ইতিহাস, ঐতিহ্য, ও সংস্কৃতিতে ঘেরা ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামকে মধ্যবিত্তদের সেরা পর্যটন স্থান বলা যায়। এখানকার রাস্তাঘাট, শপিং মল, লেক, ও রেস্তোরা, সবকিছুই ট্রাভেলারদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই আজ আমরা ভিয়েতনামের দর্শনীয় স্থান, ঢাকা টু ভিয়েতনাম বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া ও ভিয়েতনামের ভিসা আবেদন করার নিয়ম আলোচনা করবো।
৭টি বিমান সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে যেতে পারবেন। এখানে বিভিন্ন খরচে থাকার জন্য ৬টি হোটেল ও হোস্টেল রয়েছে। সহজেই সেরা হোটেলে থেকে হ্যানয় শহরে ১০টির বেশি স্থানে ঘুরতে পারবেন। চলুন এসবকিছু এবার বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক!
কিভাবে বিমানে ঢাকা থেকে ভিয়েতনাম যাবেন?
দুটি দেশী আর পাঁচটি বিদেশী সংস্থা বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে বিভিন্ন মানের ফ্লাইট চালু রেখেছে। ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ছাড়া সকলেই ফিরদিত টিকেটের ব্যবস্থা রেখেছে। বর্তমানে ৭টি আলাদা বিমানে ঢাকা থেকে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়-এ অবতরণ করতে পারবেন।
ঢাকা টু ভিয়েতনাম যাবার বিমানসমূহ—
- থাই এয়ারওয়েজ
- চাইনিজ ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স
- ফ্লাই এমিরেটস
- চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স
- মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
- ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
ঢাকা টু ভিয়েতনাম বিমান ভাড়া—
বিমান ভাড়া কখনো নির্দিষ্ট থাকেনা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাপ্তাহিক ছুটি, ফ্লাইটের সময় ও মৌসুম অনুযায়ী ভাড়া কম-বেশি হতে পারে। তবে আপনি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে ৪৩,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১,৯০,০০০ হাজার টাকায় ওয়ান ওয়ে ট্রিপ এবং ৭৩,০০০ টাকা ধেকে শুরু করে ২,৭০,০০০ টাকায় রাউন্ড ট্রিপের টিকেট পেয়ে যাবেন। নতুন বছরে ভাড়ায় হয়তো কিছুটা তারতম্য দেখা যেতে পারে।
ভিয়েতনামের কোন হোটেলে থাকবেন?
অন্যান্য দেশের তুলনায় ভিয়েতনামের হোটেল ভাড়া অনেক কম, আরাম আয়েশের সুযোগও অনেক বেশি।
- বিলাসবহুল পরিবেশে থাকার জন্য ডায়মন্ড ওয়েস্টলুক স্যুট ও গ্র্যান্ড প্লাজা হ্যানয় হোটেল আছে।
- কম খরচে ভাল সুবিধা পাওয়ার জন্য সমারসেট গ্র্যান্ড হ্যানয় ও হ্যানোয়িয়ান সেন্ট্রাল হোটেল অ্যান্ড স্পা ভালো চয়েস।
- একা ভ্রমণে গেলে একেবারে কম খরচে থাকতে হ্যানয় ওল্ড কোয়ার্টার্স ব্যাকপ্যাকার্স হোস্টেল ও হ্যানয় কোজি হোস্টেল রয়েছে।
চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক:
ডায়মন্ড ওয়েস্টলেক স্যুট
ঠিকানা: ৯৬ টো নক ভ্যান স্ট্রিট, কোয়াং এন, তাই হো, হ্যানয়
হ্যানয়-এর হো তাই লেকের পাশে কোয়াং অ্যান নামক স্থানে গেলে ডায়মন্ড ওয়েস্টলেক স্যুট হোটেল পাবেন। হোটেলে বাচ্চাদের রাখার রুম, টেনিস-ব্যাডমিন্টন-গলফ খেলার জায়গা, সুইমিং পুল ও গরম বাষ্প দিয়ে গোসলের জায়গা আছে। রুম গুলা পরিবার নিয়ে থাকার মত এবং রুম থেকে সরাসরি লেক দেখা যায়।। রুমের মধ্যে সবরকম আসবাবপত্র, কিচেন ও ডাইনিং সুবিধা আছে। বিলাসবহুল এসব সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া কিছুটা কম। এখানে ভাড়া প্রায় ৮,০০০ টাকা, যা সিজন ও রুম অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
গ্র্যান্ড প্লাজা হ্যানয়
ঠিকানা: ১১৭, ট্রান দুই হাং, কাও জিয়াই, হ্যানয়
হ্যানয় বিমানবন্দরের ২৩ কিলোমিটার দূরে পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড প্লাজা হ্যানয় অবস্থিত। এখান থেকে হেঁটে বিখ্যাত কিয়াংমাং হ্যানয় ল্যান্ডমার্ক টাওয়ারে যাওয়া যায়। সারা হোটেল রাজকীয় কার্পেটে মোড়ানো। হেয়ার ড্রাইয়ার ও অন্যান্য সুবিধা সহ কাচের বাথরুম আছে। খাওয়ার জন্য হোটেলে সবসময় রেস্তোরা খোলা পাবেন। এখানে বিকেলের নাস্তা ও বিনোদনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও হোটেলটি পরিবার নিয়ে থাকার জন্য সেরা হবে। যেহেতু এটি একটি পাচ-তারকা হোটেল, তাই ভাড়া প্রায় ১৩,০০০ টাকা যা সিজন ও রুম অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
সমারসেট গ্র্যান্ড হ্যানয়
ঠিকানা: ৪৯ হাই বা ট্রুং স্ট্রিট, হোয়ান কিয়েম, হ্যানয়
বিমানন্দর থেকে সমারসেট গ্র্যান্ড হ্যানয় হোটেলে যেতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। এখান থেকে ১৫ মিনিটে হোয়ান কিয়েম লেক, পুরনো কোয়ার্টার এলাকা, ক্যাথেড্রাল ও অপেরা হাউজে যাওয়া যায়। হোটেলের মধ্যে পুল ও শরীরচর্চা কেন্দ্র আছে। ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত বড় জানালায় সারা শহর দেখা যায়। রুমের মধ্যে চেয়ার, টেবিল, সোফা-সহ সকল আসবাবপত্র ও বাচ্চাদের খেলার জায়গা আছে। ১০,০০০ টাকায় সুন্দর পরিবেশে থাকতে চাইলে এই হোটেলটি বেছে নিতে পারেন।
হ্যানোয়িয়ান সেন্ট্রাল হোটেল অ্যান্ড স্পা
ঠিকানা: ৪২/এ হ্যাং কট স্ট্রিট, হোয়ান কিয়েম, হ্যানয়
পুরনো কোয়ার্টারের কাছে এই হোটেলটিতে যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। এখান থেকে ১০ মিনিট হেঁটে ওয়াটার পাপেট থিয়েটারে যেতে পারবেন। হোটেলে কাঠের ফ্লোরের রুমগুলি অনেক পরিচ্ছন্ন। রুমের মধ্যে ফ্রিজ ও ইলেক্ট্রিক কেটলি পাবেন। এছাড়া রেস্তোরায় ভিয়েতনামী ও পশ্চিমা খাবার পাওয়া যায়। হোটেলে ডলার থেকে ভিয়েতনামী ডং ভাঙানোর সুবিধা আছে। মধ্যবিত্তদের থাকার জন্য এই হোটেলে কম টাকায় বড় রুমের ব্যবস্থা আছে। এখানে ভাড়া প্রায় ৭,০০০ টাকা, যা সিজন ও রুম অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
হ্যানয় ওল্ড কোয়ার্টার্স ব্যাকপ্যাকার্স হোস্টেল
ঠিকানা: ২৮ ফো নুয়েন সিউ, হোয়ান কিয়েম, হ্যানয়
হ্যানয় পুরনো সিটি গেট থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরেই হ্যানয় ওল্ড কোয়ার্টার্স ব্যাকপ্যাকার্স হোস্টেলটি পাবেন। এর খুব কাছেই হ্যানয় অপেরা হাউজ ও সিটাডেল অবস্থিত। এখানে প্রত্যেকটি রুমের সাথে ব্যক্তিগত ওয়াশরুম আছে। ভেজিটেরিয়ানরা সকালের নাস্তায় নিরামিষ খেতে পারবেন। হোস্টেলে ইংরেজি, ভিয়েতনামী, ফ্রেঞ্চসহ বিভিন্ন ভাষার গাইড পাওয়া যায়। যেহেতু এখানের ভাড়া ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা, তাই একা কোথাও ঘুরতে গেলে এখানে উঠে যেতে পারেন. মনে রাখা ভালো সিজন ও রুম অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে।
হ্যানয় কোজি হোস্টেল
ঠিকানা: ১৬ পি, ফুং হোং, হাং মা, হোয়ান কিয়েম, হ্যানয়
ডং জুয়ান মার্কেট থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরেই হ্যানয় কোজি হোস্টেল। এখানে খুব কম খরচে সাধারণ মানের রুম পাওয়া যায়। হোস্টেলে আমেরিকান নাস্তা খাওয়া যায়। কাছাকাছি কোথাও হাইকিং-এর জন্য একা ভ্রমণ করলে হোস্টেলটি আপনার জন্য সেরা হবে। এখানে একজন, দুজন ও দুইয়ের বেশি মানুষ থাকার জন্য রুম ও দোতলা বেড রয়েছে। বন্ধুদের নিয়ে সীমিত খরচে ভ্রমণে গেলে মাত্র ৫০০ থেকে ৮০০ টাকাতে এই হোস্টেলে থাকতে পারবেন। তবে সিজন ও রুম অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে।
ভিয়েতনামের দর্শনীয় স্থান কি কি?
প্রথমবার ভ্রমণে গিয়ে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় ঘুরে দেখা সেরা সিদ্ধান্ত। হ্যানয়-এর সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে— উইমেন’স মিউজিয়াম, টেম্পল অব লিটারেচার, ওয়েস্ট লেক, মিউজিয়াম অব এথনোলজি, হোয়ান কিয়েম লেক, লং বিএন ব্রিজ, ফাইন আর্টস মিউজিয়াম, লটে অবজারভেশন ডেক, হোয়া লো প্রিজন মিউজিয়াম ও ওয়ান পিলার প্যাগোডা। প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ এসব জায়গা ঘুরে দেখতে যায়।
১. উইমেন’স মিউজিয়াম
হ্যানয়ের এই জাদুঘরে নারীদের পরিবার, ফ্যাশন ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন যুদ্ধে নারীদের বীরত্বের অনেক ছবি ও পোস্টার রয়েছে। এখানে নৃগোষ্ঠীদের পোশাক, উপকরণ, কারুকার্যসহ সর্বমোট ৪০,০০০ জিনিস দেখতে পাবেন।
২. টেম্পল অব লিটারেচার
দশম শতাব্দীর এই মন্দির একসময় ভিয়েতনামের সেরা পন্ডিতদের আবাসস্থান ছিল। রাজ বংশধররা-ই এখানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেত। মন্দিরে সুন্দর সুন্দর বেদি ও ডোজো আছে। এখনও প্যাভিলিয়ানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও হলগুলোতে বিভিন্ন পরীক্ষা হয়।
৩. ওয়েস্ট লেক
হো তাই নামের এই ওয়েস্ট লেক ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় লেক। ১৭ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত লেকটির আশেপাশে অনেক বাগান, হোটেল ও ভিলা আছে। লেকের পাশের রেস্তোরায় মানুষ খাবার খেতে খুব পছন্দ করে।
৪. মিউজিয়াম অব এথনোলজি
এই জাদুঘরে নৃ-গোষ্ঠীদের শিল্প, জীবন ও জীবিকার প্রতিফলন দেখা যায়। এখানে ৫৪টি নৃ-গোষ্ঠীর গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্য দেখতে পারবেন। মঙ্গলবার থেকে রবিবার এই জাদুঘর সবার জন্য খোলা থাকে।
৫. হোয়ান কিয়েম লেক
পঞ্চদশ শতাব্দীতে তৈরি করা লেকটি দেখতে খুব সুন্দর। সম্রাটের হাত থেকে কচ্ছপের তলোয়ার ছিনিয়ে নেওয়ার মত রূপকথার গল্প মিশে আছে এই লেকের ইতিহাসে। লেকের মাঝে কিছু মন্দিরের মত পুরনো স্থাপনা আছে।
৬. লং বিএন ব্রিজ
রেড রিভারের উপর ভিয়েতনামের দুটো শহরকে এক করেছে এই ব্রিজ। আমেরিকানরা যুদ্ধের সময় অনেকবার এই ব্রিজের উপর বোমা হামলা করে। রাতের বেলা ব্রিজের উপর অসাধারণ আবহ বিরাজ করে।
৭. ফাইন আর্টস মিউজিয়াম
এটি দেশের প্রধান শিল্প জাদুঘর। এখানে বিংশ শতাব্দীর শিল্প ও সাহিত্যের নিদর্শন বেশি দেখা যায়। জাদুঘর বানানোর আগে এটি ক্যাথলিক মেয়েদের বোর্ডিং হাউজ ছিল।
৮. লটে অবজারভেশন ডেক
হ্যানয়ের ৬৫ তলা উঁচু একটি টাওয়ার লটে অবজারভেশন ডেক। এখান থেকে সারা শহরের সবকিছু দেখা যায়। টাওয়ারের মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, শপিং মল, রেস্তোরা, বার, নাইটক্লাবসহ অনেক কিছু আছে।
৯. হোয়া লো প্রিজন মিউজিয়াম
ফরাসি সৈনিকেরা বিপ্লবীদের ধরে নিয়ে এই জেলখানায় আটকে রেখে অত্যচার করতো বলা হয়। ১৯৯০ সালে এর অনেক অংশ ভেঙে যায়, কিন্তু গেট-সহ অবশিষ্টাংশ দেখতে অনেক মানুষ এখানে ভিড় করে।
১০. ওয়ান পিলার প্যাগোডা
বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান এই ওয়ান পিলার প্যাগোডা। এক পিলারের উপর নির্মিত প্যাগোডাটি একবার ফরাসিরা ধ্বংস করে ফেলে। পরে কাঠের মাধ্যমে এটাকে আবার মেরামত করা হয়।
কিভাবে ভিয়েতনামের ভিসা আবেদন করবেন?
যেসব উপায়ে ভিয়েতনামের ভিসা আবেদন করতে পারবেন—
-
নিজে অনলাইনে ভিসা আবেদন করতে পারেন
-
শেয়ারট্রিপ ওয়েবসাইটের ভিসা পেইজ থেকে ই-ভিসা অনুরোধ করতে পারেন
-
সরাসরি ভিয়েতনাম এমব্যাসিতে গিয়ে আবেদন করতে পারেন
-
অন এরাইভাল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন
ভিসা আবেদন করার সময় যেসব জিনিস লাগতে পারে—
-
৪*৬ সেন্টিমিটার সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের পাসপোর্ট ছবি
-
৭ মাসের বৈধতা আছে এমন পাসপোর্ট
-
বিমানের টিকেটের ফটোকপি নিশ্চিত করা
-
ইমিগ্রেশনের অনুমতিসহ হোটেল বুকিং নিশ্চিত করা
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার ভিয়েতনাম ভ্রমণকে করুন আরো সুন্দর
একসময় যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভিয়েতনামকে ফরাসী-সহ অনেকে শাসন করেছে। সবকিছু ছাপিয়ে তারা এখনও সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করছে। এই পোস্টে ঢাকা টু ভিয়েতনাম-এর বিমান ভাড়া ও হোটেলে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার পর খুব সহজেই আপনার পরিবার নিয়ে ছুটি কাটিয়ে আসতে পারবেন। ভিয়েতনামের ভ্রমণ প্যাকেজ এবং ফ্লাইট ও হোটেলে মূল্যছাড়-সহ যেকোনো ধরনের সহায়তা পেতে ভিজিট করুন https://sharetrip.ne-এ, মেইল করুন vacation@sharetrip.net-এ অথবা কল করুন +8809617617617-নম্বরে।