা ও শর্তাবলী ইত্যাদি দেখে সেরা এজেন্সি নির্বাচন করবেন।