এই ভ্রমণ গাইডে জাপানের দর্শনীয় স্থান থেকে শুরু করে ঢাকা টু জাপান বিমান ভাড়া, ভিসা, ও ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে জানতে পারবেন।
ঐতিহ্য, প্রযুক্তি ও সুস্বাদু খাবারের জন্য সারা বিশ্বের পর্যটকেরা জাপান ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। জাপানের টোকিও এবং কিয়োটোতে বিভিন্নরকমের মন্দির, ইমপেরিয়াল প্যালেস, জাদুঘর, অ্যাকুরিয়াম, কৃত্রিম দ্বীপ, সমুদ্র সৈকত, আগ্নেয়গিরিসহ অনেক কিছু দেখতে পারবেন।
ঢাকা থেকে বিমানে ৬ ঘন্টায় ঘন্টায় জাপান পৌছানো যায়। কিন্তু তার আগে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে জাপানের ভিসা আবেদন করবেন, টিকেট কিনবেন, বিমান ভাড়া কেমন হবে এবং কোথায় কোথায় ঘুরবেন। আমাদের আজকের গাইডে এসকল ভ্রমণ পরিকল্পনার সাথে জাপান ভ্রমণের সেরা প্যাকেজ নিয়ে কথা বলবো।
ঢাকা টু জাপান বিমান ভাড়া কেমন?
ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অবতরণ করা যায়। বাংলাদেশে ১০টির বেশি এয়ারলাইন্স ফিরতি টিকেটসহ ফ্লাইটের সুবিধা দেয়। ঢাকা টু জাপান বিমান ভাড়া ৪৩,০০০ টাকা থেকে শুরু এবং ফ্লাইট ডিউরেশন হচ্ছে ৬ ঘন্টার মত।
ঢাকা থেকে টোকিও বিমানের টিকেট বুক করার উপায়ঃ
এয়ারলাইন্সের মান, ফ্লাইটের ডিমান্ড ও যাত্রার সময়ের উপর নির্ভর করে মূল্য ওঠানামা করে। তাই শেয়ারট্রিপ ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ মূল্য দেখে নিতে পারেন। এর জন্য ফ্লাইট পেজে গিয়ে টিকেটের ধরন নির্বাচন করুন, কোন এয়ারপোর্ট থেকে কোন এয়ারপোর্টে যাবেন সেটা লিখুন (যেমনঃ Dhaka ও Tokyo) এরপর কতজন যাবেন এবং সিটের মান কেমন হবে নির্বাচন করে টিকেট মূল্য সার্চ করে দেখে নিন।
ঢাকা থেকে টোকিওগামী জনপ্রিয় এয়ারলাইন্সসমূহঃ
- চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স
- মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
- সিংগাপুর এয়ারলাইন্স
- থাই এয়ারওয়েজ
- কাতার এয়ারওয়েজ
- এমিরেটস
- টার্কিশ এয়ারলাইন্স
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
- শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স
প্যাকেজ নিয়ে জাপান ভ্রমণ খরচ কেমন হবে?
শেয়ারট্রিপের জাপান ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে ৬ দিন ও ১১ দিনের ট্যুরে জাপান যেতে পারবেন। এভাবে কম খরচে সেরা মানের হোটেলে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত ও গাইডসহ অনেক ধরণের সুবিধা পাওয়া যায়। পরিবার নিয়ে ভ্রমণের জন্য এভাবে যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ হবে। চলুন প্যাকেজগুলির খরচ ও পরিকল্পনা কেমন হতে পারে জেনে নিইঃ
৬ দিনের জাপান ভ্রমণ প্যাকেজ
৬ দিনের জাপান ভ্রমণ প্যাকেজ-এ টোকিও, মাউন্ট ফুজি, কিয়োটাসহ উল্লেখযোগ্য সকল স্থান দেখে নিতে পারবেন। এতে সদস্যসংখ্যা ও সুবিধা অনুযায়ী ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা খরচ হবে। ভ্রমণের প্রথম দিনে টোকিও পৌছাবেন। পরেরদিন নাস্তা করে টোকিও টাওয়ার, ইমপেরিয়াল প্যালেস, হিনোদে টাওয়ার, সেন্সো-জি টেম্পলসহ আরো কিছু জায়গা দেখে টোকিও হোটেলে থাকবেন।
তৃতীয় দিনে মাউন্ট ফুজিতে ঘুরে, আমিস লেকে ক্রুজে উঠে এবং কোমাগাটার রোপওয়েতে চড়ে সময় কাটাতে পারবেন। চতুর্থ দিনে বিশ্রাম নিয়ে নিজের মত করে ঘুরতে কিয়োটো যাবেন। পঞ্চম দিনে নিজো ক্যাসল, কিনকাকু জি টেম্পল, ইমপেরিয়াল প্যালেস, নারা পার্কসহ আরো কিছু দারুণ জায়গাতে ঘুরে ষষ্ঠ দিনের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরে আসবেন।
১১ দিনের জাপান ভ্রমণ প্যাকেজ
১১ দিনের জাপান ভ্রমণ প্যাকেজ-এ অল্প খরচে জাপান ও কিয়োটোর বেশিরভাগ জায়গা ঘুরে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে অংশ নেওয়া যায়। এতে সদস্যসংখ্যা ও বিশেষ সুবিধা অনুযায়ী ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা থেকে খরচ শুরু হবে। ভ্রমণের প্রথম দিনে টোকিওতে পৌছাবেন। দ্বিতীয় দিনে টোকিও শহরের মধ্যে থাকা মেই জিংগু, ইমপেরিয়াল প্যালেস, সেন্সো জি টেম্পল, টোকিও স্কাই ট্রিসহ বেশ কিছু স্থান দেখে হোটেলে ফিরবেন। তৃতীয় দিনে মাউন্ট ফুজি, হাকোনে ও লেক আসি এর আশেপাশের সকল জায়গা দেখবেন।
চতুর্থ দিনে কিয়োটেতে বিশ্রাম নিয়ে নিজের মত কেনাকাটা করবেন। পঞ্চম দিনে কিয়োটো ও নারা এর উল্লেখযোগ্য সব জায়গা ঘুরে ষষ্ঠ দিনে আরাশিয়ামা ব্যাম্বু ফরেস্ট, ফুয়াশিমি ইনারি, কিনকাকুজি টেম্পল ইত্যাদি দেখে সপ্তম দিনে টোকিওতে ফিরবেন। পরেরদিন সবাই মিলে ডিজনীল্যান্ড ট্যুরে যাবেন। সেখানে বিভিন্নরকম বিনোদনে অংশ নিয়ে পরের দুইদিন টোকিও সিটি উপভোগ করে ১১তম দিনের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরে আসবেন।
জাপানের দর্শনীয় স্থান কি কি?
জাপানের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে টোকিওর স্কাই ট্রি, সেঞ্জো জি, ইমপেরিয়াল প্যালেস, ওডাইবা ও ইযু আইল্যান্ড বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা কিয়োটো শহরের নিজো ক্যাসল, সেন্টো প্যালেস, কিয়োটে ইমপেরিয়াল প্যালেস, আরাশিয়ামা ও কিয়োটো অ্যাকুরিয়াম দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য পায়। চলুন এসব দর্শনীয় স্থানের মূল আকর্ষণ কি জেনে নিইঃ
টোকিও স্কাই ট্রি
৬৪৫ মিটার উঁচু এই সম্প্রচার টাওয়ারটি দেখতে প্রতিবছর লাখো মানুষ ভিড় করে। এখানকার জানালা দিয়ে শহরের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়। টাওয়ারের মধ্যেই একটা অ্যাকুরিয়াম আর প্লানেট থিয়েটার আছে।
সেঞ্জো জি
আসাকুসাতে অবস্থিত বৌদ্ধ মন্দিরটি লাল রঙের লন্ঠনের আলোয় সাজানো থাকে। এটা সপ্তদশ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়। এখানে দারুণ সব ছবি তুলতে পারবেন এবং পাশেই নাগামিসে স্ট্রিট নামে ২৫০ মিটার প্রশস্ত একটা স্ট্রিট মার্কেট পাবেন।
টোকিও ইমপেরিয়াল প্যালেস
লেক ও বাগানে মোড়ানো টোকিও ইমপেরিয়াল প্যালেস একসময় সম্রাটের প্রধান বাসস্থল ছিল। এখানে ঘোরার জায়গা, জাদুঘর, সংরক্ষণাগার ও বিভিন্নরকম ব্রিজ রয়েছে। পাসপোর্ট সাথে রাখলে অনুমতি নিয়ে সম্পূর্ণ প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখতে পারবেন।
ওডাইবা
টোকিও বে-এর কৃত্রিম সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত এই বিনোদন কেন্দ্রটি সবার কাছে জনপ্রিয়। সৈকতের পাশের পার্ক থেকে মাউন্ট ফুজি পর্বতসহ শহরের ল্যান্ডস্কেপ উপভোগ করতে পারবেন। এখানকার মিরাইকান মিউজিয়ামে রোবটের প্রদর্শনী দেখা যায়।
ইযু আইল্যান্ড
আগ্নেয়গিরি দেখতে হলে ইযু আইল্যান্ড আপনার জন্য উপযুক্ত জায়গা। এখানে স্কুবাডাইভিং করে আগ্নেয়গিরির পাহাড়, পাথর ও ছাই দেখা যায়। পাশাপাশি এখানে জাপানের ঐতিহ্যবাহী ২টি শহরে ও ৬টি গ্রামে ঘুরতে পারবেন।
নিজো ক্যাসল
১৬০০ সালের দিকে নির্মিত দূর্গটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে পরিচিত। এখানে মিলিটারিদের থাকার জন্য বেশ কিছু বিল্ডিং ছিল। সব বিল্ডিং বিশেষভাবে একটার সাথে আরেকটা সংযুক্ত। এছাড়া প্যালেসের বাইরে মার্বেল পাথরে বাধানো পুকুর, বাগান ও চেরি গাছের সারি রয়েছে।
কিয়োটে (সেন্টো) ইমপেরিয়াল প্যালেস
কিয়োটো ইমপেরিয়াল পার্কে অবস্থিত সেন্টো ইমপেরিয়াল প্যালেস। বর্ণিল ফুলের গাছ এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্যালেসের পাশেই ছোট ছোট পাথরে বাঁধানো লেক রয়েছে। পাথর ও কাঠের ব্রিজে পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারবেন।
আরাশিয়ামা
পশ্চিম কিয়োটোর জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান আরাশিয়ামা। এখানে গিয়ে চেরি ফুল, লম্বা বাঁশের বাগান, ছোট দোকান, রেস্টুরেন্ট, মন্দিরসহ একসাথে অনেক কিছু দেখে আসা যায়। চাইলে সাইকেল ভাড়া নিয়ে নিজের মত করে ঘুরে দেখতে পারবেন।
কিয়োটো অ্যাকুরিয়াম
পরিবার ও বাচ্চাদের সাথে নিয়ে ঘোরার জন্য কিয়োটো অ্যাকুরিয়াম বেশ ভালো স্থান। দুই তলাবিশিষ্ট পুরো অ্যাকুরিয়ামের ফ্লোর ও দেয়াল কাঁচের তৈরি। এখানে সালামান্ডার, পেঙ্গুইন, কোরাল, জেলীফিশ, অক্টোপাস, সীলসহ অনেকরকম বড় মাছ দেখা যায়।
জাপানে ভিসা আবেদন করতে কি কি প্রয়োজন?
যে কেউ সাধারণ কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে জাপান ভিসা আবেদন করতে পারবে। শুধুমাত্র চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, উকিল ও ডাক্তারদের কিছু বিশেষ ডকুমেন্টস দেখানো লাগবে। জাপান ভিসা পেতে হলে চলুন একনজরে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের তালিকা দেখে নিইঃ
চাকুরিজীবিদের যা যা লাগবেঃ
- দুই কপি সম্প্রতি তোলা ছবি (২*১.৪ ইঞ্চি)
- ৭ মাসের বৈধতাসহ নতুন ও পুরনো পাসপোর্ট
- অফিসের ভিজিটিং কার্ড
- অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম
- জাপান ভ্রমণের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা
- অগ্রিম ফিরতি টিকেট
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- নিজের পরিচিতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে কভার লেটার
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সার্টিফিকেট
- এয়ারলাইন্স ও হোটেল বুকিং স্লিপ
- জাপানের স্থায়ী কারো ইনভাইটেশনাল লেটার (যদি থাকে)
ব্যবসায়ীদের যা যা লাগবেঃ
- দুই কপি সম্প্রতি তোলা ছবি (২*১.৪ ইঞ্চি)
- ৭ মাসের বৈধতাসহ নতুন ও পুরনো পাসপোর্ট
- বিজনেস ভিজিটিং কার্ড
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম
- জাপান ভ্রমণের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা
- অগ্রিম ফিরতি টিকেট
- নিজের পরিচিতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে কভার লেটার
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সার্টিফিকেট
- এয়ারলাইন্স ও হোটেল বুকিং স্লিপ
- জাপানের স্থায়ী কারো ইনভাইটেশনাল লেটার (যদি থাকে)
উকিলদের যা যা লাগবেঃ
- দুই কপি সম্প্রতি তোলা ছবি (২*১.৪ ইঞ্চি)
- ৭ মাসের বৈধতাসহ নতুন ও পুরনো পাসপোর্ট
- পেশাগত ভিজিটিং কার্ড
- অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- বার কাউন্সিলের সার্টিফিকেট (ফটোকপি)
- ট্যাক্স সনাক্তকরণ নাম্বার সার্টিফিকেট
- জাপান ভ্রমণের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা
- অগ্রিম ফিরতি টিকেট
- নিজের পরিচিতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে কভার লেটার
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সার্টিফিকেট
- এয়ারলাইন্স ও হোটেল বুকিং স্লিপ
- জাপানের স্থায়ী কারো ইনভাইটেশনাল লেটার (যদি থাকে)
ডাক্তারদের যা যা লাগবেঃ
- দুই কপি সম্প্রতি তোলা ছবি (২*১.৪ ইঞ্চি)
- ৭ মাসের বৈধতাসহ নতুন ও পুরনো পাসপোর্ট
- পেশাগত ভিজিটিং কার্ড
- অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- বার কাউন্সিলের সার্টিফিকেট (ফটোকপি)
- ট্যাক্স ইন্ডিকিশের নাম্বার সার্টিফিকেট
- জাপান ভ্রমণের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা
- অগ্রিম ফিরতি টিকেট
- নিজের পরিচিতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে কভার লেটার
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সার্টিফিকেট
- ব্যাংকে ৭০,০০০ টাকা মিনিমাম ব্যালেন্স থাকা
- এয়ারলাইন্স ও হোটেল বুকিং স্লিপ
শেয়ারট্রিপের সাথে আপনার জাপান ভ্রমণ হবে আরও সহজ!
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে আপনারা জাপান ভ্রমণের সকল খুঁটিনাটি জেনেছেন। এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে জাপানের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে অক্টোবর থেকে নভেম্বর ও মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সুন্দর শুষ্ক আবহাওয়াতে বেড়িয়ে আসতে পারবেন। আমাদের জাপান ভ্রমণ প্যাকেজের সুবিধাগুলি বন্ধুদের জানাতে ভূলবেন না। এছাড়া যেকোনো তথ্য ও সহায়তা পেতে ইমেইল করুন vacation@sharetrip.net-এ অথবা কল করুন +8809617617617 নম্বরে।