বাংলাদেশে থেকে অনেকে মেঘ, ঝর্ণা, স্বচ্ছ পানির নদী ও আদিবাসীদের সুন্দর সব গ্রাম দেখতে মেঘালয় ভ্রমণ করে। মেঘালয়ের শিলং শহরকে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে হবার কারণে কম খরচে শিলংসহ আশেপাশের অঞ্চল ঘুরে আসা যায়। ভ্রমণ সহজ করতে আজ আমরা মেঘালয় ভ্রমণ গাইড নিয়ে হাজির হয়েছি। চলুন একনজরে মেঘালয় ভ্রমণের সময়, খরচ, হোটেল, রিসোর্ট ও ফ্লাইট সম্পর্কে জেনে নিই।
মেঘালয় ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
মেঘালয় ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুলাই-আগস্ট মাস। যেহেতু শিলং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৯৬০ মিটার উপরে অবস্থিত, তাই জুলাই-আগস্ট মাসে বর্ষা মৌসুমে এখানে মেঘের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি থাকে। আর বৃষ্টিস্নাত শিলং উপভোগ করতে হলে এসময় ভ্রমণ করা ভাল হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এলিফ্যান্ট ফলস, উমিয়াম লেক, সেভেন সিস্টার্স ফল, নোকালিকাই ফলসহ অনেক ঝর্ণা ও গুহা অপরূপ রূপে ফুটে ওঠে।
মেঘালয়ের থাকার হোটেলসমূহ
আদিবাসী গ্রাম ও ঝর্ণা কাছাকাছি হবার কারণে বেশিরভাগ দর্শনার্থী শিলং-এর হোটেলগুলোতে থাকতে পছন্দ করে। এখানে সাশ্রয়ী খরচে থাকার জন্য হোটেল ইয়ালানা, হোটেল পোলো টাওয়ারস শিলং ও হোটেল বারবারেক বেশ জনপ্রিয়। আবার অতিথিরা অভিজাত পরিবেশে পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে ক্যাফে শিলং বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট ও হোটেল সেন্টার পয়েন্ট বেশ পছন্দ করে। এবারে এক নজরে হোটেলগুলোর সুবিধা ও মান নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাকঃ
-
হোটেল ইয়ালানা
সাশ্রয়ী খরচে থাকতে হোটেল ইয়ালানা আপনার জন্য ভালো হবে। হোটেলটি লাইতুমখ্রা এর মূল সড়কে অবস্থিত। ছোটখাট হোটেলটিতে বেশ পরিবার বান্ধব পরিবেশে রয়েছে। এখানে রুম সার্ভিস বেশ ভালো এবং রুমে ইন্টারনেটসহ যাবতীয় সকল সুবিধা পাবেন। নিজস্ব গাড়ি থাকলে বিনামূল্যে পার্কিংয়ের জায়গা পাবেন। এছাড়া খাবার জন্য হোটেলের সাথেই রেস্তোরা আছে। রেস্তোরাতে জনপ্রিয় ভারতীয় ও বিদেশী খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশিরা এখানে থেকে নিজের দেশের মতই অনুভূতি পাবেন।
-
হোটেল পোলো টাওয়ারস শিলং
শিলংয়ের পোলো গ্রাউন্ডের মূল সড়কে অবস্থিত হোটেল পোলো টাওয়ারস শিলং। গাড়িতে এয়ারপোর্ট থেকে এখানে যেতে ৫০ মিনিট আর গুয়াহাঁটি রেলস্টেশন থেকে যেতে আড়াই ঘন্টার মত সময় লাগে। হোটেলে কাঠের ফ্লোরের রুমগুলো খুবই সুন্দরভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা। সব রুমে সিটিং এরিয়া, ইলেক্ট্রিক কেটল এবং শৌচাগারে উন্নতমানের শাওয়ারের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া খাবার জন্য জিঞ্জার নামের একটা মাল্টি ক্রুজিন রেস্তোরা আছে যেখানে ভারতীয়, এশিয়ান ও চাইনিজ খাবার খেতে পারবেন।
-
হোটেল বারবারেক
এয়ারপোর্ট গাড়িতে করে থেকে ১ ঘন্টায় হোটেল বারবারেক-এ পৌছাতে পারবেন। বড় বাজার থেকে ২০০ মিটার দূরে এটি অবস্থিত। এখানে অনেকগুলো বেডসহ রুম পাওয়া যায়, তাই বড় পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ট্যুরের জন্য বেশ ভাল। অতিরিক্ত জিনিস রাখার জন্য বড় স্টোরেজ রুম আর মিটিং করার জন্য কনফারেন্স রুমের সুবিধা পাবেন। খাবার জন্য জনপ্রিয় ভারতীয় ও চাইনিজ খাবার পাবেন। এছাড়া হোটেল থেকে গাড়ি ভাড়া করে শিলং ঘুরে দেখতে পারবেন।
-
ক্যাফে শিলং বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট
রিসোর্ট ও বাংলো এর মিশ্রণে বানানো দুর্দান্ত থাকার জায়গা ক্যাফে শিলং বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট। এয়ারপোর্ট থেকে এখানে যেতে ১ ঘন্টার মত সময় লাগে। হোটেলের রুমগুলো প্রশস্ত্ব এবং অনেক জানালা রয়েছে। এছাড়া ড্রয়িং রুমের মত সিটিং এরিয়াতে একসাথে বসে গল্প করতে বা টিভি দেখতে পারবেন। কিচেনের সকল জিনিসপত্র পাবেন এবং সময় কাটানোর জন্য হোটেলের প্রাঙ্গণে গলফ খেলতে পারবেন। যারা একান্ত ব্যক্তিগত থাকার জায়গা পছন্দ করেন তাদের জন্য এই হোটেলটি সেরা হবে।
-
হোটেল সেন্টার পয়েন্ট
গুয়াহাঁটির কাছে অবস্থিত হোটেল সেন্টার পয়েন্ট। এখান থেকে শিলং এয়ারপোর্ট যেতে দেড় ঘন্টার মত সময় লাগে। হোটেলের কাঠের ইনটেরিয়ার ও আসবাবপত্রের সাথে ঝলমলে আলোকসজ্জা আপনার ভাল লাগবে। রুমের বড় জানালা দিয়ে বাইরের প্যানারমিক ভিউ পাবেন। তাই একসাথে আভিজাত্যের ছোঁয়া ও স্বস্তি পেতে চাইলে এখানে উঠতে পারেন। হোটেলের লাউঞ্জে প্রাইভেট পার্টি করার সব ব্যাবস্থা আছে। খাবার জন্য এখানে লা গ্যালারি, ক্লাউড নাইন আর স্কাই এশিয়া নামে তিনটি মাল্টি ক্রুজিন রেস্তোরা আছে।
মেঘালয় ভ্রমণ গাইডঃ সেরা প্যাকেজ ও দর্শনীয় স্থানসমূহ
মেঘালয় ভ্রমণের সেরা প্যাকেজ
শেয়ারট্রিপের হলিডে প্যাকেজের মাধ্যমে মেঘালয় ভ্রমণ খরচ বেশ কমিয়ে আনতে পারেন। এতে সেরা হোটেলে থাকার পাশাপাশি লাঞ্চ, ডিনার ও যাতায়াত সুবিধাসহ শিলং ঘুরে দেখা যায়। বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড, ডিলাক্স ও সুপেরিয়র মানের তিনরকম সুবিধার ৫ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজ পাবেন। চলুন এই প্যাকেজের মূল আকর্ষণ গুলো দেখে নিইঃ
৫ দিনের প্যাকেজে শিলং ভ্রমণ গাইডঃ
- প্রথম দিনে গুয়াহাঁটি এয়ারপোর্ট থেকে ১৩০ কিমি দূরে শিলংয়ে পৌছাবেন। নির্ধারিত মানুষ আপনাকে রিসিভ করবে এবং কামাখ্যা দেবীর মন্দির দেখা শেষে হোটেলে নিয়ে যাবে।
- দ্বিতীয় দিনে শিলং থেকে চেরাপুঞ্জিতে যাবেন। সেখানে নোকালিকাই ঝর্ণা ও মোসমাই গুহা দেখা শেষে এলিফ্যান্ট ঝর্ণা ও শিলংয়ের সর্বোচ্চ চূড়া দেখা শেষে হোটেলে ফিরবেন। অবসরে শিলংয়ের ওয়ার্ড লেক, বোটানিকাল গার্ডেন, মিনি জু আর স্টেট মিউজিয়াম দেখতে পারেন।
- তৃতীয় দিনে শিলং থেকে ৯০ কিমি দূরে ভারতের সবচেয়ে পরিষ্কার মলিনং গ্রাম দেখবেন। এরপর বাংলাদেশের কাছে অবস্থিত ডওকি গ্রামের সতেজ প্রকৃতি ও পাহাড় দেখে শিলংয়ে হোটেলে ফিরবেন।
- চতুর্থ দিনে আবার গুয়াহাঁটি ফিরে আসবেন। এখানে কামাখ্যা মন্দির ঘুরে ও আলফ্রেসকো নদীতে ক্রুজ ট্যুরের মাধ্যমে আনন্দে দিন অতিবাহিত করবেন। চাইলে এখান থেকে বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা ও করতে পারেন।
- পঞ্চম দিনে সবকিছু গুছিয়ে শিলং হোটেল থেকে দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিবেন।
৫ দিনের প্যাকেজে বিশেষ সুবিধা সমূহঃ
- উন্নত মানের ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার করার ব্যাবস্থা থাকবে
- যাতায়াত, পার্কিং ও ড্রাইভিং সার্ভিসের সকল খরচ অন্তর্ভুক্ত হবে
- অতিরিক্ত ট্যাক্স ও সার্ভিস চার্জের খরচ অন্তর্ভুক্ত হবে
- গুয়াহাঁটিতে পৌছানোর পর দরকার মত সহায়তাকারী পাবেন
মেঘালয় ও শিলংয়ের দর্শনীয় স্থানসমূহ
১. মলিনং গ্রাম
মলিনং এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম। এখানে বাঁশের তৈরি ব্রিজ, বিভিন্ন তৈজসপত্র, উমগট নদী ও পাহাড়ি সংস্কৃুিত সহ দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। এখানকার জনসংখ্যা ১৫০০ জন এবং সবাই খ্রিস্ট ধর্মবলম্বী। গ্রামে তিনটি চার্চ রয়েছে।
২. উমিয়াম লেক
উমিয়াম লেকের আরেক নাম বড় পানির লেক। এখানে বিশাল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। আগে এখানে খাসি উপজাদির বসতি ছিল। ১৯৬০ সালের পর হ্রদ ও বাধ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এখানকার লেকের সাথে স্কটল্যান্ডের লেকের অনেক মিল পাওয়া যায়।
৩. চেরাপুঞ্জি
বৃষ্টির জন্য বিখ্যাত এশিয়ার চেরাপুঞ্জি। এখানের রেইনফরেস্টে জীবন্ত লতাপাতা ও রাবার গাছের তৈরি ব্রিজ আছে। ভ্রমণার্থীরা এখানে এসে সেভেন সিস্টার্স ঝর্ণা, নোকালিকাই ঝর্ণা, আরওয়া গুহাসহ খাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন দেখতে পছন্দ করে।
৪. শিলং পীক
শিলংয়ের সর্বোচ্চ চূড়া শিলং পীক। এখানকার উপত্যকা থেকে সারিবাঁধা পাহাড়ের পাশাপাশি হিমালয়, শহর, ঝর্ণা ও বাংলাদেশের অনেকখানি দৃশ্য দেখা যায়। এখানে একটা টাওয়ারে দূরের জিনিস ঠিকভাবে দেখার জন্য বড় টেলিস্কোপ বসানো আছে।
বাংলাদেশে থেকে মেঘালয়ের ফ্লাইটসমূহ
ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ইন্ডিগো-এর ফ্লাইটে সরাসরি ট্রিপের মাধ্যমে শিলং এয়ারপোর্টে যেতে পারবেন। অনেকসময় খারাপ আবহাওয়ার জন্য শিলং এয়ারপোর্টে ফ্লাইট থাকেনা। এমন অবস্থায় ঢাকা থেকে গুয়াহাঁটিতে নেমে সেখান থেকে শিলং যেতে হবে।
ঢাকা টু গুয়াহাঁটি ফ্লাইট খরচ
বাংলাদেশ থেকে এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্টারা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউ.এস. বাংলা এয়ারলাইন্স-এর গুয়াহাঁটিগামী ফ্লাইট পাবেন। আর ঢাকা টু গুওয়াহাট ফ্লাইট টিকিট প্রাইস ১১,০০০ টাকা থেকে শুরু। মনে রাখা ভালো যে এয়ারলাইন্স, রুট, ফ্লাইটের সময়, ও ডিমান্ড অনুযায়ী ভাড়া কম বেশি হতে পারে। শেয়ারট্রিপের ফ্লাইট পেইজটিতে গিয়ে পছন্দের এয়ারলাইন্সের টিকেট বুক করতে পারেন।
ভিসা পেতে যা যা লাগবে
শিলং ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই আপনার ইন্ডিয়ান স্টিকার ভিসা থাকতে হবে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সব ধরনের সহায়তা পেতে ভিসা আবেদন পেইজটি দেখতে পারেন অথবা visa@sharetrip.net-এ ইমেইল করতে পারেন। ভিসা পেতে নিচের ডকুমেন্টসগুলো দরকার হবেঃ
চাকুরীজীবিদের জন্যঃ
- ২ টি সাদা পাতা ও ছয় মাসের বৈধতাসহ পাসপোর্ট
- তিন মাসের মধ্যে তোলা ২*২ সাইজের রঙিন ছবি
- নো অবজেকশন সার্টিফিকেট
- করোনা সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি
- ম্যারেজহ সার্টিফিকেটের কপি
- অফিস আইডি কার্ডের কপি
- এনআইডি কার্ডের কপি
- অফিসের ভিজিটিং কার্ড
- অফিস থেকে চাকুরিজীবি হিসেবে প্রমাণপত্র
- তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
ব্যাবসায়ীদের জন্যঃ
- ২ টি সাদা পাতা ও ছয় মাসের বৈধতাসহ পাসপোর্ট
- তিন মাসের মধ্যে তোলা ২*২ সাইজের রঙিন ছবি
- এনআইডি কার্ডের কপি
- বিজনেস ভিজিটিং কার্ড
- অফিসের প্যাডের ২টি কপি
- নোটারি পাবলিক সহ ট্রেড লাইসেন্সের কপি
- এনআইডি কার্ডের কপির সাথে গত ৩ মাসের মধ্যে আসা ইলেক্ট্রিক, গ্যাস বা টেলিফোনের বিলের কপি
- তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
মেঘালয় ভ্রমণের সতর্কতা
- শিলংয়ের পুলিশ বাজারে কেনাকাটা ও মানি এক্সচেঞ্জ করবেন
- স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও মহিলাদের ছবি তোলার আগে অনুমতি নিবেন
- রেইন কোট ও ট্র্যাকিং স্যু সাথে রাখবেন
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার মেঘালয় ভ্রমণ হোক আরও সুন্দর!
মেঘালয় ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম। অ্যাডভেঞ্চার ও পাহাড়প্রেমীদের জন্য স্বর্গরাজ্য বলা যায়। তাই পর্যাপ্ত সময় থাকলে মেঘালয়ের শিলং ও চেরাপুঞ্জী ভ্রমণের সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা উচিৎ নয়। মেঘালয় যেতে যেকোনো ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা পেতে ইমেইল করুন vacation@sharetrip.net -এ এবং কল করুন +8809617617617 নম্বরে।